Ajker Patrika

অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২১, ১১: ৪৭
অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে

চলমান কঠোর বিধিনিষেধে ত্রাণ বিতরণের অজুহাতে এবার বাড়ল মোটা চালের দাম। রাজধানীর পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি সমহারে বেড়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বাড়ল। এ অবস্থায় ট্রাক সেলের পরিধি ও সরবরাহ বাড়াতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 
তবে শুধু মোটা চাল নয়, মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ সরু চালের দামও বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।

চলমান কঠোর বিধিনিষেধে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের আয়–রোজগার আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে; বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলছে কষ্টে। রাজধানীতে টিসিবির পণ্য কিনতে এমনিতে ট্রাকের সামনে মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বাজারে মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালের দাম ছিল ২ হাজার ৩০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম ৪৬ টাকা। গত শুক্রবার একই চাল ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪৮ টাকা। এতে কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল ২ হাজার ৭৫০ টাকা। শুক্রবার তা ২ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। নাজিরশাইলের দাম ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমানে তা ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাবুবাজারের মেসার্স নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির মালিক দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, এ বছর মোটা ধানের আবাদ কম হয়েছে। সরকার মিলমালিকদের কাছ থেকে মোটা চাল নেওয়ায় বাজারে এই চালের সরবরাহ কম। আবার চলমান বিধিনিষেধে বিভিন্ন সংস্থা চাল বিতরণ করছে। ফলে বাজারে মোটা চালের পাশাপাশি সরু চালের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর পূর্ব রামপুরার বনশ্রী এলাকার মেসার্স শিফা রাইস এজেন্সির বিক্রয় প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁরা প্রতি ৫০ কেজি ওজনের বিআর–২৮ চাল বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৪০০ টাকায়। শুক্রবার থেকে তা ২ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। মোকামে দাম বাড়ায় তাঁদের পর্যায়ে বেড়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের মেসার্স সোনালি রাইস এজেন্সির মালিক নুরুল ইসলাম জানান, তিন–চার দিন আগেও প্রতি কেজি বিআর–২৮ চালের (লতা নামে পরিচিত) দাম ছিল ৫০ টাকা। শুক্রবার তা ৫২ টাকায় বিক্রি করেছেন। টিসিবির হিসাবমতে, এক সপ্তাহ আগে মোটা চালের দাম ছিল ৪৪–৪৮ টাকা। বর্তমানে তা ৪৬–৫০ এবং মাঝারি মানের ৫০–৫৪ টাকার চাল ৫২–৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম বৃদ্ধি এভাবে চলতে থাকলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চলমান লকডাউনে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি বেশি দিন স্থায়ী রাখা যাবে না। কেউ কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছে কি না, সরকারকে তা বের করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে খাদ্যসচিব নাজমানারা খানুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, চালের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। রাজধানীতে ট্রাক সেলের সংখ্যা আরও ২০টি বাড়ানো হচ্ছে। এখন ১০টি ট্রাক রয়েছে। প্রতি ট্রাকে তাঁরা দৈনিক তিন টন চাল দিচ্ছেন। সারা দেশে ৭৭৬টি ট্রাকে চাল বিক্রি হচ্ছে। ঈদ পর্যন্ত ট্রাক সেল অব্যাহত থাকবে।

খাদ্যসচিব আরও বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল মজুত রয়েছে ১২ লাখ ১৫ হাজার টন। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করেছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮২ টন এবং আতপ চাল ৪৯ হাজার ১২৮ টন। আর ধান সংগ্রহ করেছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩১৩ টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত: এসএমই নীতিতে বড় সংস্কার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৮
বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত: এসএমই নীতিতে বড় সংস্কার

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) আরও গতিশীল ও সক্ষম করতে নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আনছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রপ্তানি আদেশ থেকে প্রাপ্ত আয়ের ১০ শতাংশ ব্যাংকে জমা রাখার বাধ্যবাধকতা এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য থাকবে না। পাশাপাশি নমুনা ছাড়ের প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ডিজিটাল মানিব্যাগের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মতোই সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। অনলাইন বিক্রির অর্থ যেন বিলম্ব ছাড়াই উদ্যোক্তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়—সে জন্য এসএসএল কমার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এসব পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য, অর্থপ্রবাহকে আরও স্বচ্ছন্দ করা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক গতি ফিরিয়ে আনা।

এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের রূপরেখা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি গত কয়েক মাসে পরপর চারটি বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা। আলোচনায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো, নীতি প্রণয়নে তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ বিষয়ে জানানো হয়, এসএমই খাতকে কেন্দ্র করে গঠিত এসব বৈঠকের ধারাবাহিকতা শুরু হয় ২৮ আগস্ট, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রথম সভার মাধ্যমে। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ—অর্থ প্রদানে বিলম্ব, কাস্টমসের জটিলতা, লাইসেন্সপ্রাপ্তিতে বাধা ও ঋণ পাওয়ার সীমাবদ্ধতা। পরবর্তী ধাপে, ২১ সেপ্টেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত বৈঠকে ২ ঘণ্টাব্যাপী মুক্ত আলোচনায় উদ্যোক্তারা তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনলাইনে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মাঠপর্যায়ের মতামত ও বাস্তব চিত্র সরাসরি উপস্থাপন করা হয়। পরদিন, ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত বৈঠকে এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা এখন বাস্তবায়নের পথে।

বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উদ্যোক্তাবান্ধব নতুন আর্থিক পণ্য তৈরির উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমাস্টার সার্কুলারের কার্যকারিতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য লাইসেন্স ছাড়াই ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি আরও আকর্ষণীয় করতে সুদের হার পুনর্বিবেচনার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। এখন থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া আগাম অর্থ প্রদানের সীমা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার মার্কিন ডলার করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ (ইআরকিউ) হিসাব থেকে পরিশোধের সীমাও ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বিমা কোম্পানির কভারেজসহ উন্মুক্ত হিসাবের মাধ্যমে রপ্তানি লেনদেনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, এইচএস কোড-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে এনবিআর নতুন নিয়ম চালু করেছে—এখন থেকে আট অঙ্কের কোডের প্রথম চার অঙ্ক মিলে গেলেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন সম্পন্ন করবে। এতে পণ্যছাড় প্রক্রিয়া হবে আরও দ্রুত ও সরল।

এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরির উদ্যোগও নিয়েছে। প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম তিন হাজার মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দ থাকবে। পাশাপাশি বিশেষ বৈদেশিক মুদ্রা কার্ড চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্পকে আরও দৃশ্যমান করতে বৈদেশিক বাণিজ্য ইনস্টিটিউট একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘এই সংস্কারের লক্ষ্য অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আমাদের অর্থনীতির আসল মেরুদণ্ড—তাঁদের জন্য ব্যবসার প্রতিটি ধাপকে সহজ করতে হবে। অর্থায়ন, অর্থ প্রদান কিংবা সরবরাহ—সব জায়গায় সরকারকে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে, বাধা নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশি ঋণপ্রাপ্তি কম, পরিশোধ বেশি

  • ছাড় ১১৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার
  • পরিশোধ ১২৭ কোটি ৯৯ লাখ ডলার
  • প্রতিশ্রুতি ৯১ কোটি ৬ লাখ ডলার
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশি ঋণপ্রাপ্তি কম, পরিশোধ বেশি

ঋণনির্ভর উন্নয়নের চাপ এখন অর্থনীতিতে স্পষ্ট। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি ঋণপ্রাপ্তির চেয়ে প্রায় ১৩ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে নতুন ঋণ দিয়ে পুরোনো ঋণ পরিশোধের প্রবণতা বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক ঋণছাড় হয়েছে ১১৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; কিন্তু পরিশোধ হয়েছে ১২৭ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ ছিল ১১২ কোটি ডলার। সে তুলনায় এবারের পরিশোধ বেড়েছে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যার মধ্যে শুধু আসল পরিশোধই বেড়েছে ১৩ কোটি ডলার।

একই সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৯১ কোটি ৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। তবে প্রতিশ্রুতি বাড়লেও বাস্তবে ছাড়ের গতি কমে গেছে, ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

ইআরডি জানায়, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে মেট্রোরেল ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলো থেকে এখনো প্রত্যাশিত আয় আসছে না। কর্ণফুলী টানেল ও পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ই পুরোপুরি মেটানো যাচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্পের ঋণ সরকারকে নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪০৯ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি ছিল ৩৩৫ কোটি ডলার আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ডলার।

বাজারভিত্তিক ঋণের সুদও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে, যেখানে যুদ্ধের আগে এটি ১ শতাংশের নিচে ছিল। ফলে বাংলাদেশের জন্যও বাজারভিত্তিক ঋণ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে, বিশেষত জাইকা, এডিবি বা বাণিজ্যিক ঋণপথে নেওয়া অর্থের ক্ষেত্রে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে পরিশোধের চাপও। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো না যায় এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বৃদ্ধি না পায়, তাহলে ঋণ পরিশোধের চাপ অর্থনীতিতে দুর্দশা সৃষ্টি করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম আবার বাড়ল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ০২
সোনার দাম আবার বাড়ল

কিছুটা কমানোর পর দেশের বাজারে সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা। এতে ১ ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল রোববার (২ নভেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

আজ শনিবার (১ নভেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর প্রতি ভরি সোনার দাম কমানো হয় ২ হাজার ৬১৩ টাকা। তার আগে ৩০ অক্টোবর প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৮ হাজার ৯০০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর আগে চার দফায় ভালো মানের ১ ভরি সোনার দাম কমানো হয় ২৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৮০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের ১ ভরি সোনায় ১ হাজার ৫৯৮ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ ভরি সোনায় ১ হাজার ৩৬৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৮০ টাকা।

এর আগে ৩১ অক্টোবর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ২ হাজার ৬১৩ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৯৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের ১ ভরি সোনায় ২ হাজার ৫০৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ ভরি সোনায় ২ হাজার ১৪৬ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৮৩১ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ টাকা।

সোনার দাম বাড়ানো হলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের ১ ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের ১ ভরি রুপার দাম ৪ হাজার ৪৭, ১৮ ক্যারেটের ১ ভরির দাম ৩ হাজার ৪৭৬ এবং সনাতন পদ্ধতির ১ ভরির দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্যোগ মোকাবিলায় বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণে বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। দুর্যোগ দিন দিন বাড়লেও তা মোকাবিলায় বিনিয়োগ কমেছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততা মোকাবিলায় গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কমেছে। মূলত চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কমেছে ৯ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। এ প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মোট বিনিয়োগ হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে টেকসই প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে টেকসই প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৯ কোটি শূন্য ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন কমেছে ৮ হাজার ৬৯৩ কোটি ২ লাখ টাকা।

তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে টেকসই খাতে ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করেছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং এ খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ২ হাজার ৭৩০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসি অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সাসটেইনেবল ফিন্যান্সের ১১ ক্যাটাগরিতে মোট ৬৮টি পণ্যের বিপরীতে ঋণ দিতে পারে। এসব পণ্যের অধিকাংশই সবুজ অর্থায়নের অন্তর্ভুক্ত। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও চলমান ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দেওয়ার নির্দেশ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

এদিকে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এ খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার শর্ত রয়েছে।

টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে গত কয়েক বছর বিভিন্ন মানদণ্ডে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) টেকসই বা সাসটেইনেবল রেটিং বা মান প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, পরিবেশবান্ধব তথা সবুজ প্রকল্পে চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৪৯ কোটি শূন্য ৪ লাখ টাকা। আর তিন মাস আগে অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৬৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে সবুজ প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন কমেছে ৯১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

তথ্য বলছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সবুজ প্রকল্পে ব্যাংকগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং এ খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৭৭৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেকসই কৃষিতে জুন প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন বেড়েছে। জুন শেষে এ খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর মার্চ শেষে এ খাতে অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে জুন প্রান্তিকে টেকসই কৃষিতে অর্থায়ন বেড়েছে ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত