Ajker Patrika

এজেন্ট ব্যাংকিং: হিসাব-লেনদেনে জোয়ার অবকাঠামোয় মন্দা

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
এজেন্ট ব্যাংকিং: হিসাব-লেনদেনে জোয়ার অবকাঠামোয় মন্দা

গ্রামীণ অর্থনীতিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করছে এজেন্ট ব্যাংকিং। হিসাব, আমানত এবং লেনদেনে এ খাতে প্রবৃদ্ধি এখন চোখে পড়ার মতো। তবে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে এর অবকাঠামোয়। কমে যাচ্ছে এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা। অর্থাৎ এই খাত একদিকে বিস্তৃতি পাচ্ছে, অন্যদিকে সংকুচিত হচ্ছে এর নেটওয়ার্ক। ফলে উন্নতির মধ্যেও ধরা পড়ছে কিছু স্থায়িত্বসংক্রান্ত দুর্বলতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯০টি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট হিসাব ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ২৩০টি, যা মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৫টিতে।

এই সময়ের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৮৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে যেখানে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়।

লেনদেনও বেড়েছে ৫ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫১ কোটিতে।

তিন মাসে ঋণের স্থিতিও বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৬৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১০ হাজার ১১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এ সময়ে প্রবাসী আয়ের প্রবাহও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চ পর্যন্ত দেশে এসেছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স, যা আগের তিন মাসের তুলনায় ৭ হাজার ৭৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বেশি।

তবে এই ইতিবাচক প্রবণতার পাশাপাশি উদ্বেগের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঠামোগত সংকোচন। ডিসেম্বর শেষে দেশে মোট এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১৯টি, যা মার্চ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৩৮টিতে। তিন মাসে কমেছে ১৮১টি এজেন্ট। একইভাবে আউটলেটের সংখ্যা কমেছে ২২৫টি; যেমন ২১ হাজার ২৪৮ থেকে ২১ হাজার ২৩টিতে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিস্তার অব্যাহত থাকলেও নেটওয়ার্ক পরিচালনার মান, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে কিছু কিছু অঞ্চলে এজেন্ট ও আউটলেট গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের ব্যাংক সেবার নাগাল তৈরি করতেই এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয় এবং তা এখন সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নগদ লেনদেনের সহজলভ্যতা ও ঋণ পাওয়ার সুযোগ এটিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।’

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিং এখন শুধু আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এজেন্টরা ব্যাংকের হয়েই কাজ করেন, তাই দায়িত্বশীলতাও ব্যাংকের। প্রতারণার কোনো সুযোগ এখানে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে, ইসির খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমছে, সবুজসংকেত যুক্তরাষ্ট্রের

গণপূর্তের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১ স্থপতি বরখাস্ত

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত