নজরুল ইসলাম
২০২১, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। ১৯৭১ সালের ৭ কোটি স্বাধীন বাঙালি এখন সংখ্যায় প্রায় ১৭ কোটি বাঙালি বা বাংলাদেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত অতিদরিদ্র বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সম্ভবত ৪০তম, ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫তম অর্থনীতিতে উন্নীত হবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের পর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৮ ডলার, সুবর্ণজয়ন্তীকালে তা অন্যূন ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলার, তখন দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭০ ডলার, বর্তমানে ২ হাজার ২২৭ ডলার। বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এক বিশাল ধাঁধা। তাঁরা একে বলেন ‘পাজ্ল’ বা ‘প্যারাডক্স’। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক হারে দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রক্রিয়ায় সরকারের বলিষ্ঠ তৎপরতার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু এনজিও কয়েক দশকজুড়ে কাজ করেছে এবং তাতে ফলও পাওয়া গেছে। সরকারি নীতিমালার সুযোগ নিয়ে স্বাধীন দেশের উজ্জ্বল তরুণ উদ্যোক্তারা আধুনিক ধারার শিল্প ও বাণিজ্যব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃঢ় মঞ্চ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক দশক ধরে (২০০৯-২০) অতি উচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হার (৬-৮%) বস্তুতই পরম আশ্চর্যের। শুধু কি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি? সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা দিকেই আজ বাংলাদেশের অগ্রগতি অতীব দৃশ্যমান এবং বহুল প্রশংসিত। অন্যদিকে বন্যা, ঝড়, ঝঞ্ঝার দেশ বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ মোকাবিলার পরীক্ষায় বিশ্বের অনুকরণীয় মডেল।
এমনকি ২০২০-২১ সালজুড়ে যে মহামারি, কোভিড-১৯, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা আরও ভয়ংকর রূপ নিলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতেই পারে, যেমন হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশেই।
দুই.
কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাধীনতা–পরবর্তী ৫০ বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের সাফল্য, আনন্দ উদ্যাপনের বহু কারণ রয়েছে। দেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু ইত্যাদি), বিদ্যুৎ উৎপাদন (এপ্রিল ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট), অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি (কৃষি, শিল্প, প্রবাসী আয়, বিভিন্ন সেবা, নির্মাণ), দারিদ্র্য হ্রাসকরণের সাফল্য, নারী প্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হচ্ছি না, এসব বিষয়ে অন্যরা লিখবেন বরং আমার একান্ত নিজস্ব কিছু এলাকায় দেশের অর্জন (এবং প্রাসঙ্গিক সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা) মোটাদাগে উল্লেখ করছি। আমার নিজস্ব এলাকাগুলো হলো শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, নগর উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা। তবে স্থান সংকুলানের স্বার্থে বর্তমান রচনা শুধু উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং শিল্পকলার মধ্যে সীমিত রাখা হচ্ছে।
শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাসহ সকল পর্যায়েই ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ১৭ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। (অবশ্য এই হার প্রায় শতভাগ হওয়া খুবই সম্ভব ছিল)। বিভিন্ন স্তরে নারী শিক্ষার অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লিঙ্গসমতা অর্জিত হয়েছে। উচ্চতর পর্যায়েও শিক্ষায় মেয়েদের অগ্রগামিতা প্রশংসনীয়; এমনকি কৃষিশিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত, শিক্ষকসংখ্যা তো অতি নগণ্য। বর্তমানে চিত্র খুবই ভিন্ন, কোনো কোনো বিভাগে নারী শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশের বহু নারী এখন উন্নত বিশ্বের অনেক প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। দেশের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নারী।
শিক্ষার সকল স্তরেই সংখ্যাগত বিপ্লব ঘটে গেছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৭১ সালের মাত্র ৬ থেকে ২০২১ সালে ১৫০-এর ওপরে। অবশ্য পাশাপাশি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো কোনো বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান প্রশংসিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বর্তমান লেখকের চেয়ারম্যান থাকাকালে) ২০০৯ সালে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন কর্মসূচি নামক একটি বড় মাপের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এটি পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে ভিন্ন নামে পরিচালিত হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কোভিড-১৯ নিয়েও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসনীয় গবেষণা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক গবেষণার সুযোগ বেড়েছে বিগত পাঁচ দশকে। এ ক্ষেত্রে কৃষি গবেষণা ও ওষুধশিল্পে অগ্রগতির কথা বলা যায়। বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্য, মৎস্য, মাংস ও দুগ্ধ উৎপাদনে এগিয়ে গেছে, তা বহুলাংশে কৃষি ও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে গবেষণার উন্নয়নের জন্য সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাকেন্দ্র সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। এ নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার বিসিএএস (বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিস)। এই সঙ্গে স্মরণ করা যায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের এক কাতারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরব ভূমিকার কথা। অবশ্য বলা বাহুল্য, শিক্ষাক্ষেত্রে (এবং তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য), জাতীয় বাজেট ও জিডিপিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বিগত পাঁচ দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যাগত ও গুণগত উন্নতি হলেও অত্যন্ত ক্ষতিকর যে প্রক্রিয়াটি শক্তি অর্জন করেছে, তা হলো সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী নানা ধারার, নানা পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা। ধর্মভিত্তিক সংকীর্ণ শিক্ষার ব্যাপক প্রসার রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের সৃষ্টির চেতনার সঙ্গে এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বেমানান ও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সূত্রপাত ভাষা আন্দোলনে। স্বাধীন এই রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ স্বভাবতই বাংলাদেশের ওপর মূলত নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, বাংলা একাডেমি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও পৃষ্ঠপোষকতা তো অবশ্যই অতীব জরুরি। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অর্জন প্রধানত স্বাধীনতা–উত্তরকালের কৃতিত্ব।
শুধু ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই নয়, বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী ফেব্রুয়ারির বইমেলার (সংগত কারণে বর্তমান বছরে মার্চ-এপ্রিলে) তাৎপর্য ও গুরুত্ব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও বহুমাত্রিক। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রেরণা এই বইমেলা।
শিল্প ও সংস্কৃতি: শিল্পকলা ভাষা, সাহিত্যসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা বিশেষত শিল্পকলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসনামলের মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতীয় উন্নয়নের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়েছিলেন। এর অন্যতম ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রমে প্রণোদনা দেওয়া। এ কাজে তিনি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর অতি আপনজন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। অনুকূল পরিবেশে অতি দ্রুত সফলতার দিকে এগিয়ে যায় এ দেশের চিত্রকলা ও ভাস্কর্যসহ সব সুকুমার শিল্প ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিল্প শাখা। তরুণ মুক্তিযোদ্ধা চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদে ফ্রান্সে উচ্চতর শিল্পশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ক্রমান্বয়ে একজন সত্যিকারের আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদালাভ করেন, ফ্রান্সের গৌরবজনক পদবি লাভ করেন। শিল্পী মনিরুল ইসলাম একই ভাবে স্পেনের স্বীকৃতি লাভ করেন। জাপানে সম্মানিত হন প্রবীণ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন। আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী আন্তর্জাতিক শিল্পমঞ্চে কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন। তা ছাড়া, সম্মিলিতভাবে এ দেশের শিল্পকলা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে দ্বিবার্ষিক এশীয় শিল্পকলা প্রদর্শনী ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের শিল্পকলা মঞ্চে অত্যন্ত সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে (বাদ সেধেছে অবশ্য ২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারি)। একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, ফটোগ্রাফি ও ডিজিটাল আর্ট মাধ্যমে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিদর্শন রাখা সহজ কথা নয়। বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীরা সম্প্রতি অতি মর্যাদাবান ভেনিস বিয়েনালে নিয়মিত অংশ নিতে পারছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পকলায় খুব বড় রকমের সাফল্য এ দেশের নারী শিল্পীদের মেধাবী সৃজনকর্ম।
শিল্পকলার উৎকর্ষ বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে ঢাকা শহরের বেশ কিছু আর্ট গ্যালারি বা শিল্পালয়। এদের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের গ্যালারির তৎপরতা ও পাশাপাশি অতি উন্নতমানের আর্ট পাবলিকেশনের কথা বলতেই হয়। কায়া, চিত্রকসহ আরও কয়েকটি শিল্পালয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
শিল্পীসমাজের একটি সাম্প্রতিক কর্মতৎপরতা বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছে, তা হলো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাঙালির জাতীয় চরিত্র নির্মাণে এ ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতার বিকল্প নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে করোনার মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতীকী উদ্যাপন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর নেতৃত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিকূল পরিবেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু করেছিলেন ছায়ানটের নেতারা।
শেষের কথা
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার দেশের সাফল্যে আমি আমার বৃদ্ধ বয়সেও প্রচণ্ডভাবে উজ্জীবিত হই, কিন্তু একই সঙ্গে ভয়ানকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন দিবসেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিশাল শক্তি প্রদর্শনে ও ভৌত উন্নয়নের ইতিবাচক সাফল্যের পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুষঙ্গরূপী ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্যের বাস্তবতায়। এসব সত্ত্বেও আমি মনে করি পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও অনেক এগোবে।
নজরুল ইসলাম
শিক্ষাবিদ, নগরবিদ ও শিল্প সমালোচক
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান
২০২১, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। ১৯৭১ সালের ৭ কোটি স্বাধীন বাঙালি এখন সংখ্যায় প্রায় ১৭ কোটি বাঙালি বা বাংলাদেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত অতিদরিদ্র বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সম্ভবত ৪০তম, ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫তম অর্থনীতিতে উন্নীত হবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের পর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৮ ডলার, সুবর্ণজয়ন্তীকালে তা অন্যূন ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলার, তখন দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭০ ডলার, বর্তমানে ২ হাজার ২২৭ ডলার। বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এক বিশাল ধাঁধা। তাঁরা একে বলেন ‘পাজ্ল’ বা ‘প্যারাডক্স’। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক হারে দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রক্রিয়ায় সরকারের বলিষ্ঠ তৎপরতার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু এনজিও কয়েক দশকজুড়ে কাজ করেছে এবং তাতে ফলও পাওয়া গেছে। সরকারি নীতিমালার সুযোগ নিয়ে স্বাধীন দেশের উজ্জ্বল তরুণ উদ্যোক্তারা আধুনিক ধারার শিল্প ও বাণিজ্যব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃঢ় মঞ্চ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক দশক ধরে (২০০৯-২০) অতি উচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হার (৬-৮%) বস্তুতই পরম আশ্চর্যের। শুধু কি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি? সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা দিকেই আজ বাংলাদেশের অগ্রগতি অতীব দৃশ্যমান এবং বহুল প্রশংসিত। অন্যদিকে বন্যা, ঝড়, ঝঞ্ঝার দেশ বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ মোকাবিলার পরীক্ষায় বিশ্বের অনুকরণীয় মডেল।
এমনকি ২০২০-২১ সালজুড়ে যে মহামারি, কোভিড-১৯, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা আরও ভয়ংকর রূপ নিলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতেই পারে, যেমন হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশেই।
দুই.
কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাধীনতা–পরবর্তী ৫০ বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের সাফল্য, আনন্দ উদ্যাপনের বহু কারণ রয়েছে। দেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু ইত্যাদি), বিদ্যুৎ উৎপাদন (এপ্রিল ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট), অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি (কৃষি, শিল্প, প্রবাসী আয়, বিভিন্ন সেবা, নির্মাণ), দারিদ্র্য হ্রাসকরণের সাফল্য, নারী প্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হচ্ছি না, এসব বিষয়ে অন্যরা লিখবেন বরং আমার একান্ত নিজস্ব কিছু এলাকায় দেশের অর্জন (এবং প্রাসঙ্গিক সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা) মোটাদাগে উল্লেখ করছি। আমার নিজস্ব এলাকাগুলো হলো শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, নগর উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা। তবে স্থান সংকুলানের স্বার্থে বর্তমান রচনা শুধু উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং শিল্পকলার মধ্যে সীমিত রাখা হচ্ছে।
শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাসহ সকল পর্যায়েই ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ১৭ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। (অবশ্য এই হার প্রায় শতভাগ হওয়া খুবই সম্ভব ছিল)। বিভিন্ন স্তরে নারী শিক্ষার অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লিঙ্গসমতা অর্জিত হয়েছে। উচ্চতর পর্যায়েও শিক্ষায় মেয়েদের অগ্রগামিতা প্রশংসনীয়; এমনকি কৃষিশিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত, শিক্ষকসংখ্যা তো অতি নগণ্য। বর্তমানে চিত্র খুবই ভিন্ন, কোনো কোনো বিভাগে নারী শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশের বহু নারী এখন উন্নত বিশ্বের অনেক প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। দেশের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নারী।
শিক্ষার সকল স্তরেই সংখ্যাগত বিপ্লব ঘটে গেছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৭১ সালের মাত্র ৬ থেকে ২০২১ সালে ১৫০-এর ওপরে। অবশ্য পাশাপাশি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো কোনো বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান প্রশংসিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বর্তমান লেখকের চেয়ারম্যান থাকাকালে) ২০০৯ সালে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন কর্মসূচি নামক একটি বড় মাপের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এটি পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে ভিন্ন নামে পরিচালিত হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কোভিড-১৯ নিয়েও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসনীয় গবেষণা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক গবেষণার সুযোগ বেড়েছে বিগত পাঁচ দশকে। এ ক্ষেত্রে কৃষি গবেষণা ও ওষুধশিল্পে অগ্রগতির কথা বলা যায়। বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্য, মৎস্য, মাংস ও দুগ্ধ উৎপাদনে এগিয়ে গেছে, তা বহুলাংশে কৃষি ও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে গবেষণার উন্নয়নের জন্য সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাকেন্দ্র সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। এ নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার বিসিএএস (বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিস)। এই সঙ্গে স্মরণ করা যায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের এক কাতারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরব ভূমিকার কথা। অবশ্য বলা বাহুল্য, শিক্ষাক্ষেত্রে (এবং তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য), জাতীয় বাজেট ও জিডিপিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বিগত পাঁচ দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যাগত ও গুণগত উন্নতি হলেও অত্যন্ত ক্ষতিকর যে প্রক্রিয়াটি শক্তি অর্জন করেছে, তা হলো সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিকারী নানা ধারার, নানা পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা। ধর্মভিত্তিক সংকীর্ণ শিক্ষার ব্যাপক প্রসার রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের সৃষ্টির চেতনার সঙ্গে এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বেমানান ও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সূত্রপাত ভাষা আন্দোলনে। স্বাধীন এই রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ স্বভাবতই বাংলাদেশের ওপর মূলত নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, বাংলা একাডেমি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও পৃষ্ঠপোষকতা তো অবশ্যই অতীব জরুরি। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অর্জন প্রধানত স্বাধীনতা–উত্তরকালের কৃতিত্ব।
শুধু ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই নয়, বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী ফেব্রুয়ারির বইমেলার (সংগত কারণে বর্তমান বছরে মার্চ-এপ্রিলে) তাৎপর্য ও গুরুত্ব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও বহুমাত্রিক। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রেরণা এই বইমেলা।
শিল্প ও সংস্কৃতি: শিল্পকলা ভাষা, সাহিত্যসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা বিশেষত শিল্পকলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসনামলের মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতীয় উন্নয়নের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়েছিলেন। এর অন্যতম ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রমে প্রণোদনা দেওয়া। এ কাজে তিনি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর অতি আপনজন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। অনুকূল পরিবেশে অতি দ্রুত সফলতার দিকে এগিয়ে যায় এ দেশের চিত্রকলা ও ভাস্কর্যসহ সব সুকুমার শিল্প ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিল্প শাখা। তরুণ মুক্তিযোদ্ধা চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদে ফ্রান্সে উচ্চতর শিল্পশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ক্রমান্বয়ে একজন সত্যিকারের আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদালাভ করেন, ফ্রান্সের গৌরবজনক পদবি লাভ করেন। শিল্পী মনিরুল ইসলাম একই ভাবে স্পেনের স্বীকৃতি লাভ করেন। জাপানে সম্মানিত হন প্রবীণ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন। আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী আন্তর্জাতিক শিল্পমঞ্চে কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন। তা ছাড়া, সম্মিলিতভাবে এ দেশের শিল্পকলা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে দ্বিবার্ষিক এশীয় শিল্পকলা প্রদর্শনী ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের শিল্পকলা মঞ্চে অত্যন্ত সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে (বাদ সেধেছে অবশ্য ২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারি)। একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, ফটোগ্রাফি ও ডিজিটাল আর্ট মাধ্যমে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিদর্শন রাখা সহজ কথা নয়। বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীরা সম্প্রতি অতি মর্যাদাবান ভেনিস বিয়েনালে নিয়মিত অংশ নিতে পারছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পকলায় খুব বড় রকমের সাফল্য এ দেশের নারী শিল্পীদের মেধাবী সৃজনকর্ম।
শিল্পকলার উৎকর্ষ বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে ঢাকা শহরের বেশ কিছু আর্ট গ্যালারি বা শিল্পালয়। এদের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের গ্যালারির তৎপরতা ও পাশাপাশি অতি উন্নতমানের আর্ট পাবলিকেশনের কথা বলতেই হয়। কায়া, চিত্রকসহ আরও কয়েকটি শিল্পালয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
শিল্পীসমাজের একটি সাম্প্রতিক কর্মতৎপরতা বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছে, তা হলো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাঙালির জাতীয় চরিত্র নির্মাণে এ ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতার বিকল্প নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে করোনার মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতীকী উদ্যাপন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর নেতৃত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিকূল পরিবেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু করেছিলেন ছায়ানটের নেতারা।
শেষের কথা
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার দেশের সাফল্যে আমি আমার বৃদ্ধ বয়সেও প্রচণ্ডভাবে উজ্জীবিত হই, কিন্তু একই সঙ্গে ভয়ানকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন দিবসেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিশাল শক্তি প্রদর্শনে ও ভৌত উন্নয়নের ইতিবাচক সাফল্যের পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুষঙ্গরূপী ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্যের বাস্তবতায়। এসব সত্ত্বেও আমি মনে করি পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও অনেক এগোবে।
নজরুল ইসলাম
শিক্ষাবিদ, নগরবিদ ও শিল্প সমালোচক
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫