Ajker Patrika

ক্লাস না নিয়ে দুই প্রাথমিক শিক্ষক ঘুমে, আরেকজন মগ্ন মোবাইল গেমসে 

মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ
Thumbnail image

ক্লাস শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। তবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো ক্লাসে শিক্ষক নেই। উল্টো দুই শিক্ষক ঘুমিয়ে ও একজন মোবাইলে গেমসে মগ্ন। এমন চিত্র দেখা গেছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের দেওয়ান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। 

অভিযোগ রয়েছে, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসলেও শিক্ষকদের খায়েশ-মর্জি ছাড়া শুরু হয় না কোনো ক্লাস। 

সরজমিনে আজ সোমবার দেওয়ান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকদের কক্ষে বসে ঘুমিয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক জুলেখা আক্তার ও শিমা রানী। আর ক্লাস না নিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলায় ব্যস্ত ছিলেন আরেক সহকারি শিক্ষক বিমল অধিকারী। 

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘স্যার-ম্যাডাম এখনো ক্লাসে আসেন নাই, একবার এসে সবাইকে নীরব থাকার নির্দেশ দিয়ে চলে গেছেন। এরপর আর কোনো ক্লাসই হয়নি।’ 

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, খেয়াল-খুশিমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান করান শিক্ষকেরা। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসই হয়না, নেওয়া হয়না শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতি স্বাক্ষর। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রোকেয়া বেগম নামে একজন থাকলেও তিনিও দুইদিন ধরে আছেন ছুটিতে। 

স্থানীয়রা জানান, এভাবে খেয়াল-খুশিমতো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালে শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত কখনোই হবে না। এমন দায়িত্বহীন কাজের শাস্তি দাবি করেন তাঁরা। 

দেওয়ান নগর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ম্যাডামরা খুব বদ রাগী, তাঁরা ক্লাসে গেলেও শুধু পড়া দিয়ে ছাত্রদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন, আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে দেই মানুষ হওয়ার জন্য। কিন্তু এসব করলে আমাদের সন্তানেরা কি শিখবে।’ 

দেওয়ান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোবাইল গেমসে ব্যস্ত আরেক শিক্ষক। ছবি: আজকের পত্রিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জুলেখা আক্তারকে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘শরীরটা ভালো নেই তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আজ ক্লাস নিতে পারিনি, তবে আমি প্রতিদিন ক্লাস নেই। কাজে অবহেলা করি না।’ 

সহকারি শিক্ষক বিমন অধিকারী একপ্রকার শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ দিয়ে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী নেই (যদিও শিক্ষার্থী ছিল)। প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা গুজব ছড়িয়েছে যে, বিদ্যালয় বন্ধ। তাই আজকে শিক্ষার্থীরা আসেনি।’ 

তবে তিনি কেন মোবাইলে গেমস খেলছিলেন সেটি জানতে চাইলে বলেন, ‘বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসেনি তাই ফ্রি-টাইমে গেমস খেলছিলাম।’ 

দেওয়ান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা ছুটিতে থাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় দুই দিনের ছুটিতে আছি। ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতেছি। তবে আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষকদের ফোন দিয়ে খবরাখবর নেই। তাঁরা আমাকে বলেছেন, ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু এখন শুনতেছি, তাঁরা ঘুমে ও গেমস খেলছিলেন। এটি খুব খারাপ হয়েছে, এ বিষয়ে বিহীত ব্যবস্থা নেব।’ 

দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন কুমার পালা বলেন, ‘এমন ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেব। ক্লাস না নিয়ে দায়িত্ব অবহেলা করলে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত