Ajker Patrika

জকিগঞ্জে তিনটি এলাকায় কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চল

সিলেট প্রতিনিধি
ডাইক ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। জকিগঞ্জ বাজারও ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডাইক ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। জকিগঞ্জ বাজারও ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিলেটের জকিগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও ভারতের বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে ডাইক ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে আশপাশের গ্রামাঞ্চল।

রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের ডাইক, ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল গ্রামের ডাইক এবং সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের ডাইক ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া পৌর শহরের কাছাকাছি কেছরী গ্রামের ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে পানি ঢুকছে। মাইজকান্দী গ্রামের ডাইকের একটি অংশ ধসে পড়েছে কুশিয়ারা নদীতে।

জকিগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক; সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর; খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক এলাকা এবং বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দী ও আমলশীদসহ অর্ধশতাধিক পয়েন্টে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। স্থানীয়রা বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রারাই গ্রামে প্রায় ১০০ ফুট, বাখরশালে ৪০–৫০ ফুট এবং লোহারমহলে ৩০–৪০ ফুট ডাইক ভেঙে গেছে। এসব এলাকায় প্লাবন শুরু হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়লে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বসতবাড়িও ডুবে যেতে পারে। ইতোমধ্যে জকিগঞ্জ বাজার প্লাবিত হয়েছে।

ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে নদীতীরবর্তী অনেক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। রোববার রাত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছেন অনেকেই।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

নদীতীরবর্তী একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, আগে থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় জকিগঞ্জে বারবার বন্যা দেখা দেয়। রোববার থেকে নদীর পানি বাড়লেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তৎপর হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বালুর বস্তাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ বাজারেও পানি ঢুকেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও মানুষ পানিবন্দি হয়নি। আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটর করছে।’

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮ মিলিমিটার।

পাউবো সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট অঞ্চলের তিনটি নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা নদী (কানাইঘাট): ৮৭ সেন্টিমিটার ওপরে, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ১৮৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার, লোভা নদীর লোভাছড়ায়: ১১১ সেন্টিমিটার ওপরে।

অন্যদিকে, সুরমা (সিলেট পয়েন্টে): ৪২ সেন্টিমিটার নিচে, কুশিয়ারা (শেরপুর): ৮ সেন্টিমিটার নিচে, ডাউকির জাফলং: ২৯৬ সেন্টিমিটার নিচে, সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট: ১০৭ সেন্টিমিটার নিচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবোর সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা) ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত দুই দিন ধরেই কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার প্রায় ২ মিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ২–৩ জায়গায় ভেঙে পানি ঢুকছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমেছে, আশা করা যায়, দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে এত লম্বা বাঁধে বালুর বস্তার চাহিদা পূরণ করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার

অপমানিত সহকর্মীর ছাদ থেকে লাফ, শ্রমিক বিক্ষোভে রণক্ষেত্র শ্রীপুর, আহত শতাধিক

দেশ টিভির কার্যালয়ে ১২০০ বস্তা চাল পাঠানো প্রয়োজন: উপদেষ্টা আসিফ

সরকারি কর্মচারীদের ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

জি-৭ সম্মেলন: টানা ৫ বছর বিশেষ অতিথি, এবার আমন্ত্রণ পেলেন না মোদি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত