Ajker Patrika

শুধু নামের মিলে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায়, ক্ষতিগ্রস্ত হংকংয়ের সাধারণ ব্যবসায়ীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন ধাক্কায় ক্ষতি হচ্ছে হংকংয়ের ব্যবসায়ীদের। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন ধাক্কায় ক্ষতি হচ্ছে হংকংয়ের ব্যবসায়ীদের। ছবি: সংগৃহীত

২৫ বছর ধরে হংকংয়ে ব্যবসা করছেন ডোর লক ও হার্ডওয়্যার বিক্রেতা ডরিস আও। গত জুনে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংক। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানিয়েই ব্যাংক ওই হিসাবের কার্যক্রম ফ্রিজ করে দেয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে ডরিসের ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

অনলাইনে অনুসন্ধান করার পর ডরিস জানতে পারেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত হয়েছে ‘রাশিয়ার সামরিক বা প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকে সহায়তা করার’ অভিযোগে। তালিকায় দুটি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ডরিসের প্রতিষ্ঠানের।

নিজের গুদামে দাঁড়িয়ে রয়টার্সকে ডরিস আও বলছিলেন, ‘আমরা সেই প্রতিষ্ঠান নই। এটা পুরোপুরি একটা ভুল।’

এদিকে ডিবিএস ব্যাংক দাবি করছে, ডরিসের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কিছু ‘কার্যক্রম বা তথ্য’ পেয়েছে যা তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রোফাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডরিসের এই বিপর্যস্ত অবস্থার পেছনের কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকাণ্ড। চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে তারা একের পর এক চীনা প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করছে।

রয়টার্সের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষিদ্ধ বা ‘এনটিটি’ তালিকায় যুক্ত প্রায় ১০০টি চীনা ও হংকং কোম্পানির মধ্যে প্রায় ২৬টি এন্ট্রিতে ভুল তথ্য ছিল—যেমন ভুল নাম, ঠিকানা ও পুরনো তথ্য।

ওই তালিকায় থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখেছে, তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া সেগুলো ওখানে নেই, বরং আছে—বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টার, ম্যাসাজ পার্লার আর কাউন্সেলিং সেন্টার।

শেনঝেনের এক ঠিকানায় গিয়ে রয়টার্স দেখতে পায়, আগাছায় ঢাকা একটি পুরনো কারখানার ধ্বংসাবশেষ, যা কয়েক বছর আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয়রা।

১৯৯৭ সালে তৈরি এই এনটিটি তালিকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই তালিকা দেখে চীন ও রাশিয়ার মার্কিন প্রযুক্তি, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করছে দেশটি।

বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে রাশিয়ার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির জোগান ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে শত শত প্রতিষ্ঠানের নাম এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে দেশটি। যাতে মস্কো এ ধরনের প্রযুক্তি, যার অনেকটাই চীনে তৈরি, সহজে না পায়। একইসঙ্গে এই তালিকা ব্যবহার করা হয় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সামরিক আধুনিকায়ন এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে উন্নত সক্ষমতা অর্জনে সীমা টানতে।

এই রাশ টেনে ধরার ধারা ট্রাম্প প্রশাসনেও অব্যাহত রয়েছে।

রাশিয়ার কাস্টমস রেকর্ডে দেখা যায়, রয়টার্সের পরিদর্শন করা ৯২টি এনটিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ২০টি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানি করেছে। ওই পণ্যের মধ্যে ছিল সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তি, যার মোট মূল্য ৭.৫ মিলিয়ন ডলার।

এনটিটি তালিকাটির দায়িত্ব মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের সংস্থা ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির (বিআইএস) ওপর। এই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন বাধ্যতামূলকভাবে নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিআইএসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এগুলোকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই করতে হবে।

গত মার্চ মাস পর্যন্ত বিআইএসের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চীন ও রাশিয়ায় মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তদারকি করতেন ম্যাথিউ বোরম্যান। তিনি জানান, বিআইএসের বিশ্লেষকেরা তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করেন এবং এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগ জড়িত থাকে।

হংকং-ভিত্তিক মালামাল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্রোকার সল্যুশনস লিমিটেডের নাম ২০২৩ সালে এনটিটি তালিকায় ওঠে। কোম্পানিটির পরিচালক ডেনিস মাকাভেভ জানান, বিআইএস-এর দুইজন এজেন্ট গত অক্টোবর মাসে তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা ২০২৪ সালের একটি চালান নিয়ে ‘পোস্ট শিপমেন্ট ভেরিফিকেশন’ করতে চায়, যার উদ্দেশ্য ছিল পণ্যের চূড়ান্ত ব্যবহার ও ব্যবহারকারী সম্পর্কে আলোচনা করা।

ওই চালানে কী ছিল তা জানেনই না উল্লেখ করে ডেনিস বলেন, ‘আমি তো শুধু ফরওয়ার্ডার, লজিস্টিকস লোক। আমি কোনো সামরিক পণ্য বিক্রি করি না।’

মাকাভেভ বলেন, তাঁর কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টে তোলার পর তিনি হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ে দুটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেই সমস্যার ‘সমাধান’ করেছেন। এছাড়া, ব্যাংকগুলো তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করেছেন।

এনটিটি তালিকাভুক্ত যে ঠিকানাগুলো রয়টার্স পরিদর্শন করে দেখেছিল, তার অর্ধেকই ছিল কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল বা কমসেক ফার্ম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হংকংয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রিতে বিদেশি ও চীনা ব্যক্তিদের ব্যবসার জন্য হোস্ট ঠিকানা হিসেবে কাজ করে। কিছু ঠিকানায় দেখা গেছে, চিঠির বাক্সগুলো চিঠিতে উপচে পড়ছে। আবার কিছুর অবস্থা জরাজীর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় থাকা এমন ৯টি কমসেক ফার্মের কর্মীরা রয়টার্সকে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর তাঁদের রেকর্ডে নেই। কমসেক ফার্ম ইন্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপক ইয়াং জানান, তারা এখনো রাশিয়ান ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত শত শত কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এদিক যেসব ব্যাংক রাশিয়া বা চীনে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানো সংস্থাগুলোর লেনদেন সম্পন্ন করে, সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাংকগুলো বড় অংকের জরিমানার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রয়টার্সের পর্যালোচনায় উঠে আসে, কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের এনটিটি তালিকার সঙ্গে কোনো সংযোগ আছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

সেসময়ই তালিকার অসঙ্গতিগুলো সামনে উঠে আসে।

হংকংয়ের একটি বিউটি সেলুনের মালিক ক্রিস্টাল এনজি এইচএসবিসি ও ডাহ সিং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তিনি জানান, ২০২৩ সালের শেষদিকে যখন তিনি নতুন অফিসে স্থানান্তর করেন, তখন ব্যাংকগুলোর একটির মাধ্যমে জানতে পারেন, তার নতুন ঠিকানাটি যুক্তরাষ্ট্রের এনটিটি তালিকাভুক্ত। ওই ঠিকানার পূর্বতন ভাড়াটে ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল ফার্ম। পরবর্তীতে এনজি তাঁর সেলুন অন্য ঠিকানায় সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুলতে সক্ষম হন।

সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ বাণিজ্য আইনজীবী বেনজামিন কস্ত্রজেবা বলেন, কিছু ঠিকানা পুরনো নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ছায়ায় ‘ভূতুড়ে’ হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম লঙ্ঘন যাতে না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোতে স্বয়ংক্রিয় কমপ্লায়েন্স প্রটোকলের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজারো নাম-ঠিকানা পরীক্ষা করা হয়।

বেনজামিন বলেন, ‘আমার মতে, ব্যাংকগুলো প্রায়ই অতিরিক্ত সতর্ক হয়। অনেক সময় তাতে ভুলও করে।’

ডরিস আও-এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উইন কি (চীন-হংকং) লিমিটেড। যা অনেকটা মিলে যায় উইন কি, উইন কি এলটিডি ও উইন কি লিমিটেডের সঙ্গে যেগুলোকে ২০২৩ সালে বিআইএস এনটিটি তালিকায় যুক্ত করে।

ইউক্রেনের কেএসই ইনস্টিটিউটের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পণ্যের জন্য জোগান চেয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর, রাডার এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—তার ৭৬ শতাংশ চীন ও হংকংয়ের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ওলেনা বিলুসোভা জানান, উইন কি এলটিডি ২০২৩ সালে রাশিয়ায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ১০৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষিদ্ধ আইটেম—যেমন চিপ এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম—অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তথ্য অনুযায়ী, ওইসব পণ্যের কোনোটিই ডরিস আও-এর গুদাম থেকে যায়নি।

উইন কি এলটিডির ঠিকানা হিসেবে বিআইএস যে ঠিকানাটি পেয়েছিল সেটি ছিল একটি কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল (কমসেক) ফার্ম লিংকেজ সেক্রেটারি লিমিটেডের অফিস। প্রতিষ্ঠানটি উইন কি এলটিডি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রেজিস্ট্রার রেকর্ড অনুযায়ী, উইন কি এলটিডি ২০২৪ সালের মে মাসে বিলুপ্ত হয়েছে।

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের সঙ্গে একত্রে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে তাইওয়ান। দেশটির অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, হংকংয়ের উইন কি এলটিডিকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টে যুক্ত করেছে তাইওয়ান।

ডরিস আও বলেন, তাঁর ঠিকানাটি ওয়াশিংটন কর্তৃক ব্ল্যাকলিস্ট হওয়ার পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিদেশী সরবরাহকারী ও কুরিয়াররা তাঁর কাছে পণ্য পাঠাতে অস্বীকার করেছে। তিনি তাঁর ক্ষতির পরিমাণ ৬ লাখ ডলারেরও বেশি বলে অনুমান করেছেন।

এনটিটি তালিকা থেকে কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম সরাতে চাইলে আবেদন করতে পারে বলে বিআইএস তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে। তবে এ বিষয়ে মেইল পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান ডরিস আও। তিনি বলেন, বিএআইএসকে ইমেইল পাঠালে আরও বিস্তারিত এবং তথ্য চেয়ে তাদের কাছ থেকে একটি রিপ্লাই পান। তারপর সেসব তথ্য সরবরাহ করা হলে আর ফিরতি কোনো যোগাযোগর সুযোগ পাননি ডরিস। উত্তর পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে আরও তথ্য চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেগুলি সরবরাহ করেছিলেন, তবে তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

দুইজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এই আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কম ব্যবহৃত এবং সাধারণত মার্কিন কর্তৃপক্ষদের পক্ষ থেকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখা হয়।

এ প্রসঙ্গে সাবেক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিদেশী বিষয়ক পরামর্শক স্টিভ কুনেন বলেন, এনটিটি তালিকা অনেকটা ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র মতো যেখানে আপনি হয়তো যখন খুশি চেক ইন করতে পারেন, কিন্তু কখনো বের হতে পারবেন না।

তবে এনটিটি তালিকার এসব ভুলের বিষয়ে এবং তা সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে বিআইএস ও মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।

এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন, বিআইএস তীব্র ‘সম্পদস্বল্পতায়’ ভুগছে। এ কথার পক্ষে সায় দিয়েছেন আরও কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, সীমিত জনবলের কারণে বিআইসের পক্ষে এনটিটি তালিকা হালনাগাদ করা বা ভুল তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাবেক বিআইএস কর্মকর্তা বোরম্যান বলেন, তালিকাভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই আসলে ‘ফ্রন্ট কোম্পানি’। অর্থাৎ আসল ব্যবসাকে আড়াল করে একটি অন্য প্রতিষ্ঠান দেখানো বা ‘কালো টাকা সাদা দেখানোর মাধ্যম। আর বিআইএসের চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই অন্য ঠিকানায় বা অন্য নামে সরে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৪৬টি কোম্পানি বহু বছর ধরে লোকসানে চলছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ১৩টি কোম্পানি টানা এক দশক কিংবা এর বেশি সময় ধরে মুনাফা করতে পারেনি। এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে—কখনো কখনো দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষেও উঠে আসে।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, এই লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির পুঞ্জীভূত লোকসান প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি কোম্পানিগুলোর হিসাব এখনো অজানা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি, সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করে না। ফলে তাদের স্থান হয়েছে ‘জাঙ্ক’ বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

নিয়ম অনুযায়ী, জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কেনাবেচায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই সতর্কতা খুব একটা দেখা যায় না।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের দেনা সম্পদের চেয়ে বেশি, তাদের বাজারে রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপজ্জনক। এমন কোম্পানিগুলোকে হয় তালিকা থেকে বাদ দেওয়া (ডিলিস্টিং) উচিত, নয়তো লিকুইডেশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের অন্তত কিছু অর্থ ফেরানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ডিলিস্টিং মানে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারকে সাধারণ বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া। তখন শেয়ারহোল্ডাররা কাগজে শেয়ারধারী থাকলেও তা বেচাকেনা করা যায় কেবল ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) বাজারে; যেখানে লেনদেন সীমিত হলেও ঝুঁকি অনেক বেশি।

ডিএসইর নিয়মে বলা আছে, কোনো কোম্পানি টানা তিন বছর এজিএম না করলে, পাঁচ বছর লভ্যাংশ না দিলে কিংবা তিন বছর উৎপাদন বন্ধ রাখলে সেটি ডিলিস্ট করা যেতে পারে। তবু এই প্রক্রিয়া খুব কমই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে ডিএসইর তালিকাভুক্ত এসব দুর্বল কোম্পানির মধ্যে ১৩টি ১০ বছর কিংবা এর বেশি সময় ধরে লোকসানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, পিপলস লিজিং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, জিল বাংলা সুগার মিলস, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, জুট স্পিনার্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি সার্ভিসেস ও অ্যাটলাস বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, কেয়া কসমেটিকস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আরএসআরএম স্টিল, সুরিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৭টি কোম্পানির জমা লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তো এখন কোনো আর্থিক তথ্যই প্রকাশ করে না। অ্যাটলাস বাংলাদেশ ২০২১ সালের পর থেকে ডিএসই ওয়েবসাইটে তাদের যোগাযোগের তথ্য আপডেট করেনি। একই অবস্থা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও।

সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্টক মার্কেটে শত শত কোম্পানি থাকলেও আসলে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি খুবই কম। বিনিয়োগযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাব এতটাই প্রকট যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিকল্প পাচ্ছে না।’

আসিফ খান আরও বলেন, ‘যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের আর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে তাদের ডিলিস্ট বা লিকুইডেট করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ফেরত পান।’

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই টক্সিক স্টকগুলো অনেক আগে ডিলিস্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে, খারাপ কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে ফেলে রাখলেই দায়িত্ব শেষ।’

সাইফুল ইসলামের মতে, বিএসইসি ও ডিএসইর এখন উচিত বাজার পরিষ্কার করা এবং দীর্ঘদিনের লোকসানি কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বাজার থেকে বাদ দেওয়া।

যাদের ভবিষ্যৎ নেই, তাদের রেখে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া অন্যায়।

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৪০০ কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগযোগ্যের সংখ্যা খুব কম। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড বা বিমা কোম্পানির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিকল্প সীমিত। গত মে মাসে বিএসইসি সব জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিএসই যদি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, কমিশন অবশ্যই সহযোগিতা করবে। প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ডিএসইর এই ক্ষমতা রয়েছে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডিলিস্ট করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তা ছাড়া ডিএসই এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেট করার আইনি ক্ষমতা পায়নি। আমরা সেই ক্ষমতা যুক্ত করতে আইনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ড মার্কেটে জোর

বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

  • ব্যাংকের বিকল্প উৎস হচ্ছে বন্ড মার্কেট।
  • বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে।
  • আগামী বছরেই বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর পরিকল্পনা।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ বন্ধ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বছরই ব্যাংকের পরিবর্তে শুধু বন্ড মার্কেট থেকেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালু করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন একটি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশও এই চর্চা শুরু করতে চায়। এ জন্যই ব্যাংকের পরিবর্তে বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নির্দেশনায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পদ্ধতি, প্রসার এবং ঝুঁকিসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সরকারও বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ এবং সুপারিশসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেছে বিশেষ এই কমিটি। বৈঠকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। গভর্নর দেশে না থাকায় ভার্চুয়ালি নানা পরামর্শ দিয়েছেন কমিটিকে। তাঁর পরামর্শের আলোকে বন্ড মার্কেটের নীতিমালা, ঝুঁকি, নিরাপত্তা, গ্রাহকের স্বার্থ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গভর্নর দেশে ফিরলে প্রতিবেদন আকারে সুপারিশগুলো জমা দেওয়া হবে। তাঁর কাছে থেকে সংযোজন, সংশোধনী এবং পরামর্শ এলে তা ঠিক করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে এবং নিয়মমাফিক তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে সুপারিশমালা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন নাগাদ বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন শুরু হবে।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্ট করা সম্ভব। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে।

বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট এখনো উন্নত হয়নি জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকারি বন্ড সেগমেন্ট থাকলেও সেখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম, আর শেয়ারবাজার প্রায় নগণ্য। ফলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলো ঝুঁকি ভাগাভাগি না করে শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতে ঋণখেলাপি ও তহবিল অপব্যবহারের ঘটনা ঘটছে, যা দেশের জন্য বড় ট্র্যাজেডি। প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকি ভাগাভাগি করতে হলে মানুষকে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক থেকে শুধু ঋণ নেওয়া এবং পরে তা ভুল খাতে ব্যবহার করা কোনো সমাধান নয়। তাই ক্যাপিটাল মার্কেটে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে হবে যে এখানে ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি লভ্যাংশ বা মুনাফার সম্ভাবনাও আছে।

বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড রিকমেন্ডেশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। সেই প্রতিবেদনে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নের লক্ষ্যেই গঠনমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ , চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাংকগুলোকে নিয়ে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় সেমিনারের কথা বলা হয়েছে। সেই সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ৭ অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে গঠিত কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে।

পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগে সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধি করা হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদে সরকারের বন্ড ইস্যু করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনও চাইলে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও মাসরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ বন্ড মার্কেটে একেবারে সীমিত। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া যায় না বললেই চলে। প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক শিল্পায়ন এবং বড় শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন জরুরি। সে জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন প্রয়োজন। এটি যত দ্রুত প্রসার হবে, তত বেশি লাভ হবে। বর্তমানে সরকার কিছু বন্ড ছাড়ে, সেটা বাড়াতে হবে। বেসরকারি কোম্পানিকে এগিয়ে আসত হবে। আর বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে, সেটা মার্কেটেও রয়েছে। এ জন্য সংস্কার ও নীতিমালা করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে মাত্র ১৬টি করপোরেট বন্ড চালু রয়েছে। আর সুকুক বন্ড রয়েছে ২৩৩টি। সরকারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে আসেনি। সব মিলিয়ে স্টক মার্কেটের বন্ডের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ইক্যুইটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা, সিকিউরিটিজ ২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে সরকারি বন্ড, করপোরেট বন্ড এবং অন্যান্য বন্ড রয়েছে। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সরকার, ব্যাংক বা করপোরেশন। বন্ড কেনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। বন্ডের জন্য ন্যূনতম এক লাখ টাকা জমা রাখতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

  • টিক সাইজ এক পয়সা নির্ধারণ।
  • ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

দাম এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নতুন নিয়মে এই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা ‘টিক সাইজ’ নির্ধারণ করা হয়েছে এক পয়সা, যা ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় ডিএসই। এর আগে গত রোববার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়।

বর্তমানে সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ১০ পয়সা নির্ধারিত রয়েছে। সাম্প্রতিক পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার ৯০ পয়সায় নেমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ার দাম বাড়া ও কমার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ডিএসইর লেনদেনবিধি অনুযায়ী, শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের ধাপ বা টিক সাইজ ১০ পয়সা। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম একবারে ১০ পয়সার কমে ওঠানামা করতে পারে না।

অন্যদিকে সার্কিট ব্রেকার বা দৈনিক মূল্যবৃদ্ধি-পতনের সীমা রয়েছে ১০ শতাংশ। ৯০ পয়সা দামের শেয়ারে ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা। কিন্তু টিক সাইজ যেহেতু ১০ পয়সা, তাই ৯ পয়সা বাড়া বা কমার সুযোগ নেই। ১০ পয়সা বাড়িয়ে শেয়ারদর ১ টাকা বা ১০ পয়সা কমিয়ে ৮০ পয়সা করা সম্ভব নয়; তাহলে সার্কিট লিমিট ভাঙবে, নিয়মের লঙ্ঘন হবে। ফলে এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম না পারছে বাড়তে, না পারছে কমতে। লেনদেন কার্যত ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর ডিএসই থেকে এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে টিক সাইজে পরিবর্তন আনা হলো।

ডিএসই জানায়, নতুন টিক সাইজ কার্যকর হলে দামের সূক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব হবে, মূল্য নির্ধারণ আরও বাজারবান্ধব হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজার কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আসবে।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারদর এক টাকার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে এবং এরই মধ্যেই দুটি কোম্পানির দাম এক টাকার নিচে নেমে গেছে। পুরোনো ১০ পয়সা টিক সাইজের কারণে এই শেয়ারগুলো সার্কিট ব্রেকারের সীমায় আটকে ছিল, ফলে বাজারে স্বাভাবিকভাবে দরপতন বা উত্থান সম্ভব হচ্ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে ডিএসই অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯-এর ১৮ নম্বর প্রবিধান অনুযায়ী নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৯, ৮৮, ৮৭, ৮৬, ৮৫ পয়সা ইত্যাদি সূক্ষ্ম দামে অর্ডার দিতে পারবেন। এতে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবধান কমবে, তারল্য বাড়বে এবং লেনদেন ব্যয়ও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্কের ভয়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির হিড়িক, বসন্তের জন্য এখনই গুদাম ভরছে ব্যবসায়ীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হংকংয়ের কোয়াই সিং কনটেইনার টার্মিনালে একটি কার্গো জাহাজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
হংকংয়ের কোয়াই সিং কনটেইনার টার্মিনালে একটি কার্গো জাহাজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

আসন্ন শুল্কের ধাক্কা এড়াতে কিছু মার্কিন ব্যবসায়ী আগেভাগেই চীন থেকে পণ্য আমদানি করছেন। জানা গেছে, এই আমদানিকারকেরা খুচরা বিক্রেতাদের জন্য শিশুদের স্টলারসহ বসন্ত মৌসুমের (আগামী বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে) নানা পণ্য চীন থেকে আগাম দেশে এনে নিজেদের গুদামে জমিয়ে রাখছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হতে পারে চীনের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ১০০ শতাংশ শুল্ক। তবে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলোচনায় সেই শুল্ক আরোপের হুমকি আপাতত কেটে গেছে বলে জানা গেছে।

তবু আমদানিকারকেরা আশঙ্কা করছেন, নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুল্ক কার্যকর হলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই তাঁরা ঝুঁকি না নিয়ে আগেভাগেই চীনা পণ্য আমদানি শুরু করেছেন। কিন্তু আগাম এসব পণ্য এনে গুদামজাত করায় খরচ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেক আমদানিকারক।

শিশুদের স্ট্রলার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অস্টলেন বেবির প্রধান নির্বাহী লেসলি স্টিবা বলেন, ‘আমরা বসন্ত মৌসুমের পণ্য আগেভাগেই আমদানি করছি।’ তিনি জানান, ২০২৬ সালের বসন্ত মৌসুমের জন্য (মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস) তিনি গতবারের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি অর্ডার দিয়েছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে তাঁর কোম্পানির মজুত এখন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাড়তি খরচের কারণে নতুন কর্মী নিয়োগ আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফ্রন্ট-লোডিং’ বা আগেভাগে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কবিরতির প্রথম ছয় মাসে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছিল। ফলে আগের তুলনায় জাহাজভাড়া এবং বন্দরের কার্যক্রম বেড়ে যায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে সাময়িক সমঝোতা হওয়ার আগপর্যন্ত ২০২৬ সালের মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসের পণ্য আগেভাগে আমদানির প্রবণতা অব্যাহত ছিল।

স্টিবা জানান, বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প যখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন তাঁর কোম্পানিকে কিছুদিনের জন্য আমদানি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়। কারণ, পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় অর্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলের এক খেলনা প্রস্তুতকারক জানান, অনেকে এখন শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের ১ তারিখে যা হওয়ার হবে। সবাই এখন ধরে নিচ্ছে, হয়তো শুল্ক বৃদ্ধির সময় আরও তিন মাস পিছিয়ে যাবে।’

এদিকে, গতকাল রোববার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, নভেম্বরের ১০ তারিখে শুল্কবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও তা আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

চীনের রপ্তানিকারক দেং জিনলিং জানান, তাঁর কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে থার্মস ফ্লাস্ক রপ্তানি করে এবং এখনো তাদের চালান স্বাভাবিক আছে। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পণ্য ইতিমধ্যে পাঠানো হয়ে গেছে। কেবল ২০ শতাংশ পণ্য রপ্তানির অপেক্ষায় আছে।’

তবে সব মার্কিন প্রতিষ্ঠান আগেভাগে আমদানি করছে না। ট্রাম্পোলিন আমদানিকারক মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্প্রিটেইলের চিফ মার্চেন্ডাইজিং অফিসার ওয়েন কার বলেন, ‘শুল্ক সত্যিই কার্যকর হয় কি না, তা দেখার জন্য আমরা এখনো অপেক্ষা করছি।’

প্রতিবছর বসন্তকালীন পণ্য; যেমন হালকা পোশাক ও ইস্টারের উপহার সাধারণত বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগেই এর পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বন্দর লং বিচের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা নোয়েল হ্যাসেগাবা বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত স্পষ্ট সমাধান না আসে, তত দিন আমরা আগেভাগে আমদানির প্রবণতা দেখতে পাব। এতে চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পণ্য বন্দরে জমা পড়েছে।’

জনপ্রিয় খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হাসব্রো ও ম্যাটেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুচরা বিক্রেতারা এখন সরাসরি চীন থেকে পণ্য না এনে দেশীয় সরবরাহকারীদের থেকে কিনছেন। এতে তাঁদের শুল্কের ঝুঁকি কমেছে এবং তাঁরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনে রাখতে পারছেন।

ইস্টার সানডে ও বড়দিন উপলক্ষে চীন থেকে বিশেষ ধরনের পণ্য আমদানি করে হেই বাডি হেই প্যাল নামের একটি মার্কিন কোম্পানি। তাদের সহপ্রতিষ্ঠাতা কার্টিস গিল জানান, তাঁদের বসন্তকালীন ৫০ শতাংশ পণ্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের একটি গুদামে রাখা হয়েছে।

কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি, ফুল ও সাজসজ্জার সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বালসাম হিলের প্রধান নির্বাহী ম্যাক হারম্যান জানান, তাঁরাও বসন্তের জন্য অপেক্ষমাণ অর্ডারগুলো সম্প্রতি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এবার আগের তুলনায় সীমিত পরিসরে অর্ডার দিয়েছি। তবে দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

‘শিক্ষক’ পেশা দিয়ে নিজের পাসপোর্ট বানান পাসপোর্টের শাহিনুর, চাকরিচ্যুতির আগেই চান অব্যাহতি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত