Ajker Patrika

ট্রাম্পের হুমকিতে উল্টো রাশিয়ার শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১০: ৫৮
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সিএনএন
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সিএনএন

ওভাল অফিসে বসে গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে ইউরোপীয় সরকারগুলোর অর্থায়নে নতুন মার্কিন অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন। এই শুল্ক কার্যকর হলে রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিলে বড় ধরনের আঘাত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর শেয়ারবাজারে সূচক উল্টো ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছিল রাশিয়া। সে তুলনায় এটি তাদের কাছে তুলনামূলক স্বস্তিদায়কই মনে হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার আগে সোমবারের ট্যাবলয়েড ‘মস্কোভস্কি কমসোমোলস’ সতর্ক করে বলেছিল, রাশিয়া ও আমেরিকা ইউক্রেন নিয়ে নতুন করে সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে। পত্রিকাটি আরও লিখেছিল, ‘ট্রাম্পের সোমবারের চমক আমাদের দেশের জন্য সুখকর হবে না।’

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি নিঃসন্দেহে রাশিয়ার জন্য ‘সুখকর’ নয়, তবে রাশিয়া স্বস্তিতে আছে। এর একটি বড় কারণ হলো, রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্কগুলো এখন থেকে ৫০ দিন পর কার্যকর হবে। এটি মস্কোকে পাল্টা প্রস্তাব তৈরি করতে এবং নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া আরও বিলম্বিত করার জন্য যথেষ্ট সময় দেবে।

তবু, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা রাশিয়ার প্রতি একটি কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এটি ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে অনীহা নিয়ে তাঁর হতাশারও প্রতিফলন।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করাকে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার ঘোষণা করেছিলেন। কয়েক মাস ধরে মস্কোর প্রতিক্রিয়া ছিল: ‘হ্যাঁ, তবে...।’

গত মার্চে রাশিয়া যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ’। তবে, তারা প্রথমে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা এবং কিয়েভের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল।

মস্কো বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তারা শান্তি চায়, তবে, যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ প্রথমে সমাধান করতে হবে। ক্রেমলিন এই কারণগুলোকে ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা যেভাবে দেখে তার থেকে ভিন্নভাবে দেখে। তারা যুক্তি দেয়, যুদ্ধ রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বহিঃশক্তির হুমকির ফল। কিয়েভ, ন্যাটো, ‘সম্মিলিত পশ্চিম’ থেকে আসছে এই হুমকি।

বেশ কিছুদিন ধরে, ‘হ্যাঁ, তবে...’ কৌশল মস্কোকে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করতে এবং ইউক্রেন নিয়ে একটি শান্তি চুক্তির জন্য ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মূল আলোচনার চেয়ে রাশিয়া ও আমেরিকার শর্তগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

ক্রেমলিনের সমালোচকেরা ওই সময়ই সতর্ক করেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তবে...’ কৌশলে রাশিয়া সময়ক্ষেপণ করছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করেছিলেন, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চুক্তি করতে রাজি করানোর একটি উপায় খুঁজে পাবেন।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমন কোনো চুক্তি করতে তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছেন না। ক্রেমলিন মনে করে, যুদ্ধক্ষেত্রে তারা এগিয়ে রয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলছে, তারা শান্তি চায়, তবে তাদের শর্তে।

এই শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো, ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় এটা স্পষ্ট যে, এটি হচ্ছে না। তিনি ইউক্রেনে প্যাট্রিয়টের মতো উন্নত অস্ত্র পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘খুশি নন’। অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়াও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রতি মোহ হারাচ্ছে। গতকাল সোমবার মস্কোভস্কি কমসোমোলস লিখেছে: ‘(ট্রাম্পের) স্পষ্টতই নিজেকে বড় ভাবার বিভ্রম আছে এবং তিনি দাম্ভিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত