Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াল ইইউ, ‘সবচেয়ে বড়’ চুক্তি স্বাক্ষর

অনলাইন ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উরসুলা ভন ডার লেয়ন। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উরসুলা ভন ডার লেয়ন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে এক নতুন বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার স্কটল্যান্ডে ট্রাম্পের গলফ রিসোর্টে দুই পক্ষের বৈঠকের পর এই সমঝোতায় পৌঁছায় উভয় পক্ষ। এতে ইইউ থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র, যা ট্রাম্পের আগে ঘোষিত ৩০ শতাংশের অর্ধেক।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের মধ্যে সম্ভাব্য এক বড় বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এই দুই পক্ষের মধ্যেই হয়।

চুক্তির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন। প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনার পর তাঁরা সমঝোতায় পৌঁছান। এই চুক্তিকে ‘সবচেয়ে বড় চুক্তি’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং মার্কিন জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বিপুল পরিমাণে।

ট্রাম্প আরও জানান, গত সপ্তাহে জাপানের সঙ্গে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির চেয়ে এটি বড় এবং এতে ট্রান্স-আটলান্টিক অর্থাৎ, আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ের এই দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও শক্ত হবে।

এদিকে, এই চুক্তির প্রসঙ্গে ভন ডার লেয়ন বলেন, ‘ট্রাম্প কঠিন মেজাজের আলোচক। ১৫ শতাংশ শুল্ক মোটামুটি সব পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব সবচেয়ে ভালো চুক্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা, যা স্থিতিশীলতা ও অনুমানযোগ্যতা নিয়ে আসবে।’

তবে এই চুক্তি অনেকটাই জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করা আগের কাঠামোগত চুক্তির মতো। তবে অনেক বিষয় এখনো খোলাসা হয়নি। বিশেষ করে মদ ও স্পিরিটসের ওপর শুল্ক এখনো আলোচনার মধ্যেই রয়েছে। চুক্তির আওতায় ইইউ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি ও ‘শত শত বিলিয়ন ডলারের’ অস্ত্র কিনবে বলে জানানো হয়েছে। এতে ইউরোপের বেশ কিছু কোম্পানির জন্য সুফল বয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেমন—এয়ারবাস, মার্সিডিজ-বেঞ্জ ও নভো নরডিস্ক।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এতে জার্মানির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি ও গাড়ি শিল্প বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এর আগে জার্মান গাড়ি নির্মাতা বিএমডব্লিউ, ফক্সওয়াগন ও মার্সিডিজকে সাড়ে ২৭ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে ইউরোপের অনেকে ১৫ শতাংশ শুল্ককেও বেশি মনে করছেন, কারণ তারা শুল্কমুক্ত বাণিজ্য প্রত্যাশা করছিল।

ইইউ পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির প্রধান বার্ন্ড লাঙ্গে বলেন, শুল্কহার ভারসাম্যহীন এবং ইইউ যেসব বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রে করতে যাচ্ছে, তা ইউরোপের নিজের খরচেই করতে হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, ইইউ যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনিয়োগ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ট্রাম্প এই শুল্ক আবার বাড়াতে পারেন।

চুক্তি অনুযায়ী কিছু পণ্য এই ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়বে না। যেমন—বিমান ও বিমান যন্ত্রাংশ, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে এখনো ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। ভন ডার লেয়েন বলেন, এই তালিকায় আরও পণ্য যুক্ত করতে উভয় পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে।

এই চুক্তিকে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বড় কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে। গত কিছুদিনে তারা জাপান, ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গেও একই ধরনের কাঠামোগত চুক্তি করেছে। এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইইউ—এর অর্থনীতি জাপানের পাঁচ গুণ বড়, তাই মার্কিন কৃষক, জেলে, খামার মালিক ও উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বিশাল সুযোগ।’

২০২৪ সালে ইইউ—এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৩৫ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, ইইউ গঠিতই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকানোর জন্য। তবে ইউরোপ বলছে, তারা সেবাবাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বড় সুবিধা দেয়। বিশ্লেষক কার্সটেন নিকেল সতর্ক করে বলেন, এটি এখনো একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সমঝোতা মাত্র, পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি নয়। ফলে ভবিষ্যতে ভুল ব্যাখ্যার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত