Ajker Patrika

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ, চাপে পড়ে বেসরকারি ঋণে ভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ১৪: ৪১
Thumbnail image

নানা উদ্যোগের পরও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ভাটা পড়েছে। প্রায় আড়াই বছর পরে বেসরকারি ঋণ এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমেছে। গত জানুয়ারি মাসে এই খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ কম।

তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার চাপ পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর। কেননা, সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বরের ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে জানুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু ওই সময়ের কোনো মাসেই বেসরকারি ঋণের এই লক্ষ্য অর্জন হয়নি। ঋণ বিতরণের পরিস্থিতি বাস্তবায়নের চিত্র বিশ্লেষণ করে একই অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। কিন্তু জানুয়ারি মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে এক অঙ্কের ঘরে নেমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। অপর দিকে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে নিট ঋণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা পরের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থের সংকট সত্ত্বেও সরকার একের পর এক মেগা প্রকল্প নিচ্ছে। আবার কোনো দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে যেসব উদ্যোগের মাধ্যমে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, সেই ধরনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে। সরকার বাধ্য হয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, যা ব্যাংকগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৌশলে বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাবে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক চিত্র দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমানো উচিত। নয়তো সামনে আরও খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কখনোই তা ১০ শতাংশের নিচে নামেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগতভাবে সরকারের হয়ে কাজ করে। দেশের স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারকে পরামর্শ দেয়। সম্প্রতি সরকারকে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেন বাজারে টাকার প্রবাহ কমে আসে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত