রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ঈদ বাণিজ্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য যেমন একটি অপরিহার্য অংশ, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ঈদের আগের বাজারে বাণিজ্য যেমন তুঙ্গে পৌঁছায়, তেমনি এটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্রও তুলে ধরে। যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের মধ্যে তারা জীবন যাপন করে, তবে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় সবার অংশগ্রহণের ফলে প্রতিবছর অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রতিবছর তার সীমা ছাড়িয়ে যায়। এবারের ঈদও এর ব্যতিক্রম নয়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ তবু বাজারে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। মাসব্যাপী রোজা ও ঈদ উৎসবকে আরও বর্ণিল ও আনন্দমুখর করতে সবাই সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে কেনাকাটায় যুক্ত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করতে লাখ লাখ মানুষ ফিরেছে, যা বাজারের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি, বাজারের উজ্জীবিত অবস্থা, মূল্যস্ফীতির পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ—সব মিলিয়ে এবারের ঈদ বাণিজ্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে; যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য আশাব্যঞ্জক সিগন্যাল হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে বাজারে চাঙাভাব দেখা গেছে, যা শপিং মল, বিপণিবিতান, ফুটপাত এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, এলসি খোলার পরিস্থিতির উন্নতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার ফলে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, যার কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমে গেছে এবং এবারের কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে।
ঈদ বাণিজ্য: বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ
ঈদ বাণিজ্য শুধু বাণিজ্যিক নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টের অংশও। এবারের ঈদ বাণিজ্য দেশের জন্য নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশে পরিণত হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে বাজারে নতুন গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ঈদ বাজারে চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যে মোট ব্যবসা ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছর এই লেনদেন ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার। সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যের মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা যোগ হতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে এই অতিরিক্ত জোগান ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। ধনী মানুষদের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ ৩৮-৪০ হাজার কোটি টাকা আসছে। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ এবং বিনোদন খাতে ব্যয় হয় ৪-৫ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিক ঈদ বোনাস পাবেন, যা ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা করে এসেছে। ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের জন্য বাড়তি ব্যয় মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন, যা ঈদ অর্থনীতি চাঙা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোজার শুরুতে মার্কেটগুলোতে বিক্রি কিছুটা কম ছিল, তবে মধ্য রোজার পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। আর ঈদের শেষ দিকে এসে মার্কেটে ক্রেতাদের এত ভিড় হয়েছে যে পা ফেলার জায়গা ছিল না। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা বোনাস হাতে পাওয়ার পর বাজারে কেনাকাটা আরও বেড়ে গেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্য প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে। যদিও অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, আড়াই লাখ কোটি টাকা না হলেও এর কাছাকাছি বাণিজ্য হবে। তথ্যমতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ঈদকে কেন্দ্র করে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে, এবং তাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে এই অঙ্ক আরও বাড়ে।
মূল্যস্ফীতি এবং রেমিট্যান্স: অর্থনীতির মেরুদণ্ড
এবারের ঈদ বাণিজ্যকে গতিশীল করেছে দুটি বড় পরিবর্তন—মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত বছরের ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি এ বছরের মার্চে ৯.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে; যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এর ফলে মানুষ ঈদ উপলক্ষে বড় আকারে কেনাকাটা করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে, ২৬ মার্চ পর্যন্ত এটি ২৯৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে এবং সাধারণ মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসায় তারা ঈদের বাজারে বেশি খরচ করতে পারছে।
সরবরাহ ব্যবস্থা: পণ্যের সহজলভ্যতা
এবারের ঈদ বাণিজ্যে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত বছর ডলারের সংকটে কিছু পণ্যের সরবরাহে সমস্যা ছিল, তবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের উদ্যোগে আমদানির সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে; বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, পোশাক এবং উপহারসামগ্রী বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারের পণ্য মজুত এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হয়নি এবং ব্যবসায়ীরা সংকট অনুভব করেননি, যা বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।
খাদ্যসামগ্রী, পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের চাহিদা
ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাকসামগ্রী। ঈদকেন্দ্রিক শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও খাদ্যপণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। খাদ্যসামগ্রীর বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং পোশাক খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। মূলত তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ও ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি বৃদ্ধির কারণে পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে বিক্রি বেড়েছে।
সুপারশপ স্বপ্নের এমডি সাব্বির হাসান নাসির জানান, মাসখানেক আগে বিক্রি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা মধ্য রমজানের আগে কেটে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত বছরের তুলনায় বিক্রি ১৮-২০ শতাংশ বেশি হয়েছে।
দেশীয় ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাড়তি ভ্যাটের কারণে এবারের বিক্রির লক্ষ্য কিছুটা কম করা হয়েছে। তবে তাঁদের প্রত্যাশা, গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে এবং মধ্য রমজান থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।
ঈদ বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান
এবারের ঈদ বাণিজ্য শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনেনি, বরং এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় শপিং মল, দোকান এবং বিভিন্ন সেবামূলক খাতে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের মজুত, প্যাকেজিং, পরিবহন ও বিক্রয় বিভাগে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করেছেন। দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, এবারের ঈদে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছে।
ঈদ বাণিজ্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য যেমন একটি অপরিহার্য অংশ, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ঈদের আগের বাজারে বাণিজ্য যেমন তুঙ্গে পৌঁছায়, তেমনি এটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্রও তুলে ধরে। যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের মধ্যে তারা জীবন যাপন করে, তবে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় সবার অংশগ্রহণের ফলে প্রতিবছর অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রতিবছর তার সীমা ছাড়িয়ে যায়। এবারের ঈদও এর ব্যতিক্রম নয়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ তবু বাজারে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। মাসব্যাপী রোজা ও ঈদ উৎসবকে আরও বর্ণিল ও আনন্দমুখর করতে সবাই সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে কেনাকাটায় যুক্ত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করতে লাখ লাখ মানুষ ফিরেছে, যা বাজারের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি, বাজারের উজ্জীবিত অবস্থা, মূল্যস্ফীতির পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ—সব মিলিয়ে এবারের ঈদ বাণিজ্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে; যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য আশাব্যঞ্জক সিগন্যাল হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে বাজারে চাঙাভাব দেখা গেছে, যা শপিং মল, বিপণিবিতান, ফুটপাত এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, এলসি খোলার পরিস্থিতির উন্নতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার ফলে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, যার কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমে গেছে এবং এবারের কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে।
ঈদ বাণিজ্য: বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ
ঈদ বাণিজ্য শুধু বাণিজ্যিক নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টের অংশও। এবারের ঈদ বাণিজ্য দেশের জন্য নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশে পরিণত হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে বাজারে নতুন গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ঈদ বাজারে চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যে মোট ব্যবসা ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছর এই লেনদেন ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার। সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যের মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা যোগ হতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে এই অতিরিক্ত জোগান ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। ধনী মানুষদের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ ৩৮-৪০ হাজার কোটি টাকা আসছে। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ এবং বিনোদন খাতে ব্যয় হয় ৪-৫ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিক ঈদ বোনাস পাবেন, যা ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা করে এসেছে। ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের জন্য বাড়তি ব্যয় মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন, যা ঈদ অর্থনীতি চাঙা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোজার শুরুতে মার্কেটগুলোতে বিক্রি কিছুটা কম ছিল, তবে মধ্য রোজার পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। আর ঈদের শেষ দিকে এসে মার্কেটে ক্রেতাদের এত ভিড় হয়েছে যে পা ফেলার জায়গা ছিল না। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা বোনাস হাতে পাওয়ার পর বাজারে কেনাকাটা আরও বেড়ে গেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্য প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে। যদিও অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, আড়াই লাখ কোটি টাকা না হলেও এর কাছাকাছি বাণিজ্য হবে। তথ্যমতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ঈদকে কেন্দ্র করে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে, এবং তাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে এই অঙ্ক আরও বাড়ে।
মূল্যস্ফীতি এবং রেমিট্যান্স: অর্থনীতির মেরুদণ্ড
এবারের ঈদ বাণিজ্যকে গতিশীল করেছে দুটি বড় পরিবর্তন—মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত বছরের ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি এ বছরের মার্চে ৯.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে; যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এর ফলে মানুষ ঈদ উপলক্ষে বড় আকারে কেনাকাটা করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে, ২৬ মার্চ পর্যন্ত এটি ২৯৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে এবং সাধারণ মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসায় তারা ঈদের বাজারে বেশি খরচ করতে পারছে।
সরবরাহ ব্যবস্থা: পণ্যের সহজলভ্যতা
এবারের ঈদ বাণিজ্যে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত বছর ডলারের সংকটে কিছু পণ্যের সরবরাহে সমস্যা ছিল, তবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের উদ্যোগে আমদানির সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে; বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, পোশাক এবং উপহারসামগ্রী বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারের পণ্য মজুত এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হয়নি এবং ব্যবসায়ীরা সংকট অনুভব করেননি, যা বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।
খাদ্যসামগ্রী, পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের চাহিদা
ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাকসামগ্রী। ঈদকেন্দ্রিক শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও খাদ্যপণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। খাদ্যসামগ্রীর বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং পোশাক খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। মূলত তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ও ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি বৃদ্ধির কারণে পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে বিক্রি বেড়েছে।
সুপারশপ স্বপ্নের এমডি সাব্বির হাসান নাসির জানান, মাসখানেক আগে বিক্রি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা মধ্য রমজানের আগে কেটে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত বছরের তুলনায় বিক্রি ১৮-২০ শতাংশ বেশি হয়েছে।
দেশীয় ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাড়তি ভ্যাটের কারণে এবারের বিক্রির লক্ষ্য কিছুটা কম করা হয়েছে। তবে তাঁদের প্রত্যাশা, গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে এবং মধ্য রমজান থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।
ঈদ বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান
এবারের ঈদ বাণিজ্য শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনেনি, বরং এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় শপিং মল, দোকান এবং বিভিন্ন সেবামূলক খাতে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের মজুত, প্যাকেজিং, পরিবহন ও বিক্রয় বিভাগে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করেছেন। দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, এবারের ঈদে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছে।
সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতি দেখে বিভিন্ন ব্যাংক তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। ওসিবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ এবং মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষার জন্য সোনার চাহিদা আরও বাড়বে। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য নিয়ে
১ দিন আগেচীনের আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। ২০২১ সাল থেকে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বন্ডের সুদ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে চীনের আবাসন কোম্পানিগুলো। দীর্ঘ আলোচনার পরও বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত মাত্র ০.৬% অর্থ ফেরত পেয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাজারে আস্থার সংকট
২ দিন আগেবাজারে নতুন টাকার সরবরাহ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসংবলিত নতুন নোট ঈদের আগে ছাড়া হয়নি এবং ঈদের পরও তা বাজারে আসবে না।
২ দিন আগেমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে টুপি ও আতর শুধু অপরিহার্য উপকরণ নয়, বরং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। বছরজুড়ে এগুলোর চাহিদা থাকলেও রমজান ও ঈদ এলে তা বহুগুণে বেড়ে যায়। বাংলাদেশে বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর কারণে এই সময় টুপি ও আতরের বাজারে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়।
২ দিন আগে