Ajker Patrika

মায়ের সঙ্গে আর কথা হলো না মোস্তাকের

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১০: ৩৪
মায়ের সঙ্গে আর কথা হলো না মোস্তাকের

‘বিয়ানে খইছে, মাই জুম্মাত জাইমু। জুম্মা থাকি আইয়া মাতমুনে (কথা বলব) তুমার লগে। আইচ্ছা। আছরের বাদে শুনি আমার বাইচ্ছা শেষ। ও আল্লাহরেবা, ও বন্দুক দি মারছে রেবা। আমার সব ছোট ছেলে রেবা। ও আল্লাহ।’ বিলাপ করতে করতে এভাবেই বলছিলেন নিহত মোস্তাক আহমদের মা ষাটোর্ধ্ব মায়া বেগম। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনোভাবে তাঁকে শান্ত করতে পারছেন না স্বজনেরা। 

গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে হবিগঞ্জের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন পথচারী মোস্তাক আহমদ। তিনি হবিগঞ্জে বিদ্যুৎশ্রমিকের কাজ করতেন। তাঁদের বাড়ি সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরীপুরে। 

গত শনিবার বেলা ২টার দিকে গৌরীপুরে মোস্তাকদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন বড় বোন শাহানা বেগম। আর বলছিলেন, ‘আমার ভাইরে পুলিশে গুল্লি করি মারছে। আমরার বুক খালি করিলিছে। আল্লাহ ও আল্লাহ’ বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।  

স্বজনেরা জানান, প্রায় এক যুগ আগে মারা যান মোস্তাকের বাবা আব্দুল কাদির। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে মোস্তাক সবার ছোট ছিলেন। আদরের মোস্তাককে হারিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের সবাই পাগলপ্রায়। মোস্তাকের পরিবার বর্তমানে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ধনপুর গুচ্ছগ্রামে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছে। 

চাচাতো ভাই রাজা বলেন, ‘মোস্তাকের বিয়ের জন্য আমরা মেয়ে দেখা শুরু করেছিলাম। এখন তো আমার ভাই-ই চলে গেল।’ তিনি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, মোস্তাক মারা যাওয়ার আগে কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সেটা বলতে চেয়েছিল। শুধু বলেছে, ‘পুলিশের যে সাদা গাড়ি (এপিসি), ওউটা থেকে গুল্লি করছে।’

মোস্তাকের বড় ভাই ময়না মিয়া বলেন, ‘জুমার নামাজের পর দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে জুতা লওয়াত গিয়েছিল। জুতা লওয়ার সময় দুইওবায় হাল্লা-গোল্লা লাকছে। বাদে গুল্লিবিদ্ধ ওইছে। ওতটুকু আমরা জানি।’

গৌরীপুরের বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ‘মোস্তাক অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। সে একাধিক কাজও জানত।’

মোস্তাকের বন্ধু জমির উদ্দিন বলেন, ‌‘তারে আমি নিজে নিয়ে এই কাজ শিকাইছি। যেদিন যায়, আমি নিজে গাড়িতে তুলে দেই। যখন শুনলাম সে মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে আমরা সেখানে যাই। আমরা চেয়েছি লাশ যেভাবে আছে সেভাবে (ময়নাতদন্ত ছাড়া) নিয়ে আসতে। আমাদের অনেক দৌড়াদৌড়ি করাইছে। পরে বলছে সকাল ৭টায় নিয়ে যেতে। সকালে গিয়ে দেখি লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।’

শনিবার বাদ জোহর গৌরীপুর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মোস্তাকের মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

এর আগে শনিবার সকালে হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে মোস্তাকের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মমিন উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর পেছন দিক থেকে ডান হাতের বাহুতে অর্থাৎ বগলের নিচে গুরুতর জখম ছিল। সেই জখমের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মোস্তাক মারা যান। জখমটি গুলির মতোই বলা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত