Ajker Patrika

কপাল ভালো, বোমাটি ফাটেনি

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ০৬
কপাল ভালো, বোমাটি ফাটেনি

আমাদের আর তর সইছে না। সবাই অধীর অপেক্ষায়—কখন ফাটবে সেই বোমা। ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষার পর নির্দেশ এল। দুই হাতে দুই কান ঢেকে নিচু হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। এরপর ‘ইয়েস রেডি, ইয়েস’ কমান্ড দিতে না দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি। তাকিয়ে দেখলাম, স্প্লিন্টারগুলো শিলাবৃষ্টির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের গগনবিদারী শব্দে কেঁপে উঠল পুরো ফায়ার রেঞ্জ। সেই কম্পন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের কয়েকটি আবাসিক ভবনেও অনুভূত হলো।

এবার বলি, সেই বোমা এল কোত্থেকে। আজ ৮ অক্টোবর শনিবার হলেও ২৩ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর ছিল শুক্রবার। সকালের দিকে বেশ আরামেই ছিলাম। দুপুরের পর প্রধান প্রতিবেদক ফোন দিয়ে বললেন, খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকার আহমদিয়া মসজিদে জুমার নামাজে বোমা ফেটেছে। তাতে ৬-৭ জন নিহত, জনা তিরিশেক আহত হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের কোনো প্রস্তুতি আছে কি না, খোঁজ নাও। আরাম উবে গেল।

এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী তখন আইজিপি। ফোন দিলাম আইজিপির বাসার টিঅ্যান্ডটি নম্বরে। তিনি নিজেই ফোন ধরে বললেন, ‘আরে মিয়া, মিরপুর ২ নম্বরের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদেও বোমা পাওয়া গেছে, আগে তার খোঁজ নাও।’ আইজিপির কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাওয়া ঠিক হবে না। ফোন দিলাম মিরপুর থানায়। ডিউটি অফিসার বললেন, শিরনির প্যাকেটে করে কে বা কারা একটি বোমা মসজিদে রেখে গেছে। কপাল ভালো, বোমাটি ফাটেনি। ফোন রেখে ছুটলাম মিরপুরে। ততক্ষণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল এসে গেছে। মসজিদের গেটে পেয়ে গেলাম কমিটির সভাপতি আবুল কাশেমকে। তাঁর কাছ থেকে সব খোঁজখবর করে অফিসে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।

ইস্কাটনে জনকণ্ঠ অফিসে এসে দেখি হুলুস্থুল কাণ্ড। সহকর্মীরা সব নিচে; রাস্তায় দাঁড়িয়ে-বসে। সবার চোখে-মুখে উদ্বেগ। টেলিফোন অপারেটর লিজার স্বামী প্রশাসন বিভাগের কামাল হোসেন দৌড়াদৌড়ি করছেন। এক সহকর্মী বললেন, অফিসে একটি ব্রিফকেস বোমা পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টার দিকে এক লোক ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে জনকণ্ঠ ভবনের নিচতলার অভ্যর্থনার সামনে রাখা সোফায় কিছুক্ষণ বসে ছিলেন। এরপর ‘একটু খেয়ে আসছি’ বলে ব্রিফকেসটি দেখার জন্য অভ্যর্থনার ছেলেটিকে অনুরোধ করে বেরিয়ে যান। ৫-৬ ঘণ্টা পরও সেই লোক ফিরে আসেননি। এতে সবার সন্দেহ হয়। কেউ একজন ব্রিফকেসটি হাতে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারেন, অনেক ওজন। এতে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। সম্পাদকের নির্দেশে ক্রাইম রিপোর্টার শংকর কুমার দে রমনা থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানান। থানা থেকে বলা হয় সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকতে। সম্পাদক, উপদেষ্টা সম্পাদকসহ জনকণ্ঠের সব কর্মী ভবন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন।

আমি আসার মিনিট দশেক পর দলবল নিয়ে হাজির হন পুলিশ কমিশনার এ কে এম শামসুদ্দিন। পুলিশে তখন বোমা বিস্ফোরক ইউনিট ছিল না। কমিশনার একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে নিয়ে আইজিপিকে ফোন দিলেন। আমাদের বলা হলো, সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল আসছে। আমরা নিচে অপেক্ষা করছি। ঘণ্টা দেড়েক পর মেজর আহসান উল্লাহ ও মেজর জসিমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দলের সদস্যরা এলেন। তাঁরা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে বোমাটি দেখলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, এটা শক্তিশালী স্থলমাইন। ম্যানুয়াল হলে ১২ ঘণ্টা পরে, আর ডিজিটাল হলে যেকোনো সময় ফাটতে পারে।

এবার তাহলে কী হবে! পত্রিকা বের হবে কী করে! শুরু হলো আলোচনা। কমিশনারসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন, বোমাটি অফিসের সামনের রাস্তায় এনে রাখা হবে।

জনকণ্ঠ ভবনের সামনে রাস্তায় বালুর বস্তা এনে বাংকার বানানো হলো। তার মধ্যে রাখা হলো বোমাটি। আপাতত আমরা বাঁচলাম। সবাই অফিসে উঠে গেলাম।

ততক্ষণে ঢাকার সব মিডিয়ায় বোমার খবর চাউর হয়ে গেছে। ইস্কাটনের রাস্তায় বোমা রাখার কারণে বাংলামোটর থেকে মগবাজার সড়ক বন্ধ। বোমা দেখার জন্য দুপাশে হাজারো উৎসুক মানুষ ভিড়। জনকণ্ঠ অফিস লোকে লোকারণ্য। রাজনৈতিক নেতারাও এলেন। অফিসে পা ফেলার জায়গা নেই। শহরে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। ফোনের পরে ফোন আসছে পিএবিএক্সে। সারা রাত রাস্তায় বোমা রেখে আমরা সবাই অফিসে বসে থাকলাম।

পরদিন শনিবারের সকাল। বাসায় গিয়ে একটু নাশতা করে আবার অফিসে এলাম। সেনাবাহিনী থেকে বোমা বহনের জন্য বিশেষ ধরনের গাড়ি আনা হচ্ছে। সেই গাড়ির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। দুপুরের দিকে গাড়ি এল আগেপিছে সাইরেন বাজিয়ে। গাড়িটিতে বোমা তুলে নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ফায়ারিং রেঞ্জে। বায়না ধরলাম, বিস্ফোরণ দেখতে যাব। সেনা কর্মকর্তারা রাজি হলেন। অফিস থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বহরের সঙ্গে চললাম।

বোমা বহনকারী গাড়িবহর যখন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাল, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। গাড়িবহরের সাইরেনের কারণে এমপি চেকপোস্টগুলো সচল হয়ে গেছে। আগেপিছে সেনাবাহিনীর চারটি গাড়ি, সঙ্গে রমনা থানার পুলিশের গাড়ি। আমরাও যাচ্ছি ফায়ার রেঞ্জ এলাকায়।

মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পেছনে পুরো ফাঁকা জলাশয়। ডিওএইচএস তখনো হয়নি। ক্যান্টনমেন্টের একেবারে শেষ মাথায় ফায়ারিং রেঞ্জ। রেঞ্জের নিরাপত্তার জন্য কংক্রিটের উঁচু দেয়াল। তার পাশে একটি টিনের ছাউনি। দূরে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার দেখা যাচ্ছে। বিলের ধার ঘেঁষে পাকা রাস্তা। বোমা নিয়ে গাড়িবহর সেখানে এসে থামল। খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি থেকে নামানো হলো ভয়ংকর বোমাটি। এরপর নিয়ে যাওয়া হলো বিস্ফোরণ এলাকায়।

চকোলেট রঙের ব্রিফকেসটি মাটিতে রাখার পর সেনা কর্মকর্তারা উপুড় হয়ে শেষবারের মতো ভেতরের বস্তুটি দেখে নিলেন। আর কোনো সংশয় নেই। একটু পর এলেন ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার আবু হাশিম খান। তিনি আসার পর ১১ সদস্যের বিস্ফোরক দল ব্রিফকেসটি তুলে নিয়ে গেল জলাধারের কাছে। জল-জংলার পাশে লাউখেত। রাস্তায় কাদা। সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্টের ওসি ফরিদ আহমেদ, মিরপুর ও রমনা থানার পুলিশ, সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার ১০-১২ জন সদস্য নেমে গেলেন সেই পথে।

আমরা অপেক্ষা করছি কখন বোমাটি ফাটবে। একটু পর বলা হলো, মিরপুরে মসজিদ থেকে উদ্ধার করা বোমাটিও একই সঙ্গে ফাটানো হবে। গাড়িবহর আবার ছুটল নতুন বোমার খোঁজে। এক ঘণ্টা পর সেই বোমা এল। সিদ্ধান্ত হলো, আগে মিরপুরের বোমাটি ফাটানো হবে। এ সময় কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হলো। লোক পাঠিয়ে ফায়ার রেঞ্জের পাশের সব ভবনের জানালা খোলার নির্দেশ দেওয়া হলো; যাতে শব্দে জানালার কাচ না ভাঙে।

মিরপুরের বোমাটি খোলা হলো সবার সামনে। ১০ ইঞ্চি লম্বা লালচে বোমাটির মুখে ঘড়ি ও দুটি অলিম্পিক পেনসিল ব্যাটারির সংযোগ। লম্বাটে বোমার গায়ে আতাফলের মতো খাঁচকাটা। সতর্কতার সঙ্গে বোমাটি রাখা হলো বিলের পানির কাছে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে। তার সঙ্গে সংযুক্ত হলো দুটি ডেটোনেটর। তারের শেষ মাথায় ব্লাস্টিং মেশিন। তাতে বিদ্যুতের প্রবাহ দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি।

এরপর শুরু হলো জনকণ্ঠে রাখা ব্রিফকেসের বোমা ফাটানোর কাজ। দূর থেকে প্রথমে বিশেষ কায়দায় খোলা হলো ব্রিফকেসের ওপরের ডালাটি। দেখা গেল, ভেতরে কাঠের ওপর বোমাটি বসানো; যাতে নড়াচড়া না হয়। বোমাটি যুক্ত রয়েছে ব্রিফকেসের নম্বর লকের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো শেষ বোমাটি। বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো ঝিলের পানিতে। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, অফিসে ফিরে এলাম।

অফিসে এসে শুনি, আইএসপিআর হ্যান্ডআউট দিয়ে বলেছে, বোমাটি বিস্ফোরিত হলে ১০০ মিটার এলাকার সবকিছু উড়ে যেত। স্বরাষ্ট্রসচিব সফিউর রহমান একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। জনকণ্ঠের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ আবু সাঈদ বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করলেন। এরপর এ ঘটনার অনেক ফলোআপ হয়েছিল। আবার অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে রটানো হলো, কাটতি বাড়াতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। কী কারণে যেন পুলিশি তদন্তও থেমে গেল। তারপর এত বছরে অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে, বিচারও হয়েছে। শুধু এ ঘটনার কোনো বিচার হলো না। বিষয়টা এখনো খুব অদ্ভুত মনে হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত