কামরুল হাসান
আমাদের আর তর সইছে না। সবাই অধীর অপেক্ষায়—কখন ফাটবে সেই বোমা। ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষার পর নির্দেশ এল। দুই হাতে দুই কান ঢেকে নিচু হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। এরপর ‘ইয়েস রেডি, ইয়েস’ কমান্ড দিতে না দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি। তাকিয়ে দেখলাম, স্প্লিন্টারগুলো শিলাবৃষ্টির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের গগনবিদারী শব্দে কেঁপে উঠল পুরো ফায়ার রেঞ্জ। সেই কম্পন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের কয়েকটি আবাসিক ভবনেও অনুভূত হলো।
এবার বলি, সেই বোমা এল কোত্থেকে। আজ ৮ অক্টোবর শনিবার হলেও ২৩ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর ছিল শুক্রবার। সকালের দিকে বেশ আরামেই ছিলাম। দুপুরের পর প্রধান প্রতিবেদক ফোন দিয়ে বললেন, খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকার আহমদিয়া মসজিদে জুমার নামাজে বোমা ফেটেছে। তাতে ৬-৭ জন নিহত, জনা তিরিশেক আহত হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের কোনো প্রস্তুতি আছে কি না, খোঁজ নাও। আরাম উবে গেল।
এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী তখন আইজিপি। ফোন দিলাম আইজিপির বাসার টিঅ্যান্ডটি নম্বরে। তিনি নিজেই ফোন ধরে বললেন, ‘আরে মিয়া, মিরপুর ২ নম্বরের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদেও বোমা পাওয়া গেছে, আগে তার খোঁজ নাও।’ আইজিপির কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাওয়া ঠিক হবে না। ফোন দিলাম মিরপুর থানায়। ডিউটি অফিসার বললেন, শিরনির প্যাকেটে করে কে বা কারা একটি বোমা মসজিদে রেখে গেছে। কপাল ভালো, বোমাটি ফাটেনি। ফোন রেখে ছুটলাম মিরপুরে। ততক্ষণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল এসে গেছে। মসজিদের গেটে পেয়ে গেলাম কমিটির সভাপতি আবুল কাশেমকে। তাঁর কাছ থেকে সব খোঁজখবর করে অফিসে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
ইস্কাটনে জনকণ্ঠ অফিসে এসে দেখি হুলুস্থুল কাণ্ড। সহকর্মীরা সব নিচে; রাস্তায় দাঁড়িয়ে-বসে। সবার চোখে-মুখে উদ্বেগ। টেলিফোন অপারেটর লিজার স্বামী প্রশাসন বিভাগের কামাল হোসেন দৌড়াদৌড়ি করছেন। এক সহকর্মী বললেন, অফিসে একটি ব্রিফকেস বোমা পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টার দিকে এক লোক ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে জনকণ্ঠ ভবনের নিচতলার অভ্যর্থনার সামনে রাখা সোফায় কিছুক্ষণ বসে ছিলেন। এরপর ‘একটু খেয়ে আসছি’ বলে ব্রিফকেসটি দেখার জন্য অভ্যর্থনার ছেলেটিকে অনুরোধ করে বেরিয়ে যান। ৫-৬ ঘণ্টা পরও সেই লোক ফিরে আসেননি। এতে সবার সন্দেহ হয়। কেউ একজন ব্রিফকেসটি হাতে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারেন, অনেক ওজন। এতে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। সম্পাদকের নির্দেশে ক্রাইম রিপোর্টার শংকর কুমার দে রমনা থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানান। থানা থেকে বলা হয় সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকতে। সম্পাদক, উপদেষ্টা সম্পাদকসহ জনকণ্ঠের সব কর্মী ভবন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন।
আমি আসার মিনিট দশেক পর দলবল নিয়ে হাজির হন পুলিশ কমিশনার এ কে এম শামসুদ্দিন। পুলিশে তখন বোমা বিস্ফোরক ইউনিট ছিল না। কমিশনার একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে নিয়ে আইজিপিকে ফোন দিলেন। আমাদের বলা হলো, সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল আসছে। আমরা নিচে অপেক্ষা করছি। ঘণ্টা দেড়েক পর মেজর আহসান উল্লাহ ও মেজর জসিমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দলের সদস্যরা এলেন। তাঁরা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে বোমাটি দেখলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, এটা শক্তিশালী স্থলমাইন। ম্যানুয়াল হলে ১২ ঘণ্টা পরে, আর ডিজিটাল হলে যেকোনো সময় ফাটতে পারে।
এবার তাহলে কী হবে! পত্রিকা বের হবে কী করে! শুরু হলো আলোচনা। কমিশনারসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন, বোমাটি অফিসের সামনের রাস্তায় এনে রাখা হবে।
জনকণ্ঠ ভবনের সামনে রাস্তায় বালুর বস্তা এনে বাংকার বানানো হলো। তার মধ্যে রাখা হলো বোমাটি। আপাতত আমরা বাঁচলাম। সবাই অফিসে উঠে গেলাম।
ততক্ষণে ঢাকার সব মিডিয়ায় বোমার খবর চাউর হয়ে গেছে। ইস্কাটনের রাস্তায় বোমা রাখার কারণে বাংলামোটর থেকে মগবাজার সড়ক বন্ধ। বোমা দেখার জন্য দুপাশে হাজারো উৎসুক মানুষ ভিড়। জনকণ্ঠ অফিস লোকে লোকারণ্য। রাজনৈতিক নেতারাও এলেন। অফিসে পা ফেলার জায়গা নেই। শহরে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। ফোনের পরে ফোন আসছে পিএবিএক্সে। সারা রাত রাস্তায় বোমা রেখে আমরা সবাই অফিসে বসে থাকলাম।
পরদিন শনিবারের সকাল। বাসায় গিয়ে একটু নাশতা করে আবার অফিসে এলাম। সেনাবাহিনী থেকে বোমা বহনের জন্য বিশেষ ধরনের গাড়ি আনা হচ্ছে। সেই গাড়ির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। দুপুরের দিকে গাড়ি এল আগেপিছে সাইরেন বাজিয়ে। গাড়িটিতে বোমা তুলে নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ফায়ারিং রেঞ্জে। বায়না ধরলাম, বিস্ফোরণ দেখতে যাব। সেনা কর্মকর্তারা রাজি হলেন। অফিস থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বহরের সঙ্গে চললাম।
বোমা বহনকারী গাড়িবহর যখন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাল, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। গাড়িবহরের সাইরেনের কারণে এমপি চেকপোস্টগুলো সচল হয়ে গেছে। আগেপিছে সেনাবাহিনীর চারটি গাড়ি, সঙ্গে রমনা থানার পুলিশের গাড়ি। আমরাও যাচ্ছি ফায়ার রেঞ্জ এলাকায়।
মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পেছনে পুরো ফাঁকা জলাশয়। ডিওএইচএস তখনো হয়নি। ক্যান্টনমেন্টের একেবারে শেষ মাথায় ফায়ারিং রেঞ্জ। রেঞ্জের নিরাপত্তার জন্য কংক্রিটের উঁচু দেয়াল। তার পাশে একটি টিনের ছাউনি। দূরে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার দেখা যাচ্ছে। বিলের ধার ঘেঁষে পাকা রাস্তা। বোমা নিয়ে গাড়িবহর সেখানে এসে থামল। খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি থেকে নামানো হলো ভয়ংকর বোমাটি। এরপর নিয়ে যাওয়া হলো বিস্ফোরণ এলাকায়।
চকোলেট রঙের ব্রিফকেসটি মাটিতে রাখার পর সেনা কর্মকর্তারা উপুড় হয়ে শেষবারের মতো ভেতরের বস্তুটি দেখে নিলেন। আর কোনো সংশয় নেই। একটু পর এলেন ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার আবু হাশিম খান। তিনি আসার পর ১১ সদস্যের বিস্ফোরক দল ব্রিফকেসটি তুলে নিয়ে গেল জলাধারের কাছে। জল-জংলার পাশে লাউখেত। রাস্তায় কাদা। সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্টের ওসি ফরিদ আহমেদ, মিরপুর ও রমনা থানার পুলিশ, সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার ১০-১২ জন সদস্য নেমে গেলেন সেই পথে।
আমরা অপেক্ষা করছি কখন বোমাটি ফাটবে। একটু পর বলা হলো, মিরপুরে মসজিদ থেকে উদ্ধার করা বোমাটিও একই সঙ্গে ফাটানো হবে। গাড়িবহর আবার ছুটল নতুন বোমার খোঁজে। এক ঘণ্টা পর সেই বোমা এল। সিদ্ধান্ত হলো, আগে মিরপুরের বোমাটি ফাটানো হবে। এ সময় কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হলো। লোক পাঠিয়ে ফায়ার রেঞ্জের পাশের সব ভবনের জানালা খোলার নির্দেশ দেওয়া হলো; যাতে শব্দে জানালার কাচ না ভাঙে।
মিরপুরের বোমাটি খোলা হলো সবার সামনে। ১০ ইঞ্চি লম্বা লালচে বোমাটির মুখে ঘড়ি ও দুটি অলিম্পিক পেনসিল ব্যাটারির সংযোগ। লম্বাটে বোমার গায়ে আতাফলের মতো খাঁচকাটা। সতর্কতার সঙ্গে বোমাটি রাখা হলো বিলের পানির কাছে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে। তার সঙ্গে সংযুক্ত হলো দুটি ডেটোনেটর। তারের শেষ মাথায় ব্লাস্টিং মেশিন। তাতে বিদ্যুতের প্রবাহ দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি।
এরপর শুরু হলো জনকণ্ঠে রাখা ব্রিফকেসের বোমা ফাটানোর কাজ। দূর থেকে প্রথমে বিশেষ কায়দায় খোলা হলো ব্রিফকেসের ওপরের ডালাটি। দেখা গেল, ভেতরে কাঠের ওপর বোমাটি বসানো; যাতে নড়াচড়া না হয়। বোমাটি যুক্ত রয়েছে ব্রিফকেসের নম্বর লকের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো শেষ বোমাটি। বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো ঝিলের পানিতে। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, অফিসে ফিরে এলাম।
অফিসে এসে শুনি, আইএসপিআর হ্যান্ডআউট দিয়ে বলেছে, বোমাটি বিস্ফোরিত হলে ১০০ মিটার এলাকার সবকিছু উড়ে যেত। স্বরাষ্ট্রসচিব সফিউর রহমান একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। জনকণ্ঠের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ আবু সাঈদ বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করলেন। এরপর এ ঘটনার অনেক ফলোআপ হয়েছিল। আবার অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে রটানো হলো, কাটতি বাড়াতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। কী কারণে যেন পুলিশি তদন্তও থেমে গেল। তারপর এত বছরে অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে, বিচারও হয়েছে। শুধু এ ঘটনার কোনো বিচার হলো না। বিষয়টা এখনো খুব অদ্ভুত মনে হয়।
আমাদের আর তর সইছে না। সবাই অধীর অপেক্ষায়—কখন ফাটবে সেই বোমা। ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষার পর নির্দেশ এল। দুই হাতে দুই কান ঢেকে নিচু হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। এরপর ‘ইয়েস রেডি, ইয়েস’ কমান্ড দিতে না দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি। তাকিয়ে দেখলাম, স্প্লিন্টারগুলো শিলাবৃষ্টির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের গগনবিদারী শব্দে কেঁপে উঠল পুরো ফায়ার রেঞ্জ। সেই কম্পন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের কয়েকটি আবাসিক ভবনেও অনুভূত হলো।
এবার বলি, সেই বোমা এল কোত্থেকে। আজ ৮ অক্টোবর শনিবার হলেও ২৩ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর ছিল শুক্রবার। সকালের দিকে বেশ আরামেই ছিলাম। দুপুরের পর প্রধান প্রতিবেদক ফোন দিয়ে বললেন, খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকার আহমদিয়া মসজিদে জুমার নামাজে বোমা ফেটেছে। তাতে ৬-৭ জন নিহত, জনা তিরিশেক আহত হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের কোনো প্রস্তুতি আছে কি না, খোঁজ নাও। আরাম উবে গেল।
এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী তখন আইজিপি। ফোন দিলাম আইজিপির বাসার টিঅ্যান্ডটি নম্বরে। তিনি নিজেই ফোন ধরে বললেন, ‘আরে মিয়া, মিরপুর ২ নম্বরের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদেও বোমা পাওয়া গেছে, আগে তার খোঁজ নাও।’ আইজিপির কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাওয়া ঠিক হবে না। ফোন দিলাম মিরপুর থানায়। ডিউটি অফিসার বললেন, শিরনির প্যাকেটে করে কে বা কারা একটি বোমা মসজিদে রেখে গেছে। কপাল ভালো, বোমাটি ফাটেনি। ফোন রেখে ছুটলাম মিরপুরে। ততক্ষণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল এসে গেছে। মসজিদের গেটে পেয়ে গেলাম কমিটির সভাপতি আবুল কাশেমকে। তাঁর কাছ থেকে সব খোঁজখবর করে অফিসে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
ইস্কাটনে জনকণ্ঠ অফিসে এসে দেখি হুলুস্থুল কাণ্ড। সহকর্মীরা সব নিচে; রাস্তায় দাঁড়িয়ে-বসে। সবার চোখে-মুখে উদ্বেগ। টেলিফোন অপারেটর লিজার স্বামী প্রশাসন বিভাগের কামাল হোসেন দৌড়াদৌড়ি করছেন। এক সহকর্মী বললেন, অফিসে একটি ব্রিফকেস বোমা পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টার দিকে এক লোক ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে জনকণ্ঠ ভবনের নিচতলার অভ্যর্থনার সামনে রাখা সোফায় কিছুক্ষণ বসে ছিলেন। এরপর ‘একটু খেয়ে আসছি’ বলে ব্রিফকেসটি দেখার জন্য অভ্যর্থনার ছেলেটিকে অনুরোধ করে বেরিয়ে যান। ৫-৬ ঘণ্টা পরও সেই লোক ফিরে আসেননি। এতে সবার সন্দেহ হয়। কেউ একজন ব্রিফকেসটি হাতে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারেন, অনেক ওজন। এতে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। সম্পাদকের নির্দেশে ক্রাইম রিপোর্টার শংকর কুমার দে রমনা থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানান। থানা থেকে বলা হয় সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকতে। সম্পাদক, উপদেষ্টা সম্পাদকসহ জনকণ্ঠের সব কর্মী ভবন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন।
আমি আসার মিনিট দশেক পর দলবল নিয়ে হাজির হন পুলিশ কমিশনার এ কে এম শামসুদ্দিন। পুলিশে তখন বোমা বিস্ফোরক ইউনিট ছিল না। কমিশনার একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে নিয়ে আইজিপিকে ফোন দিলেন। আমাদের বলা হলো, সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল আসছে। আমরা নিচে অপেক্ষা করছি। ঘণ্টা দেড়েক পর মেজর আহসান উল্লাহ ও মেজর জসিমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দলের সদস্যরা এলেন। তাঁরা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে বোমাটি দেখলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, এটা শক্তিশালী স্থলমাইন। ম্যানুয়াল হলে ১২ ঘণ্টা পরে, আর ডিজিটাল হলে যেকোনো সময় ফাটতে পারে।
এবার তাহলে কী হবে! পত্রিকা বের হবে কী করে! শুরু হলো আলোচনা। কমিশনারসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন, বোমাটি অফিসের সামনের রাস্তায় এনে রাখা হবে।
জনকণ্ঠ ভবনের সামনে রাস্তায় বালুর বস্তা এনে বাংকার বানানো হলো। তার মধ্যে রাখা হলো বোমাটি। আপাতত আমরা বাঁচলাম। সবাই অফিসে উঠে গেলাম।
ততক্ষণে ঢাকার সব মিডিয়ায় বোমার খবর চাউর হয়ে গেছে। ইস্কাটনের রাস্তায় বোমা রাখার কারণে বাংলামোটর থেকে মগবাজার সড়ক বন্ধ। বোমা দেখার জন্য দুপাশে হাজারো উৎসুক মানুষ ভিড়। জনকণ্ঠ অফিস লোকে লোকারণ্য। রাজনৈতিক নেতারাও এলেন। অফিসে পা ফেলার জায়গা নেই। শহরে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। ফোনের পরে ফোন আসছে পিএবিএক্সে। সারা রাত রাস্তায় বোমা রেখে আমরা সবাই অফিসে বসে থাকলাম।
পরদিন শনিবারের সকাল। বাসায় গিয়ে একটু নাশতা করে আবার অফিসে এলাম। সেনাবাহিনী থেকে বোমা বহনের জন্য বিশেষ ধরনের গাড়ি আনা হচ্ছে। সেই গাড়ির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। দুপুরের দিকে গাড়ি এল আগেপিছে সাইরেন বাজিয়ে। গাড়িটিতে বোমা তুলে নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ফায়ারিং রেঞ্জে। বায়না ধরলাম, বিস্ফোরণ দেখতে যাব। সেনা কর্মকর্তারা রাজি হলেন। অফিস থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বহরের সঙ্গে চললাম।
বোমা বহনকারী গাড়িবহর যখন মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাল, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। গাড়িবহরের সাইরেনের কারণে এমপি চেকপোস্টগুলো সচল হয়ে গেছে। আগেপিছে সেনাবাহিনীর চারটি গাড়ি, সঙ্গে রমনা থানার পুলিশের গাড়ি। আমরাও যাচ্ছি ফায়ার রেঞ্জ এলাকায়।
মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পেছনে পুরো ফাঁকা জলাশয়। ডিওএইচএস তখনো হয়নি। ক্যান্টনমেন্টের একেবারে শেষ মাথায় ফায়ারিং রেঞ্জ। রেঞ্জের নিরাপত্তার জন্য কংক্রিটের উঁচু দেয়াল। তার পাশে একটি টিনের ছাউনি। দূরে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার দেখা যাচ্ছে। বিলের ধার ঘেঁষে পাকা রাস্তা। বোমা নিয়ে গাড়িবহর সেখানে এসে থামল। খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি থেকে নামানো হলো ভয়ংকর বোমাটি। এরপর নিয়ে যাওয়া হলো বিস্ফোরণ এলাকায়।
চকোলেট রঙের ব্রিফকেসটি মাটিতে রাখার পর সেনা কর্মকর্তারা উপুড় হয়ে শেষবারের মতো ভেতরের বস্তুটি দেখে নিলেন। আর কোনো সংশয় নেই। একটু পর এলেন ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার আবু হাশিম খান। তিনি আসার পর ১১ সদস্যের বিস্ফোরক দল ব্রিফকেসটি তুলে নিয়ে গেল জলাধারের কাছে। জল-জংলার পাশে লাউখেত। রাস্তায় কাদা। সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্টের ওসি ফরিদ আহমেদ, মিরপুর ও রমনা থানার পুলিশ, সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার ১০-১২ জন সদস্য নেমে গেলেন সেই পথে।
আমরা অপেক্ষা করছি কখন বোমাটি ফাটবে। একটু পর বলা হলো, মিরপুরে মসজিদ থেকে উদ্ধার করা বোমাটিও একই সঙ্গে ফাটানো হবে। গাড়িবহর আবার ছুটল নতুন বোমার খোঁজে। এক ঘণ্টা পর সেই বোমা এল। সিদ্ধান্ত হলো, আগে মিরপুরের বোমাটি ফাটানো হবে। এ সময় কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হলো। লোক পাঠিয়ে ফায়ার রেঞ্জের পাশের সব ভবনের জানালা খোলার নির্দেশ দেওয়া হলো; যাতে শব্দে জানালার কাচ না ভাঙে।
মিরপুরের বোমাটি খোলা হলো সবার সামনে। ১০ ইঞ্চি লম্বা লালচে বোমাটির মুখে ঘড়ি ও দুটি অলিম্পিক পেনসিল ব্যাটারির সংযোগ। লম্বাটে বোমার গায়ে আতাফলের মতো খাঁচকাটা। সতর্কতার সঙ্গে বোমাটি রাখা হলো বিলের পানির কাছে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে। তার সঙ্গে সংযুক্ত হলো দুটি ডেটোনেটর। তারের শেষ মাথায় ব্লাস্টিং মেশিন। তাতে বিদ্যুতের প্রবাহ দিতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো বোমাটি।
এরপর শুরু হলো জনকণ্ঠে রাখা ব্রিফকেসের বোমা ফাটানোর কাজ। দূর থেকে প্রথমে বিশেষ কায়দায় খোলা হলো ব্রিফকেসের ওপরের ডালাটি। দেখা গেল, ভেতরে কাঠের ওপর বোমাটি বসানো; যাতে নড়াচড়া না হয়। বোমাটি যুক্ত রয়েছে ব্রিফকেসের নম্বর লকের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো শেষ বোমাটি। বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো ঝিলের পানিতে। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, অফিসে ফিরে এলাম।
অফিসে এসে শুনি, আইএসপিআর হ্যান্ডআউট দিয়ে বলেছে, বোমাটি বিস্ফোরিত হলে ১০০ মিটার এলাকার সবকিছু উড়ে যেত। স্বরাষ্ট্রসচিব সফিউর রহমান একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। জনকণ্ঠের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ আবু সাঈদ বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করলেন। এরপর এ ঘটনার অনেক ফলোআপ হয়েছিল। আবার অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে রটানো হলো, কাটতি বাড়াতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। কী কারণে যেন পুলিশি তদন্তও থেমে গেল। তারপর এত বছরে অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে, বিচারও হয়েছে। শুধু এ ঘটনার কোনো বিচার হলো না। বিষয়টা এখনো খুব অদ্ভুত মনে হয়।
রাজধানীর মিরপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইমরান খান সাকিব ওরফে শাকিল (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা-পুলিশ। ডিএমপি জানায়, শাকিল পেশাদার ছিনতাইকারী। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে গাজীপুরের পুবাইল থানার কুদাব পশ্চিমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়...
২ দিন আগেরাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলায় ‘আপন কফি হাউসে’ তরুণীকে মারধরের ঘটনায় কফি হাউসের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আল আমিন ও কর্মচারী শুভ সূত্রধরকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান এ আদেশ দেন।
৫ দিন আগেক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ল অমানবিক দৃশ্য— মেয়েটিকে বেশ কিছুক্ষণ ধমকানো হলো। এরপর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে যেন মানুষ নয়, পথের ধুলো। এর মধ্যেই এক কর্মচারী হঠাৎ মোটা লাঠি নিয়ে আঘাত করে তাঁর ছোট্ট পায়ে। শিশুটি কাতরাতে কাতরাতে পাশের দুটি গাড়ির ফাঁকে আশ্রয় নেয়। কিন্তু নির্যাতন থামে না, সেই লাঠি আব
৬ দিন আগেটিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘ধর্ষণ’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। তিনি এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অপরাধকে লঘু করার কোনো...
১৬ মার্চ ২০২৫