Ajker Patrika

সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের চাপ সামলাতে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। আর যে হারে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে তার চেয়ে কম হারে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে আর্থিক সংকট, ব্যাংকে মুনাফা কম ও বিনিয়োগে নানা শর্তের কারণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। যার ফলে তিন মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বেড়ে উল্টো ঋণাত্মক হয়েছে। এই তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। এ সময় সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা শোধ করেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের আসল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের আসল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্বক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে। আর সুদের হার হ্রাস ও শর্তের বেড়াজালে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে।’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি ২ লাখ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্বক) দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ক্রমাগত বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির পারদ। সেপ্টেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এদিকে গত অর্থবছরে একই সময় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ধারাবাহিক কমছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ১৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

গত অর্থবছর ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশ কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত