Ajker Patrika

সেচের অভাবে ধান উৎপাদন অর্ধেকে, উদ্বিগ্ন কৃষক

  • অনাবাদি থাকার সম্ভাবনা প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি।
  • ১০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচনালা ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে।
  • পানির অভাবে অনেক জমি আবাদ করা যায় না: কৃষক
মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ, (মৌলভীবাজার) 
Thumbnail image
ভরপুর পানি থাকার কথা থাকলেও ভিন্ন চিত্র সেচনালায়। খনন না করায় এই পরিস্থিতি। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের মনু ব্যারাজের অন্তর্ভুক্ত মাতারকাপন স্লুইসগেট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওর অধ্যুষিত রাজনগর ও সদর উপজেলায় পানিসংকটের কারণে ধান উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মনু নদ সেচ প্রকল্প খনন না করায়। ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, ১০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেচনালা ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা খনন না করায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর বোরোর জমি অনাবাদি থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

কৃষকেরা জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে পানিসংকটের সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। নালা খনন করা না হলে যত দিন যাবে পানির সমস্যা আরও বাড়বে। তাঁদের দাবি, এ সমস্যা সমাধানে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

জানা যায়, প্রায় ৩৮ বছর আগে সদর ও রাজনগর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ দিতে কাউয়াদীঘি হাওর নিয়ে মনু নদ সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পে সেচের আওতায় বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। সেচ-সুবিধা দিতে তৈরি করা হয় ১০৫ কিলোমিটার সেচনালা, এই সেচনালা নতুন করে খননের অভাবে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে প্রতিবছরই বোরো মৌসুমে সেচের পানি নিয়ে হাওরপাড়ের হাজার হাজার কৃষকদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়।

কৃষকেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্পহাউসের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কারণে আকস্মিক বন্যা থেকে বোরো ফসল রক্ষা পেলেও বোরো মৌসুমে পানির সংকটে বেড়েছে ভোগান্তি। দীর্ঘদিনের পুরোনো এই সেচনালা খনন ও সংস্কারের অভাবে চাষে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় থাকা সব সেচনালা জরুরি ভিত্তিতে খনন করা না হলে চাষাবাদ করা যাবে না। আর এই জমিগুলো পতিত হিসেবেও পড়ে থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান কৃষকেরা।

হাওরপাড়ের কৃষক আনোয়ার মিয়া ও জাহিদ আহমেদ বলেন, এখানকার কৃষকের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হলো বোরো ধান। ধান বিক্রি করে পরিবারের সব খরচ চালাতে হয়। বোরো মৌসুমের তিন মাস জমিতে সেচ দিতে হয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো এই তিন মাস সরাসরি সেচ দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফিতা পাইপ দিয়ে কয়েক হাজার ফুট দূর থেকে জমিতে পানি দিতে হয়। পানির অভাবে বোরো জমি ফেটে যায়। অনেক সময় জমিতে সেচ দেওয়ার মতো পানি নদ ও নালায় থাকে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক বলেন, ধানের চারা রোপণ করার পর অনেক জায়গায় পানি পাওয়া যায় না। অনেক জায়গা পানির অভাবে চাষ করা যায় না। যেসব জমিতে পানির সংকট দেখা দেয় সেসব জমিতে ধান উৎপাদন কম হয়। আগে একরপ্রতি ৪০-৪৫ মণ ধান উৎপাদন হতো। আর পানির সংকট থাকায় এখন একরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়া যায়।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় থাকা সেচনালা খনন ও সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন করে এলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বোরো মৌসুমে হাওরপাড়ের কৃষকদের পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। তাঁদের দূর থেকে পাইপ দিয়ে জমিতে পানি দিতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বোরো ধান চাষের সুবিধার জন্য নালা খনন করার জন্য আমরা পাউবোকে চিঠি দিয়েছি। পানি সমস্যার সমাধান হলে হাওরপাড়ের কৃষকেরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ধান চাষ করতে পারবেন।’

শামছুদ্দিন আরও বলেন, জেলায় এবার বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমি। উৎপাদিত ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫১০ টন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো সমস্যা হবে না।

মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত