Ajker Patrika

মৌলভীবাজারে বন্যায় নষ্ট হয়েছে আমনের চারা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ, (মৌলভীবাজার) 
মৌলভীবাজারে বন্যায় নষ্ট হয়েছে আমনের চারা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

মৌলভীবাজারে এবারের বন্যায় কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় রোপণকৃত আমন ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিগুণ দামে চারে কিনে আবার রোপণ করছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার অনেক কৃষক টাকার অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না। ফলে ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন সে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। 

জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, সম্প্রতি বন্যায় পাকা আউশ ধান ও আমন ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একর প্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে আমন ধানের চারা রোপণ করেন তাঁরা। বন্যায় ধানের চারা পচে নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিগুণ দামে আমন ধানের চারা কিনে অনেক কৃষক রোপণ করছেন। আগের এক হাজার টাকার চারা এখন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কিনে আবার রোপণ করতে হচ্ছে। এতে নতুন করে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। দুই বার আমন ধানের চারা রোপণের কারণে একর প্রতি খরচ ২০ হাজার টাকার ওপরে পরেছে। 
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় ৪০ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির আমন ফসল তলিয়ে যায়। বন্যার পানি কমার পর দেখা যায় ১৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর আমন ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ টাকার মূল্যে ১২৭ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের বিভিন্ন ধানের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। অনেক কৃষক হবিগঞ্জ জেলা থেকে চারা সংগ্রহ করে আবার রোপণ করছেন। 

সরেজমিনে জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলা ঘুরে আমনের এমন নষ্ট হওয়া চারা চোখে পড়ে। দ্বিগুণ টাকা খরচ করেও ধানের চারা মিলছে না। অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে আবার রোপণ করছেন। ৩০ শতক জমিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন সবকিছু মিলে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। দরিদ্র কৃষকেরা ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। 

বন্যায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রোপণ করা আমন ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকারাজনগর উপজেলার কৃষক তাজুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, ‘আমার দুই একর জমির আমন ফসল পচে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। দুই একর জমিতে আমার প্রায় ২১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের চারা সংগ্রহ করে আবার নতুন করে রোপণ করব, এতে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। অনেক কৃষক অতিরিক্ত খরচের ভয়ে ধান রোপণ করছেন না।’

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষক কায়কোবাদ আহমেদ বলেন, ‘আমার প্রায় দেড় একর জমিতে রোপণ করা আমনের চারা ও এক একর জমির পাকা আউশ ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ঋণ করে জমিতে ধান চাষ করে ছিলাম। এখন জমিতে কিছুই নেই, আছে শুধু ঋণের চাপ।’ 

কমলগঞ্জ উপজেলার শহীদনগর বাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে টমটম যোগে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকামৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলায় বন্যায় ১৪ হাজর ৫৫১ হেক্টর জমির আমন ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। পাকা আউশ ফসলসহ বিভিন্ন সবজি পচে নষ্ট হয়েছে। অনেক কৃষক বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে আবার আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে ধানের বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।’ 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা হয়েছে মৌলভীবাজারের সব উপজেলায়। ধলাই নদীর ৫টি স্থানে ও মনু নদীর ১১ জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কিছু রাস্তা পানির নিচে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। তলিয়ে যায় পাকা আউশ ফসল, আমন ধানের চারা ও মাছের ঘের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত