Ajker Patrika

ছাঁটাই বাজেটে রিজার্ভ তহবিল

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
ছাঁটাই বাজেটে রিজার্ভ তহবিল

কাটছাঁটের ছায়ায় দাঁড়িয়েও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পেতে যাচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ। নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই বাজেট প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এবার স্থানীয় সরকারকে দিয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। সংকটময় সময়ে মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে এই বরাদ্দ কার্যত একধরনের নিরাপত্তা বলয় বা অর্থনৈতিক বাফার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা থেকে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের হাতে থাকবে তাৎক্ষণিক সহায়তার সুযোগ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক পরিকল্পনার বাইরে একটি নমনীয় ফান্ড রাখার কৌশল নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যেটি থেকে সংশোধিত প্রকল্পের ঘাটতি পূরণ এবং নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণে অর্থছাড় দেওয়া যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই অর্থ রাজনৈতিক প্রকল্পে ব্যয় হবে না। মূল এডিপির বাইরের সম্ভাব্য প্রকল্প এবং সংশোধিত প্রকল্পগুলোর জন্যই থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মূল এডিপি এবং নিজস্ব সংস্থাসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৭১টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে থোক বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৯১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে দুটি পৃথক খাতে—‘উন্নয়ন সহায়তা’ ও ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ হিসেবে।

এই বরাদ্দের মধ্যে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে রয়েছে ১০ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। আর ‘উন্নয়ন সহায়তা’য় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা, যার একটি বড় অংশ ব্যয় হবে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে।

বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কারণ, প্রকল্প ব্যয়ের সময় অনেক অনিশ্চয়তা দেখা যায়; যেটি নিরসনে এই ধারা সহায়ক হতে পারে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি

এই খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো ও সেবা উন্নয়ন। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৮৭০, ৭৭০, ৫৬০, ৪৮০ ও ৪২০ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৫৩০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দের মধ্যে সরাসরি উন্নয়ন ৩৩০ কোটি, স্থানীয় সরকার উন্নয়নে ১০০ কোটি ও উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই ধরনের থোক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা ছিল ৬ হাজার ৩২৮ কোটি এবং উন্নয়ন সহায়তা ছিল ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকারের জন্য তখনো ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও বিভিন্ন স্তরে এবার তা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষাপটে থোক বরাদ্দ এবার শুধু তহবিল নয়, বরং নীতিগত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচিত। আর সে জন্যই স্থানীয় সরকার এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মতো প্রধান অবকাঠামোগত খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৩৬ হাজার ৯৮ কোটি ও ৩২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।

এই প্রসঙ্গে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কারণ, প্রকল্প ব্যয়ের সময় অনেক অনিশ্চয়তা দেখা যায়; যেটি নিরসনে এই ধারা সহায়ক হতে পারে।’

মূলত, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার বিবেচনায় এই থোক বরাদ্দ সরকারের জন্য একটি নমনীয়তা তৈরির পথ খুলে দিয়েছে, যা একই সঙ্গে প্রশাসনিক দক্ষতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার পরীক্ষাও হতে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিসিএসে প্রাপ্ত নম্বর দেখতে পারবেন প্রার্থী

ছুটিতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন, নতুন দায়িত্বে আসছেন সিয়াম

আসছে নতুন নোট: ৫ টাকায় সাঈদ-মুগ্ধ, ১০০ টাকায় বাঘ

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজির বিতর্কিত আদেশে তদন্তে প্রসিকিউটরেরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত