Ajker Patrika

তৈরি পোশাকে ভিয়েতনামকে ছাড়াল বাংলাদেশ, সেবায় এগোলো ৪ ধাপ

তৈরি পোশাকে ভিয়েতনামকে ছাড়াল বাংলাদেশ, সেবায় এগোলো ৪ ধাপ

ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশের অবস্থান ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি কম্পিউটার সেবার মতো বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানিকারকদের তালিকায় চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সদ্যপ্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ২০২২ সালের ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ’ এই চিত্র তুলে ধরেছে।

বার্ষিক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ ৩৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ভিয়েতনামের ছিল ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে এই দেশের রপ্তানি আয় ছিল ২৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। আর করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে ২৮ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে নামে।

সে কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হয় ভিয়েতনাম। আরও কয়েক বছর ধরে থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছিল দেশটির। এক বছরের ব্যবধানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশের অবস্থান ফিরে পেল বাংলাদেশ।

২০২১ সালে বিশ্বের তৈরি পোশাকের বাজারে হিস্যা বেড়েছে বাংলাদেশের, বিপরীতে বেড়েছে কমেছে ভিয়েতনামের। চীন, ইইউ, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশ গত বছর ৪৬০ বিলিয়ন বা ৪৬ হাজার কোটি ডলারের তৈরি পোশাক বিক্রি করেছে।

ডব্লিউটিওর তথ্য বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বের তৈরি পোশাকের বাজারের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হিস্যা ভিয়েতনামের দখলে ছিল। তখন বাংলাদেশের ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখান থেকে ভিয়েতনামের হিস্যা গত বছর কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

তবে বরাবরের মতো বিশ্বের পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। আর ১৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। আর তৃতীয় ভিয়েতনাম।

চীন গত বছর ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২০ সালে তাদের রপ্তানি ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। ফলে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্বে তৃতীয় ও চতুর্থ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে তুরস্ক ও ভারত। তাদের মধ্যে তুরস্ক গত বছর ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির হিস্যা সাড়ে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের বাজার হিস্যা ৩ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে সেবা রপ্তানিতে আয়েও ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে। ২০২১ সালে কম্পিউটার সেবার মতো বিভিন্ন বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় আগের বছরের চেয়ে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষ ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৪তম থেকে ৭০তম হয়েছে।

বিদেশে সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ৩০৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা পরের বছর ২০২১ সালে বেড়ে ৪৮৭ কোটিতে উন্নীত হয়। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে সেবা রপ্তানিতে আয় বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বলছে, গতবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের ৩ হাজার ৫৮১ কোটি ডলার আয় হয়েছে। তবে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে পোশাক রপ্তানির আয় দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর সব ধরনের তৈরি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৪২২ কোটি ডলার। ২০২০ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম হয়েছিল। কিন্তু গতবছর তা আবারও ৩২ শতাংশ বেড়েছে।    

ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অনুপাতে মোট দেশজ উৎপাদনও (জিডিপি) গতবছর বেশ বেড়েছে। আগের বছরের ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।  

ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা এক বিবৃতিতে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর বাড়ার পাশাপাশি খাদ্যশস্য, গ্যাস ও সারের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ চুক্তি ইউক্রেনীয় শস্য এবং রুশ খাদ্য ও সার আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশ অবদান রেখে দামকে নিম্নমুখী চাপে রেখেছে। তবে অনেক দেশে এসবের দাম একটু বেশিই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত