Ajker Patrika

এলসি খুলতে না পারায় ভোগ্যপণ্য আমদানি কমছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
এলসি খুলতে না পারায় ভোগ্যপণ্য আমদানি কমছে

ডলার-সংকটে নড়বড়ে দশায় পড়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি। ডলার-খরায় ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং নিষ্পত্তি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারায় ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। আর নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এলসি খোলা কমেছে ৯০ কোটি ৫ লাখ ডলারের। এলসি খোলার হার কমেছে ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
 এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ৬০৩ কোটি ২৩ লাখ ডলারের। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১২১ কোটি ৫ লাখ ডলারের এলসি কম নিষ্পত্তি হয়েছে। শতকরা হিসাবে এলসি নিষ্পত্তির হার হ্রাস পেয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। 

চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রইসের কর্ণধার ইলিয়াস উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডলার-সংকটের চাপ সামলাতে বিলাসী পণ্যের ওপর কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হলেও তা একটা পর্যায়ে নিত্যপণ্যের ওপরও পড়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় আমদানিকারকেরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডলার সরবরাহ করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। তবে এত দামে ডলার কিনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা সত্ত্বেও আমদানির জন্য এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে। 

অফিসে খাবার সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মিনা রানী রায় নামের এক শ্রমজীবী নারী। তিনি বলেন, ‘ডলারের দামের অজুহাতে ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে বেশি দাম দিতে গিয়ে বেশ ভোগান্তিতেই আছি আমরা।

ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনগুলো আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে আমাদের জন্য।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে ২৫ কোটি ২৬ লাখ ডলারের এলসি কম খোলা হয়েছে। একইভাবে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ২ হাজার ৮২ কোটি ১৪ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৪৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের এলসি কম নিষ্পত্তি হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৪৬টি কোম্পানি বহু বছর ধরে লোকসানে চলছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ১৩টি কোম্পানি টানা এক দশক কিংবা এর বেশি সময় ধরে মুনাফা করতে পারেনি। এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে—কখনো কখনো দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষেও উঠে আসে।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, এই লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির পুঞ্জীভূত লোকসান প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি কোম্পানিগুলোর হিসাব এখনো অজানা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি, সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করে না। ফলে তাদের স্থান হয়েছে ‘জাঙ্ক’ বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

নিয়ম অনুযায়ী, জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কেনাবেচায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই সতর্কতা খুব একটা দেখা যায় না।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের দেনা সম্পদের চেয়ে বেশি, তাদের বাজারে রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপজ্জনক। এমন কোম্পানিগুলোকে হয় তালিকা থেকে বাদ দেওয়া (ডিলিস্টিং) উচিত, নয়তো লিকুইডেশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের অন্তত কিছু অর্থ ফেরানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ডিলিস্টিং মানে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারকে সাধারণ বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া। তখন শেয়ারহোল্ডাররা কাগজে শেয়ারধারী থাকলেও তা বেচাকেনা করা যায় কেবল ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) বাজারে; যেখানে লেনদেন সীমিত হলেও ঝুঁকি অনেক বেশি।

ডিএসইর নিয়মে বলা আছে, কোনো কোম্পানি টানা তিন বছর এজিএম না করলে, পাঁচ বছর লভ্যাংশ না দিলে কিংবা তিন বছর উৎপাদন বন্ধ রাখলে সেটি ডিলিস্ট করা যেতে পারে। তবু এই প্রক্রিয়া খুব কমই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে ডিএসইর তালিকাভুক্ত এসব দুর্বল কোম্পানির মধ্যে ১৩টি ১০ বছর কিংবা এর বেশি সময় ধরে লোকসানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, পিপলস লিজিং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, জিল বাংলা সুগার মিলস, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, জুট স্পিনার্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি সার্ভিসেস ও অ্যাটলাস বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, কেয়া কসমেটিকস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আরএসআরএম স্টিল, সুরিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৭টি কোম্পানির জমা লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তো এখন কোনো আর্থিক তথ্যই প্রকাশ করে না। অ্যাটলাস বাংলাদেশ ২০২১ সালের পর থেকে ডিএসই ওয়েবসাইটে তাদের যোগাযোগের তথ্য আপডেট করেনি। একই অবস্থা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও।

সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্টক মার্কেটে শত শত কোম্পানি থাকলেও আসলে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি খুবই কম। বিনিয়োগযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাব এতটাই প্রকট যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিকল্প পাচ্ছে না।’

আসিফ খান আরও বলেন, ‘যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের আর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে তাদের ডিলিস্ট বা লিকুইডেট করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ফেরত পান।’

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই টক্সিক স্টকগুলো অনেক আগে ডিলিস্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে, খারাপ কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে ফেলে রাখলেই দায়িত্ব শেষ।’

সাইফুল ইসলামের মতে, বিএসইসি ও ডিএসইর এখন উচিত বাজার পরিষ্কার করা এবং দীর্ঘদিনের লোকসানি কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বাজার থেকে বাদ দেওয়া।

যাদের ভবিষ্যৎ নেই, তাদের রেখে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া অন্যায়।

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৪০০ কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগযোগ্যের সংখ্যা খুব কম। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড বা বিমা কোম্পানির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিকল্প সীমিত। গত মে মাসে বিএসইসি সব জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিএসই যদি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, কমিশন অবশ্যই সহযোগিতা করবে। প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ডিএসইর এই ক্ষমতা রয়েছে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডিলিস্ট করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তা ছাড়া ডিএসই এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেট করার আইনি ক্ষমতা পায়নি। আমরা সেই ক্ষমতা যুক্ত করতে আইনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ড মার্কেটে জোর

বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

  • ব্যাংকের বিকল্প উৎস হচ্ছে বন্ড মার্কেট।
  • বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে।
  • আগামী বছরেই বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর পরিকল্পনা।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৩
বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ বন্ধ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বছরই ব্যাংকের পরিবর্তে শুধু বন্ড মার্কেট থেকেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালু করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন একটি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশও এই চর্চা শুরু করতে চায়। এ জন্যই ব্যাংকের পরিবর্তে বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নির্দেশনায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পদ্ধতি, প্রসার এবং ঝুঁকিসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সরকারও বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ এবং সুপারিশসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেছে বিশেষ এই কমিটি। বৈঠকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। গভর্নর দেশে না থাকায় ভার্চুয়ালি নানা পরামর্শ দিয়েছেন কমিটিকে। তাঁর পরামর্শের আলোকে বন্ড মার্কেটের নীতিমালা, ঝুঁকি, নিরাপত্তা, গ্রাহকের স্বার্থ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গভর্নর দেশে ফিরলে প্রতিবেদন আকারে সুপারিশগুলো জমা দেওয়া হবে। তাঁর কাছে থেকে সংযোজন, সংশোধনী এবং পরামর্শ এলে তা ঠিক করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে এবং নিয়মমাফিক তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে সুপারিশমালা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন নাগাদ বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন শুরু হবে।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্ট করা সম্ভব। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে।

বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট এখনো উন্নত হয়নি জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকারি বন্ড সেগমেন্ট থাকলেও সেখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম, আর শেয়ারবাজার প্রায় নগণ্য। ফলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলো ঝুঁকি ভাগাভাগি না করে শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতে ঋণখেলাপি ও তহবিল অপব্যবহারের ঘটনা ঘটছে, যা দেশের জন্য বড় ট্র্যাজেডি। প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকি ভাগাভাগি করতে হলে মানুষকে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক থেকে শুধু ঋণ নেওয়া এবং পরে তা ভুল খাতে ব্যবহার করা কোনো সমাধান নয়। তাই ক্যাপিটাল মার্কেটে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে হবে যে এখানে ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি লভ্যাংশ বা মুনাফার সম্ভাবনাও আছে।

বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড রিকমেন্ডেশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। সেই প্রতিবেদনে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নের লক্ষ্যেই গঠনমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ , চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাংকগুলোকে নিয়ে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় সেমিনারের কথা বলা হয়েছে। সেই সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ৭ অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে গঠিত কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে।

পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগে সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধি করা হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদে সরকারের বন্ড ইস্যু করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনও চাইলে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও মাসরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ বন্ড মার্কেটে একেবারে সীমিত। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া যায় না বললেই চলে। প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক শিল্পায়ন এবং বড় শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন জরুরি। সে জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন প্রয়োজন। এটি যত দ্রুত প্রসার হবে, তত বেশি লাভ হবে। বর্তমানে সরকার কিছু বন্ড ছাড়ে, সেটা বাড়াতে হবে। বেসরকারি কোম্পানিকে এগিয়ে আসত হবে। আর বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে, সেটা মার্কেটেও রয়েছে। এ জন্য সংস্কার ও নীতিমালা করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে মাত্র ১৬টি করপোরেট বন্ড চালু রয়েছে। আর সুকুক বন্ড রয়েছে ২৩৩টি। সরকারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে আসেনি। সব মিলিয়ে স্টক মার্কেটের বন্ডের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ইক্যুইটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা, সিকিউরিটিজ ২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে সরকারি বন্ড, করপোরেট বন্ড এবং অন্যান্য বন্ড রয়েছে। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সরকার, ব্যাংক বা করপোরেশন। বন্ড কেনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। বন্ডের জন্য ন্যূনতম এক লাখ টাকা জমা রাখতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

  • টিক সাইজ এক পয়সা নির্ধারণ।
  • ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

দাম এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নতুন নিয়মে এই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা ‘টিক সাইজ’ নির্ধারণ করা হয়েছে এক পয়সা, যা ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় ডিএসই। এর আগে গত রোববার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়।

বর্তমানে সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ১০ পয়সা নির্ধারিত রয়েছে। সাম্প্রতিক পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার ৯০ পয়সায় নেমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ার দাম বাড়া ও কমার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ডিএসইর লেনদেনবিধি অনুযায়ী, শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের ধাপ বা টিক সাইজ ১০ পয়সা। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম একবারে ১০ পয়সার কমে ওঠানামা করতে পারে না।

অন্যদিকে সার্কিট ব্রেকার বা দৈনিক মূল্যবৃদ্ধি-পতনের সীমা রয়েছে ১০ শতাংশ। ৯০ পয়সা দামের শেয়ারে ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা। কিন্তু টিক সাইজ যেহেতু ১০ পয়সা, তাই ৯ পয়সা বাড়া বা কমার সুযোগ নেই। ১০ পয়সা বাড়িয়ে শেয়ারদর ১ টাকা বা ১০ পয়সা কমিয়ে ৮০ পয়সা করা সম্ভব নয়; তাহলে সার্কিট লিমিট ভাঙবে, নিয়মের লঙ্ঘন হবে। ফলে এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম না পারছে বাড়তে, না পারছে কমতে। লেনদেন কার্যত ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর ডিএসই থেকে এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে টিক সাইজে পরিবর্তন আনা হলো।

ডিএসই জানায়, নতুন টিক সাইজ কার্যকর হলে দামের সূক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব হবে, মূল্য নির্ধারণ আরও বাজারবান্ধব হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজার কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আসবে।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারদর এক টাকার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে এবং এরই মধ্যেই দুটি কোম্পানির দাম এক টাকার নিচে নেমে গেছে। পুরোনো ১০ পয়সা টিক সাইজের কারণে এই শেয়ারগুলো সার্কিট ব্রেকারের সীমায় আটকে ছিল, ফলে বাজারে স্বাভাবিকভাবে দরপতন বা উত্থান সম্ভব হচ্ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে ডিএসই অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯-এর ১৮ নম্বর প্রবিধান অনুযায়ী নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৯, ৮৮, ৮৭, ৮৬, ৮৫ পয়সা ইত্যাদি সূক্ষ্ম দামে অর্ডার দিতে পারবেন। এতে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবধান কমবে, তারল্য বাড়বে এবং লেনদেন ব্যয়ও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্কের ভয়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির হিড়িক, বসন্তের জন্য এখনই গুদাম ভরছে ব্যবসায়ীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হংকংয়ের কোয়াই সিং কনটেইনার টার্মিনালে একটি কার্গো জাহাজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
হংকংয়ের কোয়াই সিং কনটেইনার টার্মিনালে একটি কার্গো জাহাজ। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

আসন্ন শুল্কের ধাক্কা এড়াতে কিছু মার্কিন ব্যবসায়ী আগেভাগেই চীন থেকে পণ্য আমদানি করছেন। জানা গেছে, এই আমদানিকারকেরা খুচরা বিক্রেতাদের জন্য শিশুদের স্টলারসহ বসন্ত মৌসুমের (আগামী বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে) নানা পণ্য চীন থেকে আগাম দেশে এনে নিজেদের গুদামে জমিয়ে রাখছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হতে পারে চীনের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ১০০ শতাংশ শুল্ক। তবে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলোচনায় সেই শুল্ক আরোপের হুমকি আপাতত কেটে গেছে বলে জানা গেছে।

তবু আমদানিকারকেরা আশঙ্কা করছেন, নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুল্ক কার্যকর হলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই তাঁরা ঝুঁকি না নিয়ে আগেভাগেই চীনা পণ্য আমদানি শুরু করেছেন। কিন্তু আগাম এসব পণ্য এনে গুদামজাত করায় খরচ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেক আমদানিকারক।

শিশুদের স্ট্রলার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অস্টলেন বেবির প্রধান নির্বাহী লেসলি স্টিবা বলেন, ‘আমরা বসন্ত মৌসুমের পণ্য আগেভাগেই আমদানি করছি।’ তিনি জানান, ২০২৬ সালের বসন্ত মৌসুমের জন্য (মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস) তিনি গতবারের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি অর্ডার দিয়েছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে তাঁর কোম্পানির মজুত এখন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাড়তি খরচের কারণে নতুন কর্মী নিয়োগ আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফ্রন্ট-লোডিং’ বা আগেভাগে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কবিরতির প্রথম ছয় মাসে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছিল। ফলে আগের তুলনায় জাহাজভাড়া এবং বন্দরের কার্যক্রম বেড়ে যায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে সাময়িক সমঝোতা হওয়ার আগপর্যন্ত ২০২৬ সালের মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসের পণ্য আগেভাগে আমদানির প্রবণতা অব্যাহত ছিল।

স্টিবা জানান, বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প যখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন তাঁর কোম্পানিকে কিছুদিনের জন্য আমদানি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়। কারণ, পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় অর্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলের এক খেলনা প্রস্তুতকারক জানান, অনেকে এখন শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের ১ তারিখে যা হওয়ার হবে। সবাই এখন ধরে নিচ্ছে, হয়তো শুল্ক বৃদ্ধির সময় আরও তিন মাস পিছিয়ে যাবে।’

এদিকে, গতকাল রোববার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, নভেম্বরের ১০ তারিখে শুল্কবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও তা আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

চীনের রপ্তানিকারক দেং জিনলিং জানান, তাঁর কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে থার্মস ফ্লাস্ক রপ্তানি করে এবং এখনো তাদের চালান স্বাভাবিক আছে। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পণ্য ইতিমধ্যে পাঠানো হয়ে গেছে। কেবল ২০ শতাংশ পণ্য রপ্তানির অপেক্ষায় আছে।’

তবে সব মার্কিন প্রতিষ্ঠান আগেভাগে আমদানি করছে না। ট্রাম্পোলিন আমদানিকারক মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্প্রিটেইলের চিফ মার্চেন্ডাইজিং অফিসার ওয়েন কার বলেন, ‘শুল্ক সত্যিই কার্যকর হয় কি না, তা দেখার জন্য আমরা এখনো অপেক্ষা করছি।’

প্রতিবছর বসন্তকালীন পণ্য; যেমন হালকা পোশাক ও ইস্টারের উপহার সাধারণত বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগেই এর পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বন্দর লং বিচের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা নোয়েল হ্যাসেগাবা বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত স্পষ্ট সমাধান না আসে, তত দিন আমরা আগেভাগে আমদানির প্রবণতা দেখতে পাব। এতে চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পণ্য বন্দরে জমা পড়েছে।’

জনপ্রিয় খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হাসব্রো ও ম্যাটেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুচরা বিক্রেতারা এখন সরাসরি চীন থেকে পণ্য না এনে দেশীয় সরবরাহকারীদের থেকে কিনছেন। এতে তাঁদের শুল্কের ঝুঁকি কমেছে এবং তাঁরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনে রাখতে পারছেন।

ইস্টার সানডে ও বড়দিন উপলক্ষে চীন থেকে বিশেষ ধরনের পণ্য আমদানি করে হেই বাডি হেই প্যাল নামের একটি মার্কিন কোম্পানি। তাদের সহপ্রতিষ্ঠাতা কার্টিস গিল জানান, তাঁদের বসন্তকালীন ৫০ শতাংশ পণ্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের একটি গুদামে রাখা হয়েছে।

কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি, ফুল ও সাজসজ্জার সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বালসাম হিলের প্রধান নির্বাহী ম্যাক হারম্যান জানান, তাঁরাও বসন্তের জন্য অপেক্ষমাণ অর্ডারগুলো সম্প্রতি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এবার আগের তুলনায় সীমিত পরিসরে অর্ডার দিয়েছি। তবে দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত