কামরুল হাসান

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ।
কটা হবে তখন?
রাত ১১-১২টা বা তার বেশি। আমরা এই সময়ে ঘুমোতে যাই।
তারপর?
মেয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে চার-পাঁচজন ঘরে ঢুকে পড়ল। আমার বাড়িতে প্রায়ই পুলিশ আসে। মনে করলাম, এবারও এল। সবাই সাদা পোশাকে। কারও হাতে কোনো অস্ত্র নেই।
কী পরিচয় দিল?
সবাই নিজেদের পুলিশ বলেই পরিচয় দিল। তল্লাশি-টল্লাশি না করে বলল, আমাদের সঙ্গে চলেন।
প্রশ্ন করলেন না, কোথায় যাবেন?
করলাম, তারা বলল কোনো কথা হবে না। যা বলছি শোনেন, যেতে হবে। যে কাপড়ে ছিলাম বের হলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি গলির মোড়ে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে, তাতে আরও কয়েকজন বসে। আমাকে সেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকল। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থামল একটা উঁচু ভবনের পেছনে। দেখি একটু দূরে আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। বলল, ওই গাড়িতে গিয়ে বসেন। সেটা ছিল প্রাইভেট কার। গাড়ির সামনে একজন বসা। পেছনের সিট খালি। আমি গিয়ে সেই গাড়িতে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল, পেছনে সেই মাইক্রোবাস। দুটি গাড়ি এসে থামল একটি বস্তির সামনে। আমাকে বলল বস্তির ভেতরে যেতে হবে।
গেলেন? আপনার ভয় করেনি?
এতক্ষণ কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এত রাতে অন্ধকার বস্তি দেখে খুব ভয় হলো। কি-না-কি হয় বুঝতে পারছি না। কিন্তু যুবকেরা আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। তারা আমাকে বস্তির একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে চাদর দিয়ে একটি মৃতদেহ ঢাকা। একজন চাদর তুলে বলল, দেখেন তো চিনতে পারেন কি না? মুখটা দেখেই চিনলাম। আরও নিশ্চিত হতে বললাম, ডান হাতটা দেখান। তারা ডান হাত দেখাল।
ডান হাতে কী ছিল?
ডান হাতের ওপরে একটি নীলাভ জন্মদাগ ছিল। সেটা দেখেই বুঝলাম এটা আমার ছেলের লাশ। আমি ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম, এটা আমার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর। লাশ শনাক্তের পর ওরা আমাকে আর দাঁড়াতে দিল না। আবার সেই গাড়িতে তুলে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল। আর বলে গেল, সবাই আমার ছেলের দলের লোক। এ নিয়ে আমি যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করি, থানা-পুলিশ না করি।
এ ঘটনা কবেকার?
২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সেদিন সোমবার ছিল। এরপর আমি কিছু জানি না, শুনেছি লাশ সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
কীভাবে আপনার ছেলে মারা গেল, কিছু জানতে পেরেছিলেন?
পেয়ারা বেগম বললেন, জাহাঙ্গীরের সবকিছু দেখভাল করত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিটেল। তাকে বলত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সে একদিন রাতে এসে বলল, র্যাবের ধাওয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। জাহাঙ্গীরের বউ সোনিয়া তখন গর্ভবতী। সেই অবস্থায় টেলিফোনে সোনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীর খুব উত্তেজিত ছিল। ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে নিজের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। ফোনের অন্য প্রান্তে তখন সোনিয়া ছিল। তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। সেই বাড়িতেই মরে পড়ে ছিল। রাতে দলের লোকেরা তাকে দাফন করতে বস্তিতে নিয়ে যায়।
সোনিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী হয়েছিল সেদিন?
জানব কী করে? কিছুদিন পর মিরপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিটেল মারা যায়। তার কয়েক দিন পর সোনিয়া আক্তারকে ডিবির এসি আখতারুজ্জামান রুনু ধরে নিয়ে যায়। সোনিয়া জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। জাহাঙ্গীরের একটি ছেলে আছে, সেই নাতির জন্য খুব মন খারাপ হয়। বলতে বলতে চোখ মুছলেন তিনি।
যে নারীর সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ কথোপকথন, তাঁর নাম পেয়ারা বেগম। ষাট ছুঁইছুঁই এই নারী মিরপুরের সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। যে মৃতদেহের বর্ণনা তিনি দিচ্ছিলেন, সেটা তাঁরই সন্তান রাজধানী কাঁপানো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর।
পেয়ারা বেগমের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে, তাঁর ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে বসে। পেয়ারা বেগম সন্ত্রাসী সন্তানের মৃত্যুর কথা অনেক দিন চেপে রেখেছিলেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি র্যাবের কাছে প্রথম এ ঘটনা স্বীকার করেন।
র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক প্রয়াত আনোয়ার ইকবাল আমাকে ডেকে নিয়ে সেই ঘটনা জানিয়েছিলেন। এবার সেই গল্পটা বলি।
ওয়ান-ইলেভেন সময়ের পরিচিত নাম ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারী। তিনি তখন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। আনোয়ারুল ইকবাল আমাকে বললেন, কয়েক দিন আগে বারীর কাছে এসেছিলেন ওই সময়ের পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের মা পেয়ারা বেগম, তাঁর ভাই ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর ফেরদৌস ও আলমগীরের স্ত্রী। তাঁরা দাবি করেছেন, কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। মা নিজে সন্তানের লাশও দেখেছেন। তিনি আমাকে বললেন, র্যাব বিষয়টি পুরোপুরি আস্থায় নেয়নি। এটা কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার কৌশলও হতে পারে। আমি যেন ঘটনাটা যাচাই করে দেখি। আমি এরপর ফজলুল বারীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের খোঁজে নেমে পড়ি।
পেয়ারা বেগম তখনো সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। আমি যখন স্কুলে এলাম, তখন টিফিনের বিরতি চলছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে পেয়ারা বেগমের নাম বলতে তিনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিয়ে জানতে চাইলেন–আমি পুলিশ না গোয়েন্দা। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বসতে বললেন। এরপর ডেকে দিলেন পেয়ারা বেগমকে।
পেয়ারা বেগম খুবই স্বাভাবিক, যা বলি তারই উত্তর দেন। কথায় কথায় তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁদের ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে। তিনি রিকশায় আর আমি পেছনে মোটরসাইকেলে। একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় নিয়ে তুললেন। বেল বাজাতে এক তরুণী এসে গেট খুলে দিল। তাঁকে দেখিয়ে বললেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ও রুমা, সবার ছোট। রুমা সালাম দিয়ে সরে গেলেন। একটু পরে তিনি আরেক ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি এসে জানান, তিনি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই ক্যাপ্টেন আলমগীর ফেরদৌস। ক্যাপ্টেন আলমগীর তখন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে কাঠের ব্যবসা করছেন। মা-ছেলে মিলে পুরো ঘটনার বিবরণ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে পরিবারটি বেঁচে গেছে। পেয়ারা বেগম বললেন, মিথ্যে অভিযোগে তাঁর বড় ছেলের চাকরি গেছে। সে নাকি জাহাঙ্গীরের জানাজায় অংশ নিয়েছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ওরফে কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে তখন নানা গুজব। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার জন্য এসব রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেছিলেন তিনি বিদেশে চলে গেছেন। ওই সময় কালা জাহাঙ্গীরের মাথায় এক ডজন খুনের মামলা আর গোটা বিশেক জিডি। পুরান ঢাকার শহীদ কমিশনারের আশ্রয়ে থেকে তখন একের পর এক খুন করে যাচ্ছিলেন। সে সময় পোস্তগোলার কমিশনার শাহাদত ছিলেন শহীদ কমিশনারের প্রতিপক্ষ।
কালা জাহাঙ্গীরের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আসিফ নামে আরেক সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। আদালত চত্বরে মুরগি মিলনকে খুন করার পর উত্তরার রাস্তায় গাড়ির ভেতরে গুলি করে শাহাদতকে খুন করেন কালা জাহাঙ্গীর। কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ। ইব্রাহিমপুরে বেড়ে ওঠা কালা জাহাঙ্গীরকে পুলিশ কখনো ধরতে পারেনি। ছোটবেলার একটি মাত্র ছবি ছাড়া পুলিশের কাছে তাঁর কোনো ছবি ছিল না। সাধারণ কোনো মানুষও তাঁকে চিনত না। তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল অ্যাকশন সিনেমার গল্পের মতো ভয়ংকর।
কালা জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন দিলাম ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি ফররুখ আহমেদকে। সিআইডিতে থাকার সুবাদে কালা জাহাঙ্গীরের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন। ফররুখ আহমেদ বললেন, তাঁর একাধিক সোর্স জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজের আশপাশে প্রতিপক্ষের গুলিতে কালা জাহাঙ্গীর আহত হয়েছিলেন। দলের লোকজন তাঁর চিকিৎসার জন্য গুলশানের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি সিআইডি।
কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে আমি একটি নিউজ করি (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, প্রথম আলো)। এরপর শুরু হয় বিতর্ক। পেয়ারা বেগমের বক্তব্য ধরে মিসরের ফারাও রাজা ‘তুতানখামেন’-এর কবর আবিষ্কারের মতো করে কালা জাহাঙ্গীরের কবর খুঁজতে নেমে পড়ি আমরা। আমার সঙ্গে বিডিনিউজের সাংবাদিক লিটন হায়দার। আমাদের ভাগ্য ভালো, তুতানখামেনের মতো সেই কবরে কোনো অভিশাপ ছিল না। সে কারণে সহজে পেয়ে যাই। একদিন আমি আর লিটন হায়দার যাই মহাখালীর সাততলা বস্তির পেছনে। সেখানকার লোকেরা আমাদের জানান, একদিন গভীর রাতে জনাবিশেক অস্ত্রধারী যুবক এসে একটি লাশ দাফন করে চলে যায়। তাদের অস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁরা। সে কারণে তাঁরা কাউকে বিষয়টি বলেননি। কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের বর্ণনার সঙ্গে তাঁদের বিবরণ মিলে যায়।
এরপর থেমে যায় কালা জাহাঙ্গীরের নামে সব ধরনের তৎপরতা। কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে ওই সময় সরকার এক লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁকে ধরেনি। ইব্রাহিমপুরের মশিউর রহমান কচির ভাই আজাদকে খুনের পর কালা জাহাঙ্গীর নিজে জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে সেই খুনের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, পুলিশ আমাকে ধরলে পাবে পুরস্কারের এক লাখ টাকা, আর না ধরলে প্রতি মাসে পাবে সেই টাকা–তাহলে ধরবে কেন? সত্যিই, শেষ পর্যন্ত অধরা থেকে গিয়েছিলেন ভয়ংকর খুনি কালা জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ।
কটা হবে তখন?
রাত ১১-১২টা বা তার বেশি। আমরা এই সময়ে ঘুমোতে যাই।
তারপর?
মেয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে চার-পাঁচজন ঘরে ঢুকে পড়ল। আমার বাড়িতে প্রায়ই পুলিশ আসে। মনে করলাম, এবারও এল। সবাই সাদা পোশাকে। কারও হাতে কোনো অস্ত্র নেই।
কী পরিচয় দিল?
সবাই নিজেদের পুলিশ বলেই পরিচয় দিল। তল্লাশি-টল্লাশি না করে বলল, আমাদের সঙ্গে চলেন।
প্রশ্ন করলেন না, কোথায় যাবেন?
করলাম, তারা বলল কোনো কথা হবে না। যা বলছি শোনেন, যেতে হবে। যে কাপড়ে ছিলাম বের হলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি গলির মোড়ে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে, তাতে আরও কয়েকজন বসে। আমাকে সেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকল। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থামল একটা উঁচু ভবনের পেছনে। দেখি একটু দূরে আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। বলল, ওই গাড়িতে গিয়ে বসেন। সেটা ছিল প্রাইভেট কার। গাড়ির সামনে একজন বসা। পেছনের সিট খালি। আমি গিয়ে সেই গাড়িতে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল, পেছনে সেই মাইক্রোবাস। দুটি গাড়ি এসে থামল একটি বস্তির সামনে। আমাকে বলল বস্তির ভেতরে যেতে হবে।
গেলেন? আপনার ভয় করেনি?
এতক্ষণ কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এত রাতে অন্ধকার বস্তি দেখে খুব ভয় হলো। কি-না-কি হয় বুঝতে পারছি না। কিন্তু যুবকেরা আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। তারা আমাকে বস্তির একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে চাদর দিয়ে একটি মৃতদেহ ঢাকা। একজন চাদর তুলে বলল, দেখেন তো চিনতে পারেন কি না? মুখটা দেখেই চিনলাম। আরও নিশ্চিত হতে বললাম, ডান হাতটা দেখান। তারা ডান হাত দেখাল।
ডান হাতে কী ছিল?
ডান হাতের ওপরে একটি নীলাভ জন্মদাগ ছিল। সেটা দেখেই বুঝলাম এটা আমার ছেলের লাশ। আমি ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম, এটা আমার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর। লাশ শনাক্তের পর ওরা আমাকে আর দাঁড়াতে দিল না। আবার সেই গাড়িতে তুলে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল। আর বলে গেল, সবাই আমার ছেলের দলের লোক। এ নিয়ে আমি যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করি, থানা-পুলিশ না করি।
এ ঘটনা কবেকার?
২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সেদিন সোমবার ছিল। এরপর আমি কিছু জানি না, শুনেছি লাশ সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
কীভাবে আপনার ছেলে মারা গেল, কিছু জানতে পেরেছিলেন?
পেয়ারা বেগম বললেন, জাহাঙ্গীরের সবকিছু দেখভাল করত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিটেল। তাকে বলত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সে একদিন রাতে এসে বলল, র্যাবের ধাওয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। জাহাঙ্গীরের বউ সোনিয়া তখন গর্ভবতী। সেই অবস্থায় টেলিফোনে সোনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীর খুব উত্তেজিত ছিল। ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে নিজের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। ফোনের অন্য প্রান্তে তখন সোনিয়া ছিল। তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। সেই বাড়িতেই মরে পড়ে ছিল। রাতে দলের লোকেরা তাকে দাফন করতে বস্তিতে নিয়ে যায়।
সোনিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী হয়েছিল সেদিন?
জানব কী করে? কিছুদিন পর মিরপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিটেল মারা যায়। তার কয়েক দিন পর সোনিয়া আক্তারকে ডিবির এসি আখতারুজ্জামান রুনু ধরে নিয়ে যায়। সোনিয়া জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। জাহাঙ্গীরের একটি ছেলে আছে, সেই নাতির জন্য খুব মন খারাপ হয়। বলতে বলতে চোখ মুছলেন তিনি।
যে নারীর সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ কথোপকথন, তাঁর নাম পেয়ারা বেগম। ষাট ছুঁইছুঁই এই নারী মিরপুরের সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। যে মৃতদেহের বর্ণনা তিনি দিচ্ছিলেন, সেটা তাঁরই সন্তান রাজধানী কাঁপানো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর।
পেয়ারা বেগমের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে, তাঁর ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে বসে। পেয়ারা বেগম সন্ত্রাসী সন্তানের মৃত্যুর কথা অনেক দিন চেপে রেখেছিলেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি র্যাবের কাছে প্রথম এ ঘটনা স্বীকার করেন।
র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক প্রয়াত আনোয়ার ইকবাল আমাকে ডেকে নিয়ে সেই ঘটনা জানিয়েছিলেন। এবার সেই গল্পটা বলি।
ওয়ান-ইলেভেন সময়ের পরিচিত নাম ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারী। তিনি তখন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। আনোয়ারুল ইকবাল আমাকে বললেন, কয়েক দিন আগে বারীর কাছে এসেছিলেন ওই সময়ের পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের মা পেয়ারা বেগম, তাঁর ভাই ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর ফেরদৌস ও আলমগীরের স্ত্রী। তাঁরা দাবি করেছেন, কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। মা নিজে সন্তানের লাশও দেখেছেন। তিনি আমাকে বললেন, র্যাব বিষয়টি পুরোপুরি আস্থায় নেয়নি। এটা কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার কৌশলও হতে পারে। আমি যেন ঘটনাটা যাচাই করে দেখি। আমি এরপর ফজলুল বারীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের খোঁজে নেমে পড়ি।
পেয়ারা বেগম তখনো সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। আমি যখন স্কুলে এলাম, তখন টিফিনের বিরতি চলছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে পেয়ারা বেগমের নাম বলতে তিনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিয়ে জানতে চাইলেন–আমি পুলিশ না গোয়েন্দা। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বসতে বললেন। এরপর ডেকে দিলেন পেয়ারা বেগমকে।
পেয়ারা বেগম খুবই স্বাভাবিক, যা বলি তারই উত্তর দেন। কথায় কথায় তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁদের ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে। তিনি রিকশায় আর আমি পেছনে মোটরসাইকেলে। একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় নিয়ে তুললেন। বেল বাজাতে এক তরুণী এসে গেট খুলে দিল। তাঁকে দেখিয়ে বললেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ও রুমা, সবার ছোট। রুমা সালাম দিয়ে সরে গেলেন। একটু পরে তিনি আরেক ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি এসে জানান, তিনি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই ক্যাপ্টেন আলমগীর ফেরদৌস। ক্যাপ্টেন আলমগীর তখন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে কাঠের ব্যবসা করছেন। মা-ছেলে মিলে পুরো ঘটনার বিবরণ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে পরিবারটি বেঁচে গেছে। পেয়ারা বেগম বললেন, মিথ্যে অভিযোগে তাঁর বড় ছেলের চাকরি গেছে। সে নাকি জাহাঙ্গীরের জানাজায় অংশ নিয়েছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ওরফে কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে তখন নানা গুজব। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার জন্য এসব রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেছিলেন তিনি বিদেশে চলে গেছেন। ওই সময় কালা জাহাঙ্গীরের মাথায় এক ডজন খুনের মামলা আর গোটা বিশেক জিডি। পুরান ঢাকার শহীদ কমিশনারের আশ্রয়ে থেকে তখন একের পর এক খুন করে যাচ্ছিলেন। সে সময় পোস্তগোলার কমিশনার শাহাদত ছিলেন শহীদ কমিশনারের প্রতিপক্ষ।
কালা জাহাঙ্গীরের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আসিফ নামে আরেক সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। আদালত চত্বরে মুরগি মিলনকে খুন করার পর উত্তরার রাস্তায় গাড়ির ভেতরে গুলি করে শাহাদতকে খুন করেন কালা জাহাঙ্গীর। কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ। ইব্রাহিমপুরে বেড়ে ওঠা কালা জাহাঙ্গীরকে পুলিশ কখনো ধরতে পারেনি। ছোটবেলার একটি মাত্র ছবি ছাড়া পুলিশের কাছে তাঁর কোনো ছবি ছিল না। সাধারণ কোনো মানুষও তাঁকে চিনত না। তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল অ্যাকশন সিনেমার গল্পের মতো ভয়ংকর।
কালা জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন দিলাম ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি ফররুখ আহমেদকে। সিআইডিতে থাকার সুবাদে কালা জাহাঙ্গীরের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন। ফররুখ আহমেদ বললেন, তাঁর একাধিক সোর্স জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজের আশপাশে প্রতিপক্ষের গুলিতে কালা জাহাঙ্গীর আহত হয়েছিলেন। দলের লোকজন তাঁর চিকিৎসার জন্য গুলশানের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি সিআইডি।
কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে আমি একটি নিউজ করি (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, প্রথম আলো)। এরপর শুরু হয় বিতর্ক। পেয়ারা বেগমের বক্তব্য ধরে মিসরের ফারাও রাজা ‘তুতানখামেন’-এর কবর আবিষ্কারের মতো করে কালা জাহাঙ্গীরের কবর খুঁজতে নেমে পড়ি আমরা। আমার সঙ্গে বিডিনিউজের সাংবাদিক লিটন হায়দার। আমাদের ভাগ্য ভালো, তুতানখামেনের মতো সেই কবরে কোনো অভিশাপ ছিল না। সে কারণে সহজে পেয়ে যাই। একদিন আমি আর লিটন হায়দার যাই মহাখালীর সাততলা বস্তির পেছনে। সেখানকার লোকেরা আমাদের জানান, একদিন গভীর রাতে জনাবিশেক অস্ত্রধারী যুবক এসে একটি লাশ দাফন করে চলে যায়। তাদের অস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁরা। সে কারণে তাঁরা কাউকে বিষয়টি বলেননি। কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের বর্ণনার সঙ্গে তাঁদের বিবরণ মিলে যায়।
এরপর থেমে যায় কালা জাহাঙ্গীরের নামে সব ধরনের তৎপরতা। কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে ওই সময় সরকার এক লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁকে ধরেনি। ইব্রাহিমপুরের মশিউর রহমান কচির ভাই আজাদকে খুনের পর কালা জাহাঙ্গীর নিজে জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে সেই খুনের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, পুলিশ আমাকে ধরলে পাবে পুরস্কারের এক লাখ টাকা, আর না ধরলে প্রতি মাসে পাবে সেই টাকা–তাহলে ধরবে কেন? সত্যিই, শেষ পর্যন্ত অধরা থেকে গিয়েছিলেন ভয়ংকর খুনি কালা জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন
কামরুল হাসান

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ।
কটা হবে তখন?
রাত ১১-১২টা বা তার বেশি। আমরা এই সময়ে ঘুমোতে যাই।
তারপর?
মেয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে চার-পাঁচজন ঘরে ঢুকে পড়ল। আমার বাড়িতে প্রায়ই পুলিশ আসে। মনে করলাম, এবারও এল। সবাই সাদা পোশাকে। কারও হাতে কোনো অস্ত্র নেই।
কী পরিচয় দিল?
সবাই নিজেদের পুলিশ বলেই পরিচয় দিল। তল্লাশি-টল্লাশি না করে বলল, আমাদের সঙ্গে চলেন।
প্রশ্ন করলেন না, কোথায় যাবেন?
করলাম, তারা বলল কোনো কথা হবে না। যা বলছি শোনেন, যেতে হবে। যে কাপড়ে ছিলাম বের হলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি গলির মোড়ে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে, তাতে আরও কয়েকজন বসে। আমাকে সেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকল। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থামল একটা উঁচু ভবনের পেছনে। দেখি একটু দূরে আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। বলল, ওই গাড়িতে গিয়ে বসেন। সেটা ছিল প্রাইভেট কার। গাড়ির সামনে একজন বসা। পেছনের সিট খালি। আমি গিয়ে সেই গাড়িতে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল, পেছনে সেই মাইক্রোবাস। দুটি গাড়ি এসে থামল একটি বস্তির সামনে। আমাকে বলল বস্তির ভেতরে যেতে হবে।
গেলেন? আপনার ভয় করেনি?
এতক্ষণ কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এত রাতে অন্ধকার বস্তি দেখে খুব ভয় হলো। কি-না-কি হয় বুঝতে পারছি না। কিন্তু যুবকেরা আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। তারা আমাকে বস্তির একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে চাদর দিয়ে একটি মৃতদেহ ঢাকা। একজন চাদর তুলে বলল, দেখেন তো চিনতে পারেন কি না? মুখটা দেখেই চিনলাম। আরও নিশ্চিত হতে বললাম, ডান হাতটা দেখান। তারা ডান হাত দেখাল।
ডান হাতে কী ছিল?
ডান হাতের ওপরে একটি নীলাভ জন্মদাগ ছিল। সেটা দেখেই বুঝলাম এটা আমার ছেলের লাশ। আমি ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম, এটা আমার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর। লাশ শনাক্তের পর ওরা আমাকে আর দাঁড়াতে দিল না। আবার সেই গাড়িতে তুলে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল। আর বলে গেল, সবাই আমার ছেলের দলের লোক। এ নিয়ে আমি যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করি, থানা-পুলিশ না করি।
এ ঘটনা কবেকার?
২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সেদিন সোমবার ছিল। এরপর আমি কিছু জানি না, শুনেছি লাশ সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
কীভাবে আপনার ছেলে মারা গেল, কিছু জানতে পেরেছিলেন?
পেয়ারা বেগম বললেন, জাহাঙ্গীরের সবকিছু দেখভাল করত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিটেল। তাকে বলত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সে একদিন রাতে এসে বলল, র্যাবের ধাওয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। জাহাঙ্গীরের বউ সোনিয়া তখন গর্ভবতী। সেই অবস্থায় টেলিফোনে সোনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীর খুব উত্তেজিত ছিল। ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে নিজের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। ফোনের অন্য প্রান্তে তখন সোনিয়া ছিল। তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। সেই বাড়িতেই মরে পড়ে ছিল। রাতে দলের লোকেরা তাকে দাফন করতে বস্তিতে নিয়ে যায়।
সোনিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী হয়েছিল সেদিন?
জানব কী করে? কিছুদিন পর মিরপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিটেল মারা যায়। তার কয়েক দিন পর সোনিয়া আক্তারকে ডিবির এসি আখতারুজ্জামান রুনু ধরে নিয়ে যায়। সোনিয়া জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। জাহাঙ্গীরের একটি ছেলে আছে, সেই নাতির জন্য খুব মন খারাপ হয়। বলতে বলতে চোখ মুছলেন তিনি।
যে নারীর সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ কথোপকথন, তাঁর নাম পেয়ারা বেগম। ষাট ছুঁইছুঁই এই নারী মিরপুরের সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। যে মৃতদেহের বর্ণনা তিনি দিচ্ছিলেন, সেটা তাঁরই সন্তান রাজধানী কাঁপানো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর।
পেয়ারা বেগমের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে, তাঁর ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে বসে। পেয়ারা বেগম সন্ত্রাসী সন্তানের মৃত্যুর কথা অনেক দিন চেপে রেখেছিলেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি র্যাবের কাছে প্রথম এ ঘটনা স্বীকার করেন।
র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক প্রয়াত আনোয়ার ইকবাল আমাকে ডেকে নিয়ে সেই ঘটনা জানিয়েছিলেন। এবার সেই গল্পটা বলি।
ওয়ান-ইলেভেন সময়ের পরিচিত নাম ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারী। তিনি তখন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। আনোয়ারুল ইকবাল আমাকে বললেন, কয়েক দিন আগে বারীর কাছে এসেছিলেন ওই সময়ের পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের মা পেয়ারা বেগম, তাঁর ভাই ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর ফেরদৌস ও আলমগীরের স্ত্রী। তাঁরা দাবি করেছেন, কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। মা নিজে সন্তানের লাশও দেখেছেন। তিনি আমাকে বললেন, র্যাব বিষয়টি পুরোপুরি আস্থায় নেয়নি। এটা কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার কৌশলও হতে পারে। আমি যেন ঘটনাটা যাচাই করে দেখি। আমি এরপর ফজলুল বারীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের খোঁজে নেমে পড়ি।
পেয়ারা বেগম তখনো সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। আমি যখন স্কুলে এলাম, তখন টিফিনের বিরতি চলছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে পেয়ারা বেগমের নাম বলতে তিনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিয়ে জানতে চাইলেন–আমি পুলিশ না গোয়েন্দা। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বসতে বললেন। এরপর ডেকে দিলেন পেয়ারা বেগমকে।
পেয়ারা বেগম খুবই স্বাভাবিক, যা বলি তারই উত্তর দেন। কথায় কথায় তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁদের ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে। তিনি রিকশায় আর আমি পেছনে মোটরসাইকেলে। একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় নিয়ে তুললেন। বেল বাজাতে এক তরুণী এসে গেট খুলে দিল। তাঁকে দেখিয়ে বললেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ও রুমা, সবার ছোট। রুমা সালাম দিয়ে সরে গেলেন। একটু পরে তিনি আরেক ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি এসে জানান, তিনি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই ক্যাপ্টেন আলমগীর ফেরদৌস। ক্যাপ্টেন আলমগীর তখন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে কাঠের ব্যবসা করছেন। মা-ছেলে মিলে পুরো ঘটনার বিবরণ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে পরিবারটি বেঁচে গেছে। পেয়ারা বেগম বললেন, মিথ্যে অভিযোগে তাঁর বড় ছেলের চাকরি গেছে। সে নাকি জাহাঙ্গীরের জানাজায় অংশ নিয়েছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ওরফে কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে তখন নানা গুজব। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার জন্য এসব রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেছিলেন তিনি বিদেশে চলে গেছেন। ওই সময় কালা জাহাঙ্গীরের মাথায় এক ডজন খুনের মামলা আর গোটা বিশেক জিডি। পুরান ঢাকার শহীদ কমিশনারের আশ্রয়ে থেকে তখন একের পর এক খুন করে যাচ্ছিলেন। সে সময় পোস্তগোলার কমিশনার শাহাদত ছিলেন শহীদ কমিশনারের প্রতিপক্ষ।
কালা জাহাঙ্গীরের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আসিফ নামে আরেক সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। আদালত চত্বরে মুরগি মিলনকে খুন করার পর উত্তরার রাস্তায় গাড়ির ভেতরে গুলি করে শাহাদতকে খুন করেন কালা জাহাঙ্গীর। কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ। ইব্রাহিমপুরে বেড়ে ওঠা কালা জাহাঙ্গীরকে পুলিশ কখনো ধরতে পারেনি। ছোটবেলার একটি মাত্র ছবি ছাড়া পুলিশের কাছে তাঁর কোনো ছবি ছিল না। সাধারণ কোনো মানুষও তাঁকে চিনত না। তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল অ্যাকশন সিনেমার গল্পের মতো ভয়ংকর।
কালা জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন দিলাম ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি ফররুখ আহমেদকে। সিআইডিতে থাকার সুবাদে কালা জাহাঙ্গীরের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন। ফররুখ আহমেদ বললেন, তাঁর একাধিক সোর্স জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজের আশপাশে প্রতিপক্ষের গুলিতে কালা জাহাঙ্গীর আহত হয়েছিলেন। দলের লোকজন তাঁর চিকিৎসার জন্য গুলশানের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি সিআইডি।
কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে আমি একটি নিউজ করি (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, প্রথম আলো)। এরপর শুরু হয় বিতর্ক। পেয়ারা বেগমের বক্তব্য ধরে মিসরের ফারাও রাজা ‘তুতানখামেন’-এর কবর আবিষ্কারের মতো করে কালা জাহাঙ্গীরের কবর খুঁজতে নেমে পড়ি আমরা। আমার সঙ্গে বিডিনিউজের সাংবাদিক লিটন হায়দার। আমাদের ভাগ্য ভালো, তুতানখামেনের মতো সেই কবরে কোনো অভিশাপ ছিল না। সে কারণে সহজে পেয়ে যাই। একদিন আমি আর লিটন হায়দার যাই মহাখালীর সাততলা বস্তির পেছনে। সেখানকার লোকেরা আমাদের জানান, একদিন গভীর রাতে জনাবিশেক অস্ত্রধারী যুবক এসে একটি লাশ দাফন করে চলে যায়। তাদের অস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁরা। সে কারণে তাঁরা কাউকে বিষয়টি বলেননি। কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের বর্ণনার সঙ্গে তাঁদের বিবরণ মিলে যায়।
এরপর থেমে যায় কালা জাহাঙ্গীরের নামে সব ধরনের তৎপরতা। কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে ওই সময় সরকার এক লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁকে ধরেনি। ইব্রাহিমপুরের মশিউর রহমান কচির ভাই আজাদকে খুনের পর কালা জাহাঙ্গীর নিজে জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে সেই খুনের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, পুলিশ আমাকে ধরলে পাবে পুরস্কারের এক লাখ টাকা, আর না ধরলে প্রতি মাসে পাবে সেই টাকা–তাহলে ধরবে কেন? সত্যিই, শেষ পর্যন্ত অধরা থেকে গিয়েছিলেন ভয়ংকর খুনি কালা জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ।
কটা হবে তখন?
রাত ১১-১২টা বা তার বেশি। আমরা এই সময়ে ঘুমোতে যাই।
তারপর?
মেয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে চার-পাঁচজন ঘরে ঢুকে পড়ল। আমার বাড়িতে প্রায়ই পুলিশ আসে। মনে করলাম, এবারও এল। সবাই সাদা পোশাকে। কারও হাতে কোনো অস্ত্র নেই।
কী পরিচয় দিল?
সবাই নিজেদের পুলিশ বলেই পরিচয় দিল। তল্লাশি-টল্লাশি না করে বলল, আমাদের সঙ্গে চলেন।
প্রশ্ন করলেন না, কোথায় যাবেন?
করলাম, তারা বলল কোনো কথা হবে না। যা বলছি শোনেন, যেতে হবে। যে কাপড়ে ছিলাম বের হলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি গলির মোড়ে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে, তাতে আরও কয়েকজন বসে। আমাকে সেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকল। কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থামল একটা উঁচু ভবনের পেছনে। দেখি একটু দূরে আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। বলল, ওই গাড়িতে গিয়ে বসেন। সেটা ছিল প্রাইভেট কার। গাড়ির সামনে একজন বসা। পেছনের সিট খালি। আমি গিয়ে সেই গাড়িতে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল, পেছনে সেই মাইক্রোবাস। দুটি গাড়ি এসে থামল একটি বস্তির সামনে। আমাকে বলল বস্তির ভেতরে যেতে হবে।
গেলেন? আপনার ভয় করেনি?
এতক্ষণ কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এত রাতে অন্ধকার বস্তি দেখে খুব ভয় হলো। কি-না-কি হয় বুঝতে পারছি না। কিন্তু যুবকেরা আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। তারা আমাকে বস্তির একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে চাদর দিয়ে একটি মৃতদেহ ঢাকা। একজন চাদর তুলে বলল, দেখেন তো চিনতে পারেন কি না? মুখটা দেখেই চিনলাম। আরও নিশ্চিত হতে বললাম, ডান হাতটা দেখান। তারা ডান হাত দেখাল।
ডান হাতে কী ছিল?
ডান হাতের ওপরে একটি নীলাভ জন্মদাগ ছিল। সেটা দেখেই বুঝলাম এটা আমার ছেলের লাশ। আমি ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম, এটা আমার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর। লাশ শনাক্তের পর ওরা আমাকে আর দাঁড়াতে দিল না। আবার সেই গাড়িতে তুলে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল। আর বলে গেল, সবাই আমার ছেলের দলের লোক। এ নিয়ে আমি যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করি, থানা-পুলিশ না করি।
এ ঘটনা কবেকার?
২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, সেদিন সোমবার ছিল। এরপর আমি কিছু জানি না, শুনেছি লাশ সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
কীভাবে আপনার ছেলে মারা গেল, কিছু জানতে পেরেছিলেন?
পেয়ারা বেগম বললেন, জাহাঙ্গীরের সবকিছু দেখভাল করত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিটেল। তাকে বলত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সে একদিন রাতে এসে বলল, র্যাবের ধাওয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। জাহাঙ্গীরের বউ সোনিয়া তখন গর্ভবতী। সেই অবস্থায় টেলিফোনে সোনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীর খুব উত্তেজিত ছিল। ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে নিজের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। ফোনের অন্য প্রান্তে তখন সোনিয়া ছিল। তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। সেই বাড়িতেই মরে পড়ে ছিল। রাতে দলের লোকেরা তাকে দাফন করতে বস্তিতে নিয়ে যায়।
সোনিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী হয়েছিল সেদিন?
জানব কী করে? কিছুদিন পর মিরপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিটেল মারা যায়। তার কয়েক দিন পর সোনিয়া আক্তারকে ডিবির এসি আখতারুজ্জামান রুনু ধরে নিয়ে যায়। সোনিয়া জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। জাহাঙ্গীরের একটি ছেলে আছে, সেই নাতির জন্য খুব মন খারাপ হয়। বলতে বলতে চোখ মুছলেন তিনি।
যে নারীর সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ কথোপকথন, তাঁর নাম পেয়ারা বেগম। ষাট ছুঁইছুঁই এই নারী মিরপুরের সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। যে মৃতদেহের বর্ণনা তিনি দিচ্ছিলেন, সেটা তাঁরই সন্তান রাজধানী কাঁপানো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর।
পেয়ারা বেগমের সঙ্গে আমার এই কথোপকথন ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে, তাঁর ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে বসে। পেয়ারা বেগম সন্ত্রাসী সন্তানের মৃত্যুর কথা অনেক দিন চেপে রেখেছিলেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি র্যাবের কাছে প্রথম এ ঘটনা স্বীকার করেন।
র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক প্রয়াত আনোয়ার ইকবাল আমাকে ডেকে নিয়ে সেই ঘটনা জানিয়েছিলেন। এবার সেই গল্পটা বলি।
ওয়ান-ইলেভেন সময়ের পরিচিত নাম ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারী। তিনি তখন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। আনোয়ারুল ইকবাল আমাকে বললেন, কয়েক দিন আগে বারীর কাছে এসেছিলেন ওই সময়ের পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের মা পেয়ারা বেগম, তাঁর ভাই ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর ফেরদৌস ও আলমগীরের স্ত্রী। তাঁরা দাবি করেছেন, কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। মা নিজে সন্তানের লাশও দেখেছেন। তিনি আমাকে বললেন, র্যাব বিষয়টি পুরোপুরি আস্থায় নেয়নি। এটা কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার কৌশলও হতে পারে। আমি যেন ঘটনাটা যাচাই করে দেখি। আমি এরপর ফজলুল বারীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের খোঁজে নেমে পড়ি।
পেয়ারা বেগম তখনো সেনাপল্লী স্কুলের শিক্ষক। আমি যখন স্কুলে এলাম, তখন টিফিনের বিরতি চলছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে পেয়ারা বেগমের নাম বলতে তিনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিয়ে জানতে চাইলেন–আমি পুলিশ না গোয়েন্দা। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বসতে বললেন। এরপর ডেকে দিলেন পেয়ারা বেগমকে।
পেয়ারা বেগম খুবই স্বাভাবিক, যা বলি তারই উত্তর দেন। কথায় কথায় তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁদের ইব্রাহিমপুরের বাড়িতে। তিনি রিকশায় আর আমি পেছনে মোটরসাইকেলে। একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় নিয়ে তুললেন। বেল বাজাতে এক তরুণী এসে গেট খুলে দিল। তাঁকে দেখিয়ে বললেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ও রুমা, সবার ছোট। রুমা সালাম দিয়ে সরে গেলেন। একটু পরে তিনি আরেক ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি এসে জানান, তিনি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই ক্যাপ্টেন আলমগীর ফেরদৌস। ক্যাপ্টেন আলমগীর তখন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে কাঠের ব্যবসা করছেন। মা-ছেলে মিলে পুরো ঘটনার বিবরণ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে পরিবারটি বেঁচে গেছে। পেয়ারা বেগম বললেন, মিথ্যে অভিযোগে তাঁর বড় ছেলের চাকরি গেছে। সে নাকি জাহাঙ্গীরের জানাজায় অংশ নিয়েছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ওরফে কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে তখন নানা গুজব। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, কালা জাহাঙ্গীরকে আড়াল করার জন্য এসব রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেছিলেন তিনি বিদেশে চলে গেছেন। ওই সময় কালা জাহাঙ্গীরের মাথায় এক ডজন খুনের মামলা আর গোটা বিশেক জিডি। পুরান ঢাকার শহীদ কমিশনারের আশ্রয়ে থেকে তখন একের পর এক খুন করে যাচ্ছিলেন। সে সময় পোস্তগোলার কমিশনার শাহাদত ছিলেন শহীদ কমিশনারের প্রতিপক্ষ।
কালা জাহাঙ্গীরের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আসিফ নামে আরেক সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। আদালত চত্বরে মুরগি মিলনকে খুন করার পর উত্তরার রাস্তায় গাড়ির ভেতরে গুলি করে শাহাদতকে খুন করেন কালা জাহাঙ্গীর। কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ। ইব্রাহিমপুরে বেড়ে ওঠা কালা জাহাঙ্গীরকে পুলিশ কখনো ধরতে পারেনি। ছোটবেলার একটি মাত্র ছবি ছাড়া পুলিশের কাছে তাঁর কোনো ছবি ছিল না। সাধারণ কোনো মানুষও তাঁকে চিনত না। তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল অ্যাকশন সিনেমার গল্পের মতো ভয়ংকর।
কালা জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন দিলাম ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি ফররুখ আহমেদকে। সিআইডিতে থাকার সুবাদে কালা জাহাঙ্গীরের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন। ফররুখ আহমেদ বললেন, তাঁর একাধিক সোর্স জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজের আশপাশে প্রতিপক্ষের গুলিতে কালা জাহাঙ্গীর আহত হয়েছিলেন। দলের লোকজন তাঁর চিকিৎসার জন্য গুলশানের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি সিআইডি।
কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে আমি একটি নিউজ করি (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, প্রথম আলো)। এরপর শুরু হয় বিতর্ক। পেয়ারা বেগমের বক্তব্য ধরে মিসরের ফারাও রাজা ‘তুতানখামেন’-এর কবর আবিষ্কারের মতো করে কালা জাহাঙ্গীরের কবর খুঁজতে নেমে পড়ি আমরা। আমার সঙ্গে বিডিনিউজের সাংবাদিক লিটন হায়দার। আমাদের ভাগ্য ভালো, তুতানখামেনের মতো সেই কবরে কোনো অভিশাপ ছিল না। সে কারণে সহজে পেয়ে যাই। একদিন আমি আর লিটন হায়দার যাই মহাখালীর সাততলা বস্তির পেছনে। সেখানকার লোকেরা আমাদের জানান, একদিন গভীর রাতে জনাবিশেক অস্ত্রধারী যুবক এসে একটি লাশ দাফন করে চলে যায়। তাদের অস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁরা। সে কারণে তাঁরা কাউকে বিষয়টি বলেননি। কালা জাহাঙ্গীরের মায়ের বর্ণনার সঙ্গে তাঁদের বিবরণ মিলে যায়।
এরপর থেমে যায় কালা জাহাঙ্গীরের নামে সব ধরনের তৎপরতা। কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে ওই সময় সরকার এক লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁকে ধরেনি। ইব্রাহিমপুরের মশিউর রহমান কচির ভাই আজাদকে খুনের পর কালা জাহাঙ্গীর নিজে জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে সেই খুনের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, পুলিশ আমাকে ধরলে পাবে পুরস্কারের এক লাখ টাকা, আর না ধরলে প্রতি মাসে পাবে সেই টাকা–তাহলে ধরবে কেন? সত্যিই, শেষ পর্যন্ত অধরা থেকে গিয়েছিলেন ভয়ংকর খুনি কালা জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ। কটা হবে তখন?
১০ জুলাই ২০২১
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ। কটা হবে তখন?
১০ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ। কটা হবে তখন?
১০ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ বেল বাজল। একবার-দুবার নয়, বেজেই চলেছে। মেয়েকে বললাম, দেখ তো মা, এত রাতে কে এল? মেয়ে বলল, মনে হয় পুলিশ। কটা হবে তখন?
১০ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে