Ajker Patrika

ভারত থেকে সুতা আসছে ডাম্পিং মূল্যে, দেশের সুতা পড়ে থাকছে গুদামে: বিটিএমএ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৩৪
রাজধানীর গুলশান ক্লাবে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের সংকটাবস্থার ওপর বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর গুলশান ক্লাবে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের সংকটাবস্থার ওপর বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে কম দামে বা ডাম্পিং মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে ভারতীয় সুতা। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী দেশের মিলগুলোতেও সুতা উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কম দামে বা ডাম্পিং মূল্যে আমদানি করা ভারতীয় সুতার কারণে দেশে উৎপাদিত সুতা তুলনামূলক বেশি দামে কিনতে চান না ব্যবসায়ীরা। ফলে দেশে উৎপাদিত সুতা গুদামেই পড়ে থাকছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশীয় টেক্সটাইল মিলগুলো।

আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের সংকটাবস্থার ওপর বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা রপ্তানি আয়ের প্রধান চালিকা শক্তি দেশের টেক্সটাইল সেক্টর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।’

টেক্সটাইল শিল্পের উল্লিখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর/কাস্টম হাউস ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমরা যেটুকু সুতা উৎপাদন করছি, তা বিক্রি করতে পারছি না। এলসি ও বিনা এলসিতে ভারত থেকে সুতা আসছে। অন্যদিকে, ভারত যে দামে সুতা বিক্রি করছে, তা ডাম্পিং। ফলে আমাদের উৎপাদিত সুতা গুদামে অবিক্রীত পড়ে আছে। বর্তমানে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার সুতা আমাদের সদস্যদের গুদামে অবিক্রীত পড়ে আছে।’

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফলে গঠিত সরকারের কাছে আমরা সকল বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দেশের স্বার্থে, অনতিবিলম্বে দেশীয় টেক্সটাইল খাতের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে আমাদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি দাবি করেন, সব স্থলবন্দর/কাস্টম হাউস ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধ করে শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে সব ধরনের সুতা আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। সেই সঙ্গে অবিলম্বে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রক্রিয়া স্থগিত করারও দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সহসভাপতি সালেউদ জামান খান অভিযোগ করেন, ভারত প্রতি কিলোগ্রাম সুতাতে ১১ রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে। তারা কার্যত রাষ্ট্রীয়ভাবে ডাম্পিংকে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো সুতার দাম কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত এর সুবিধা যাচ্ছে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে।’

তিনি গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি ২০ টাকার নিচে নামানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘চলমান গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলো মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষমতায় চলছে।’

বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানান বিটিএমএ সহসভাপতি মো. আবুল কালাম । তিনি আগামী তিন বছরের জন্য সুদের হার এক অঙ্কে স্থির করার আহ্বান জানান।

বিটিএমএ পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার মুন্না বলেন, ‘মাটির নিচে গ্যাস মজুত রেখে, কার স্বার্থে এলএনজি আমদানিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে? দেশে এলএনজি আমদানি করে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্প টিকে থাকতে পারে না।’ তিনি বিইআরসির শুনানিতে কারখানার চাবি জমা দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘৭০ টাকা দিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব হবে না, তাই শুনানির দিন আমরা কারখানার চাবি জমা দেব।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিটিএমএ প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের সর্ববৃহৎ সংগঠন। এর সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৪। এগুলোর মধ্যে স্পিনিং ৫২৭টি, উইভিং ৯৮৬টি এবং ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং ৩৪১টি মিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, যা বেসরকারি খাতে একক বিনিয়োগ হিসেবে সর্বাধিক।

জিডিপিতে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেলস সেক্টরের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস সেক্টর থেকে অর্জিত হচ্ছে, যাতে বিটিএমএ সদস্যরা প্রায় ৭০ শতাংশের জোগানদাতা এবং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিটেশন হচ্ছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

এ ছাড়া বর্তমানে বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো তৈরি পোশাকশিল্পের মধ্যে নিট খাতের প্রয়োজনীয় সুতার প্রায় ১০০ শতাংশ এবং উইভিংয়ে ৫০ শতাংশ সরবরাহ করছে। এ ছাড়া বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো ডেনিম, হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়ালের শতভাগ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত