Ajker Patrika

হাকালুকি হাওরের মাটি লুট

  • ৩০ শতক জমির মাটি ৪-৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়
  • বর্তমানে হাওরে ২৩৮টি বিল থাকলেও আগে ছিল আরও বেশি
  • আমরা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করি: মাটি বিক্রেতা
  • মাটি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে: ইউএনও
মাহিদুল ইসলাম,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) 
Thumbnail image
হাকালুকি হাওরের মাটি কেটে ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে গন্তব্যে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাকালুকি হাওর। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। বর্তমানে হাওরে ২৩৮টি বিল থাকলেও আগে ছিল আরও বেশি। সম্প্রতি নানান সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ এ হাওর। দখলের পাশাপাশি প্রকাশ্যে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এর মাটি। এতে কমেছে আগের চেয়ে মাছের উৎপাদনও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারিভাবে হাওরের বিলগুলো মাছের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদারেরা শীত মৌসুমে বিল শুকিয়ে গেলে অবাধে মাটি বিক্রি করছেন। এ ছাড়া বোরো ধানের জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি হচ্ছে। প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা আইনের তোয়াক্কা না করেই হাওর থেকে মাটি বিক্রি করলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জুড়ী উপজেলা অংশের পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরের বুক চিরে রাস্তা করা হয়েছে মাটি পরিবহনের জন্য। এক্সকাভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে ট্রাক, ডাম্প ট্রাকযোগে পরিবহন করা হচ্ছে। এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। হাওরের গভীর থেকে মাটি কাটার ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে এর পরিবেশ। হাওরের শুধু জুড়ী উপজেলা অংশে নয়, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও এভাবে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

হাওর পারের বাসিন্দারা বলেন, হাকালুকি হাওর ছিল একটা সময় গরিব অসহায় ও মৎস্যজীবী মানুষের একমাত্র উপার্জনের স্থান। হাওর থেকে মাছ শিকার করে বিক্রি করেই চলত তাদের জীবিকা। তবে গত এক দশক ধরে এই চিত্র পাল্টে গেছে। প্রভাবশালীরা হাওরের বিল ইজারা নিয়ে সেচ দিয়ে কয়েকবার শুকিয়ে মাছ শিকার করেন। যার ফলে আগের চেয়ে হাওরে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। এই হাওরের একেকটি বিলের আয়তন ৫০০ একর থেকে ১ হাজার একরের ওপরে। মাছ নিধনের পর বিল, জলাশয় ও ধানি জমি শুকিয়ে গেলে চলে মাটি বিক্রির ধুম। প্রতি ৩০ শতক জমির মাটি ৪-৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। যাঁরা ইজারা নেন তাঁরা মাছ বিক্রির কথা থাকলেও মাটি বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাওর থেকে মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত এক ট্রাকচালক বলেন, ‘হাওরের ভেতরে মাটি কাটা হয়, যাতে প্রশাসনের কেউ না যেতে পারে। ফুট হিসাবে মাটি বিক্রি করা হয়। ৩০ শতক জমির মাটি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। যাঁরা মাটি বিক্রি করেন তাঁদের বাড়তি আয় এটি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি বিক্রেতা বলেন, ‘হাওরে যখন আবার পানি আসবে, তখন এগুলো ভরাট হয়ে যাবে। আমাদের মাটি বিক্রি করার জন্য অনেকেই টাকার লোভ দেখান। আর আমরা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করি।’

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, হাকালুকি হাওর থেকে যাঁরা অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। কয়েক দিন ধরে আমরা তাঁদের ধরার চেষ্টা করছি। মাটি পরিবহনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না। হাওর থেকে যাঁরা মাটি নিচ্ছেন, খোঁজ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত