অনলাইন ডেস্ক
২৫ বছর ধরে হংকংয়ে ব্যবসা করছেন ডোর লক ও হার্ডওয়্যার বিক্রেতা ডরিস আও। গত জুনে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংক। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানিয়েই ব্যাংক ওই হিসাবের কার্যক্রম ফ্রিজ করে দেয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে ডরিসের ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
অনলাইনে অনুসন্ধান করার পর ডরিস জানতে পারেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত হয়েছে ‘রাশিয়ার সামরিক বা প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকে সহায়তা করার’ অভিযোগে। তালিকায় দুটি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ডরিসের প্রতিষ্ঠানের।
নিজের গুদামে দাঁড়িয়ে রয়টার্সকে ডরিস আও বলছিলেন, ‘আমরা সেই প্রতিষ্ঠান নই। এটা পুরোপুরি একটা ভুল।’
এদিকে ডিবিএস ব্যাংক দাবি করছে, ডরিসের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কিছু ‘কার্যক্রম বা তথ্য’ পেয়েছে যা তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রোফাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডরিসের এই বিপর্যস্ত অবস্থার পেছনের কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকাণ্ড। চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে তারা একের পর এক চীনা প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করছে।
রয়টার্সের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষিদ্ধ বা ‘এনটিটি’ তালিকায় যুক্ত প্রায় ১০০টি চীনা ও হংকং কোম্পানির মধ্যে প্রায় ২৬টি এন্ট্রিতে ভুল তথ্য ছিল—যেমন ভুল নাম, ঠিকানা ও পুরনো তথ্য।
ওই তালিকায় থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখেছে, তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া সেগুলো ওখানে নেই, বরং আছে—বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টার, ম্যাসাজ পার্লার আর কাউন্সেলিং সেন্টার।
শেনঝেনের এক ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখতে পায়, আগাছায় ঢাকা একটি পুরনো কারখানার ধ্বংসাবশেষ, যা কয়েক বছর আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয়রা।
১৯৯৭ সালে তৈরি এই এনটিটি তালিকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই তালিকা দেখে চীন ও রাশিয়ার মার্কিন প্রযুক্তি, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করছে দেশটি।
বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে রাশিয়ার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির জোগান ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে শত শত প্রতিষ্ঠানের নাম এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে দেশটি। যাতে মস্কো এ ধরনের প্রযুক্তি, যার অনেকটাই চীনে তৈরি, সহজে না পায়। একইসঙ্গে এই তালিকা ব্যবহার করা হয় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সামরিক আধুনিকায়ন এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে উন্নত সক্ষমতা অর্জনে সীমা টানতে।
এই রাশ টেনে ধরার ধারা ট্রাম্প প্রশাসনেও অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার কাস্টমস রেকর্ডে দেখা যায়, রয়টার্সের পরিদর্শন করা ৯২টি এনটিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ২০টি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানি করেছে। ওই পণ্যের মধ্যে ছিল সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তি, যার মোট মূল্য ৭.৫ মিলিয়ন ডলার।
এনটিটি তালিকাটির দায়িত্ব মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের সংস্থা ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির (বিআইএস) ওপর। এই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন বাধ্যতামূলকভাবে নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিআইএসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এগুলোকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই করতে হবে।
গত মার্চ মাস পর্যন্ত বিআইএসের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চীন ও রাশিয়ায় মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তদারকি করতেন ম্যাথিউ বোরম্যান। তিনি জানান, বিআইএসের বিশ্লেষকেরা তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করেন এবং এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগ জড়িত থাকে।
হংকং-ভিত্তিক মালামাল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্রোকার সল্যুশনস লিমিটেডের নাম ২০২৩ সালে এনটিটি তালিকায় ওঠে। কোম্পানিটির পরিচালক ডেনিস মাকাভেভ জানান, বিআইএস-এর দুইজন এজেন্ট গত অক্টোবর মাসে তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা ২০২৪ সালের একটি চালান নিয়ে ‘পোস্ট শিপমেন্ট ভেরিফিকেশন’ করতে চায়, যার উদ্দেশ্য ছিল পণ্যের চূড়ান্ত ব্যবহার ও ব্যবহারকারী সম্পর্কে আলোচনা করা।
ওই চালানে কী ছিল তা জানেনই না উল্লেখ করে ডেনিস বলেন, ‘আমি তো শুধু ফরওয়ার্ডার, লজিস্টিকস লোক। আমি কোনো সামরিক পণ্য বিক্রি করি না।’
মাকাভেভ বলেন, তাঁর কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টে তোলার পর তিনি হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ে দুটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেই সমস্যার ‘সমাধান’ করেছেন। এছাড়া, ব্যাংকগুলো তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করেছেন।
এনটিটি তালিকাভুক্ত যে ঠিকানাগুলো রয়টার্স পরিদর্শন করে দেখেছিল, তার অর্ধেকই ছিল কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল বা কমসেক ফার্ম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে বিদেশি ও চীনা ব্যক্তিদের ব্যবসার জন্য হোস্ট ঠিকানা হিসেবে কাজ করে। কিছু ঠিকানায় দেখা গেছে, চিঠির বাক্সগুলো চিঠিতে উপচে পড়ছে। আবার কিছুর অবস্থা জরাজীর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় থাকা এমন ৯টি কমসেক ফার্মের কর্মীরা রয়টার্সকে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর তাঁদের রেকর্ডে নেই। কমসেক ফার্ম ইন্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপক ইয়াং জানান, তারা এখনো রাশিয়ান ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত শত শত কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এদিক যেসব ব্যাংক রাশিয়া বা চীনে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানো সংস্থাগুলোর লেনদেন সম্পন্ন করে, সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাংকগুলো বড় অংকের জরিমানার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রয়টার্সের পর্যালোচনায় উঠে আসে, কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের এনটিটি তালিকার সঙ্গে কোনো সংযোগ আছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সেসময়ই তালিকার অসঙ্গতিগুলো সামনে উঠে আসে।
হংকংয়ের একটি বিউটি সেলুনের মালিক ক্রিস্টাল এনজি এইচএসবিসি ও ডাহ সিং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তিনি জানান, ২০২৩ সালের শেষদিকে যখন তিনি নতুন অফিসে স্থানান্তর করেন, তখন ব্যাংকগুলোর একটির মাধ্যমে জানতে পারেন, তার নতুন ঠিকানাটি যুক্তরাষ্ট্রের এনটিটি তালিকাভুক্ত। ওই ঠিকানার পূর্বতন ভাড়াটে ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল ফার্ম। পরবর্তীতে এনজি তাঁর সেলুন অন্য ঠিকানায় সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুলতে সক্ষম হন।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ বাণিজ্য আইনজীবী বেনজামিন কস্ত্রজেবা বলেন, কিছু ঠিকানা পুরনো নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ছায়ায় ‘ভূতুড়ে’ হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম লঙ্ঘন যাতে না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোতে স্বয়ংক্রিয় কমপ্লায়েন্স প্রটোকলের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজারো নাম-ঠিকানা পরীক্ষা করা হয়।
বেনজামিন বলেন, ‘আমার মতে, ব্যাংকগুলো প্রায়ই অতিরিক্ত সতর্ক হয়। অনেক সময় তাতে ভুলও করে।’
ডরিস আও-এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উইন কি (চীন-হংকং) লিমিটেড। যা অনেকটা মিলে যায় উইন কি, উইন কি এলটিডি ও উইন কি লিমিটেডের সঙ্গে যেগুলোকে ২০২৩ সালে বিআইএস এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে।
ইউক্রেনের কেএসই ইনস্টিটিউটের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পণ্যের জন্য জোগান চেয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর, রাডার এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—তার ৭৬ শতাংশ চীন ও হংকংয়ের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ওলেনা বিলুসোভা জানান, উইন কি এলটিডি ২০২৩ সালে রাশিয়ায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ১০৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষিদ্ধ আইটেম—যেমন চিপ এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তথ্য অনুযায়ী, ওইসব পণ্যের কোনোটিই ডরিস আও-এর গুদাম থেকে যায়নি।
উইন কি এলটিডির ঠিকানা হিসেবে বিআইএস যে ঠিকানাটি পেয়েছিল সেটি ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল (কমসেক) ফার্ম লিংকেজ সেক্রেটারি লিমিটেডের অফিস। প্রতিষ্ঠানটি উইন কি এলটিডি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রেজিস্ট্রার রেকর্ড অনুযায়ী, উইন কি এলটিডি ২০২৪ সালের মে মাসে বিলুপ্ত হয়েছে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের সঙ্গে একত্রে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে তাইওয়ান। দেশটির অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, হংকংয়ের উইন কি এলটিডিকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করেছে তাইওয়ান।
ডরিস আও বলেন, তাঁর ঠিকানাটি ওয়াশিংটন কর্তৃক ব্ল্যাকলিস্ট হওয়ার পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিদেশী সরবরাহকারী ও কুরিয়াররা তাঁর কাছে পণ্য পাঠাতে অস্বীকার করেছে। তিনি তাঁর ক্ষতির পরিমাণ ৬ লাখ ডলারেরও বেশি বলে অনুমান করেছেন।
এনটিটি তালিকা থেকে কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম সরাতে চাইলে আবেদন করতে পারে বলে বিআইএস তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে। তবে এ বিষয়ে মেইল পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান ডরিস আও। তিনি বলেন, বিএআইএসকে ইমেইল পাঠালে আরও বিস্তারিত এবং তথ্য চেয়ে তাদের কাছ থেকে একটি রিপ্লাই পান। তারপর সেসব তথ্য সরবরাহ করা হলে আর ফিরতি কোনো যোগাযোগর সুযোগ পাননি ডরিস। উত্তর পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে আরও তথ্য চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেগুলি সরবরাহ করেছিলেন, তবে তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
দুইজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এই আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কম ব্যবহৃত এবং সাধারণত মার্কিন কর্তৃপক্ষদের পক্ষ থেকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখা হয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিদেশী বিষয়ক পরামর্শক স্টিভ কুনেন বলেন, এনটিটি তালিকা অনেকটা ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র মতো যেখানে আপনি হয়তো যখন খুশি চেক ইন করতে পারেন, কিন্তু কখনো বের হতে পারবেন না।
তবে এনটিটি তালিকার এসব ভুলের বিষয়ে এবং তা সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে বিআইএস ও মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।
এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন, বিআইএস তীব্র ‘সম্পদস্বল্পতায়’ ভুগছে। এ কথার পক্ষে সায় দিয়েছেন আরও কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, সীমিত জনবলের কারণে বিআইসের পক্ষে এনটিটি তালিকা হালনাগাদ করা বা ভুল তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাবেক বিআইএস কর্মকর্তা বোরম্যান বলেন, তালিকাভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই আসলে ‘ফ্রন্ট কোম্পানি’। অর্থাৎ আসল ব্যবসাকে আড়াল করে একটি অন্য প্রতিষ্ঠান দেখানো বা ‘কালো টাকা সাদা দেখানোর মাধ্যম। আর বিআইএসের চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই অন্য ঠিকানায় বা অন্য নামে সরে যেতে পারে।
২৫ বছর ধরে হংকংয়ে ব্যবসা করছেন ডোর লক ও হার্ডওয়্যার বিক্রেতা ডরিস আও। গত জুনে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংক। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানিয়েই ব্যাংক ওই হিসাবের কার্যক্রম ফ্রিজ করে দেয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে ডরিসের ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
অনলাইনে অনুসন্ধান করার পর ডরিস জানতে পারেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত হয়েছে ‘রাশিয়ার সামরিক বা প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকে সহায়তা করার’ অভিযোগে। তালিকায় দুটি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ডরিসের প্রতিষ্ঠানের।
নিজের গুদামে দাঁড়িয়ে রয়টার্সকে ডরিস আও বলছিলেন, ‘আমরা সেই প্রতিষ্ঠান নই। এটা পুরোপুরি একটা ভুল।’
এদিকে ডিবিএস ব্যাংক দাবি করছে, ডরিসের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কিছু ‘কার্যক্রম বা তথ্য’ পেয়েছে যা তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রোফাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডরিসের এই বিপর্যস্ত অবস্থার পেছনের কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকাণ্ড। চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে তারা একের পর এক চীনা প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করছে।
রয়টার্সের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষিদ্ধ বা ‘এনটিটি’ তালিকায় যুক্ত প্রায় ১০০টি চীনা ও হংকং কোম্পানির মধ্যে প্রায় ২৬টি এন্ট্রিতে ভুল তথ্য ছিল—যেমন ভুল নাম, ঠিকানা ও পুরনো তথ্য।
ওই তালিকায় থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখেছে, তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া সেগুলো ওখানে নেই, বরং আছে—বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টার, ম্যাসাজ পার্লার আর কাউন্সেলিং সেন্টার।
শেনঝেনের এক ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখতে পায়, আগাছায় ঢাকা একটি পুরনো কারখানার ধ্বংসাবশেষ, যা কয়েক বছর আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয়রা।
১৯৯৭ সালে তৈরি এই এনটিটি তালিকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই তালিকা দেখে চীন ও রাশিয়ার মার্কিন প্রযুক্তি, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করছে দেশটি।
বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে রাশিয়ার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির জোগান ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে শত শত প্রতিষ্ঠানের নাম এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে দেশটি। যাতে মস্কো এ ধরনের প্রযুক্তি, যার অনেকটাই চীনে তৈরি, সহজে না পায়। একইসঙ্গে এই তালিকা ব্যবহার করা হয় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সামরিক আধুনিকায়ন এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে উন্নত সক্ষমতা অর্জনে সীমা টানতে।
এই রাশ টেনে ধরার ধারা ট্রাম্প প্রশাসনেও অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার কাস্টমস রেকর্ডে দেখা যায়, রয়টার্সের পরিদর্শন করা ৯২টি এনটিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ২০টি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানি করেছে। ওই পণ্যের মধ্যে ছিল সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তি, যার মোট মূল্য ৭.৫ মিলিয়ন ডলার।
এনটিটি তালিকাটির দায়িত্ব মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের সংস্থা ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির (বিআইএস) ওপর। এই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন বাধ্যতামূলকভাবে নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিআইএসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এগুলোকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই করতে হবে।
গত মার্চ মাস পর্যন্ত বিআইএসের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চীন ও রাশিয়ায় মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তদারকি করতেন ম্যাথিউ বোরম্যান। তিনি জানান, বিআইএসের বিশ্লেষকেরা তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করেন এবং এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগ জড়িত থাকে।
হংকং-ভিত্তিক মালামাল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্রোকার সল্যুশনস লিমিটেডের নাম ২০২৩ সালে এনটিটি তালিকায় ওঠে। কোম্পানিটির পরিচালক ডেনিস মাকাভেভ জানান, বিআইএস-এর দুইজন এজেন্ট গত অক্টোবর মাসে তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা ২০২৪ সালের একটি চালান নিয়ে ‘পোস্ট শিপমেন্ট ভেরিফিকেশন’ করতে চায়, যার উদ্দেশ্য ছিল পণ্যের চূড়ান্ত ব্যবহার ও ব্যবহারকারী সম্পর্কে আলোচনা করা।
ওই চালানে কী ছিল তা জানেনই না উল্লেখ করে ডেনিস বলেন, ‘আমি তো শুধু ফরওয়ার্ডার, লজিস্টিকস লোক। আমি কোনো সামরিক পণ্য বিক্রি করি না।’
মাকাভেভ বলেন, তাঁর কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টে তোলার পর তিনি হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ে দুটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেই সমস্যার ‘সমাধান’ করেছেন। এছাড়া, ব্যাংকগুলো তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করেছেন।
এনটিটি তালিকাভুক্ত যে ঠিকানাগুলো রয়টার্স পরিদর্শন করে দেখেছিল, তার অর্ধেকই ছিল কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল বা কমসেক ফার্ম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে বিদেশি ও চীনা ব্যক্তিদের ব্যবসার জন্য হোস্ট ঠিকানা হিসেবে কাজ করে। কিছু ঠিকানায় দেখা গেছে, চিঠির বাক্সগুলো চিঠিতে উপচে পড়ছে। আবার কিছুর অবস্থা জরাজীর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় থাকা এমন ৯টি কমসেক ফার্মের কর্মীরা রয়টার্সকে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর তাঁদের রেকর্ডে নেই। কমসেক ফার্ম ইন্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপক ইয়াং জানান, তারা এখনো রাশিয়ান ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত শত শত কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এদিক যেসব ব্যাংক রাশিয়া বা চীনে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানো সংস্থাগুলোর লেনদেন সম্পন্ন করে, সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাংকগুলো বড় অংকের জরিমানার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রয়টার্সের পর্যালোচনায় উঠে আসে, কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের এনটিটি তালিকার সঙ্গে কোনো সংযোগ আছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সেসময়ই তালিকার অসঙ্গতিগুলো সামনে উঠে আসে।
হংকংয়ের একটি বিউটি সেলুনের মালিক ক্রিস্টাল এনজি এইচএসবিসি ও ডাহ সিং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তিনি জানান, ২০২৩ সালের শেষদিকে যখন তিনি নতুন অফিসে স্থানান্তর করেন, তখন ব্যাংকগুলোর একটির মাধ্যমে জানতে পারেন, তার নতুন ঠিকানাটি যুক্তরাষ্ট্রের এনটিটি তালিকাভুক্ত। ওই ঠিকানার পূর্বতন ভাড়াটে ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল ফার্ম। পরবর্তীতে এনজি তাঁর সেলুন অন্য ঠিকানায় সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুলতে সক্ষম হন।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ বাণিজ্য আইনজীবী বেনজামিন কস্ত্রজেবা বলেন, কিছু ঠিকানা পুরনো নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ছায়ায় ‘ভূতুড়ে’ হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম লঙ্ঘন যাতে না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোতে স্বয়ংক্রিয় কমপ্লায়েন্স প্রটোকলের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজারো নাম-ঠিকানা পরীক্ষা করা হয়।
বেনজামিন বলেন, ‘আমার মতে, ব্যাংকগুলো প্রায়ই অতিরিক্ত সতর্ক হয়। অনেক সময় তাতে ভুলও করে।’
ডরিস আও-এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উইন কি (চীন-হংকং) লিমিটেড। যা অনেকটা মিলে যায় উইন কি, উইন কি এলটিডি ও উইন কি লিমিটেডের সঙ্গে যেগুলোকে ২০২৩ সালে বিআইএস এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে।
ইউক্রেনের কেএসই ইনস্টিটিউটের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পণ্যের জন্য জোগান চেয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর, রাডার এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—তার ৭৬ শতাংশ চীন ও হংকংয়ের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ওলেনা বিলুসোভা জানান, উইন কি এলটিডি ২০২৩ সালে রাশিয়ায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ১০৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষিদ্ধ আইটেম—যেমন চিপ এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তথ্য অনুযায়ী, ওইসব পণ্যের কোনোটিই ডরিস আও-এর গুদাম থেকে যায়নি।
উইন কি এলটিডির ঠিকানা হিসেবে বিআইএস যে ঠিকানাটি পেয়েছিল সেটি ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল (কমসেক) ফার্ম লিংকেজ সেক্রেটারি লিমিটেডের অফিস। প্রতিষ্ঠানটি উইন কি এলটিডি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রেজিস্ট্রার রেকর্ড অনুযায়ী, উইন কি এলটিডি ২০২৪ সালের মে মাসে বিলুপ্ত হয়েছে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের সঙ্গে একত্রে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে তাইওয়ান। দেশটির অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, হংকংয়ের উইন কি এলটিডিকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করেছে তাইওয়ান।
ডরিস আও বলেন, তাঁর ঠিকানাটি ওয়াশিংটন কর্তৃক ব্ল্যাকলিস্ট হওয়ার পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিদেশী সরবরাহকারী ও কুরিয়াররা তাঁর কাছে পণ্য পাঠাতে অস্বীকার করেছে। তিনি তাঁর ক্ষতির পরিমাণ ৬ লাখ ডলারেরও বেশি বলে অনুমান করেছেন।
এনটিটি তালিকা থেকে কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম সরাতে চাইলে আবেদন করতে পারে বলে বিআইএস তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে। তবে এ বিষয়ে মেইল পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান ডরিস আও। তিনি বলেন, বিএআইএসকে ইমেইল পাঠালে আরও বিস্তারিত এবং তথ্য চেয়ে তাদের কাছ থেকে একটি রিপ্লাই পান। তারপর সেসব তথ্য সরবরাহ করা হলে আর ফিরতি কোনো যোগাযোগর সুযোগ পাননি ডরিস। উত্তর পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে আরও তথ্য চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেগুলি সরবরাহ করেছিলেন, তবে তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
দুইজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এই আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কম ব্যবহৃত এবং সাধারণত মার্কিন কর্তৃপক্ষদের পক্ষ থেকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখা হয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিদেশী বিষয়ক পরামর্শক স্টিভ কুনেন বলেন, এনটিটি তালিকা অনেকটা ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র মতো যেখানে আপনি হয়তো যখন খুশি চেক ইন করতে পারেন, কিন্তু কখনো বের হতে পারবেন না।
তবে এনটিটি তালিকার এসব ভুলের বিষয়ে এবং তা সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে বিআইএস ও মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।
এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন, বিআইএস তীব্র ‘সম্পদস্বল্পতায়’ ভুগছে। এ কথার পক্ষে সায় দিয়েছেন আরও কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, সীমিত জনবলের কারণে বিআইসের পক্ষে এনটিটি তালিকা হালনাগাদ করা বা ভুল তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাবেক বিআইএস কর্মকর্তা বোরম্যান বলেন, তালিকাভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই আসলে ‘ফ্রন্ট কোম্পানি’। অর্থাৎ আসল ব্যবসাকে আড়াল করে একটি অন্য প্রতিষ্ঠান দেখানো বা ‘কালো টাকা সাদা দেখানোর মাধ্যম। আর বিআইএসের চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই অন্য ঠিকানায় বা অন্য নামে সরে যেতে পারে।
দেশের শিল্পকারখানায় চরম গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও উৎপাদন নেমে এসেছে তিন ভাগের এক ভাগে। শুধু শিল্প নয়, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনেও চলছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। গ্রীষ্মে লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে
৭ ঘণ্টা আগেআদানি গ্রুপ আগে বলেছিল, প্রকল্পটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু এখন ভারতীয় এই সংস্থার অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে দেখা গেছে, এই ব্যবসা থেকে কতটা চাহিদা তৈরি হবে, বিশেষ করে ভারতের বাজারে, সে সম্পর্কে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। এরপরই টাওয়ারের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেতিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার খবর প্রকাশের পর বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সৌদি আরবের সরবরাহ বৃদ্ধির ইঙ্গিতও এই দরপতনে প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
২ দিন আগেকর দিতে গিয়েও দিতে হয় ঘুষ—শিল্পমালিকদের এই বিস্ফোরক ক্ষোভ এখন আর কানে কানে বলা গুঞ্জন নয়, বরং অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকাশ্য প্রতিবাদ। নিয়মিত করদাতারা পাচ্ছেন না ন্যায্য সম্মান, বরং তাঁদের ঘাড়ে চাপছে অতিরিক্ত বোঝা। উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস-বিদ্যুৎ নেই, অথচ কর চাই নিরবচ্ছিন্নভাবে। বিনিয়োগ থমকে...
২ দিন আগে