Ajker Patrika

পাচার করা অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তির পরামর্শ বিএফআইইউয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২৩: ২২
পাচার করা অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তির পরামর্শ বিএফআইইউয়ের

পাচার করা অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) স্বাক্ষরের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন। হাইকোর্টে বিএফআইইউ’র দেওয়া প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। 

আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি অ্যাফিডেভিট করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা ও অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রস্তাবিত ‘রিসার্চ সেল’-এ লোকবল পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত লোকবল পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কিত মামলায় তথ্য-প্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের গত ৩ জানুয়ারি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য ছয়-সাতটি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ চুক্তি) স্বাক্ষরের বিষয়টি পর্যালোচনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অংশগ্রহণে সভা আয়োজন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড—এসব দেশের সঙ্গে এমএলএ চুক্তি স্বাক্ষর করার যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানায়। আলোচ্য প্রেক্ষাপটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও বিএফআইইউ’র প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য ছয়-সাতটি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে একটি পর্যালোচনা সভা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিএফআইইউ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টির ফলোআপ করছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতের নেওয়া ব্যবস্থার অনুরূপ ব্যবস্থা বাংলাদেশেও নেওয়া যায় কিনা তা পর্যালোচনার সুপারিশ সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্র/প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ৩০ আগস্টের অনুষ্ঠিত ২৬ তম সভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি জাতীয় সমন্বয় কমিটির পরবর্তী সভায় আলোচনা ও অনুমোদন পাবে আশা করা যাচ্ছে। তাই আলোচ্য প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে উপস্থাপনের জন্য তিন মাস সময় চেয়েছে বিএফআইইউ। 

গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাব টকে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাতে পরদিন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে কী পদক্ষেপ নিয়েছে—এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বিএফআইউ প্রতিবেদন দেয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত