Ajker Patrika

ফাঁকা ব্যালেন্স শিটেই বেক্সিমকো-এস আলমকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
সালমান এফ রহমান এবং এস আলম। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই ব্যালেন্স শিটনির্ভর। ব্যাংকগুলো ব্যালেন্স শিটনির্ভর অর্থায়নে মগ্ন। এই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লাঞ্চ বা ডিনারে বসে। বেক্সিমকো ও এস আলম এখন বেতন দিতে পারছে না। অথচ ব্যালেন্স শিট দেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো, সম্পদ দেখা হয়নি। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শিট যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, সবই ফাঁকা। এভাবে ঋণ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?’

রাজধানীর পল্টনে গতকাল শনিবার ইআরএফ কার্যালয়ে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে অভ্যন্তরীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) এবং বিডব্লিউজিইডি যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে।

ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। অথচ এ খাতে ব্যাংকের ঋণ দিতে আগ্রহ নেই। তাই নতুন নীতিতে এ খাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জায়গা ও সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা সরকার করে দেবে।

ফাওজুল কবির বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খেলাপি কত? বেশির ভাগই অন্য খাতের। অথচ ব্যাংকগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঋণ দিতে এগিয়ে আসেনি। তারা ব্যালেন্স শিটনির্ভর অর্থায়নে মগ্ন। বেক্সিমকো এবং এস আলম এখন কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। তাদের ব্যালেন্স শিট ফাঁকা। অথচ তাদের খেলাপি ঋণই বেশি।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সরকার এসব সমস্যার সমাধান করতে চায়নি। এমনকি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার হোক, সেটাও চায়নি। এ কারণেই অর্থায়নে সমস্যা রয়ে গেছে। এ সময় তিনি ব্যাংকগুলোকে সম্পদ বিবেচনা করে ঋণ অনুমোদনের পরামর্শ দেন।

ফাওজুল কবির খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকার রেল-সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। এ জন্য শিগগির একটি নীতিমালা করা হবে। তিনি বলেন, ইকোনমিক জোন নির্মাণের নামে সাধারণ মানুষের অনেক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে; কিন্তু সেখানে কিছুই হয়নি। ফলে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য যেসব সম্মতিপত্র দিয়েছিল, সেগুলো এখন আর প্রযোজ্য হবে না।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার অভাব। এ জন্য আমরা সব উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য মন্ত্রী-সচিবদের আত্মীয় হওয়া লাগবে না, চেনা লাগবে না।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন সহজ করতে বিশ্বব্যাপী ১৮ ধরনের ঋণ ইনস্ট্রুমেন্ট অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশে শুধু নন-কনসেশনাল ঋণ দেওয়া হয়। ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ সুগম করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত