Ajker Patrika

সাপের ছোবলে গৃহবধূর মৃত্যুর পরও ওঝা ডেকে সারারাত ঝাঁড়ফুক 

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১৭: ২৫
সাপের ছোবলে গৃহবধূর মৃত্যুর পরও ওঝা ডেকে সারারাত ঝাঁড়ফুক 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিষাক্ত সাপ ছোবল দেয় ঝর্ণা সিংহা (২৭) নামের এক গৃহবধূকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর বাড়ি এনে বিকেল থেকে শুরু করে সারা রাত কবিরাজ-ওঝা দিয়ে করা হয়েছে ঝাড়ফুঁক। এরপর আজ বুধবার সকালে আবার লাশ নিয়ে তাঁরা রওনা দিয়েছেন কুলাউড়া মিশনের দিকে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি গ্রামে সাপে কাটে ওই গৃহবধূকে। ঝর্ণা সিংহা একই গ্রামের বাবুল সিংহের স্ত্রী। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ‘সাপে কামড় দিলে মানুষ ২১ দিন বেঁচে থাকে’ তাই তারা ঝাড়ফুঁক করাচ্ছে। 

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে ঝর্ণা সিংহা গরুর খাবারের জন্য বাড়ির গোয়াল ঘরের পাশ থেকে কচু কাটতে যান। কচু কাটার সময় ঝর্ণা সিংহার বাম হাতে বিষধর সাপে ছোবল মারে। সাপে ছোবল মারার পর ঝর্ণা ঘরে এসে লোকজনকে সাপে ছোবল দেওয়ার কথা বললে পরিবারের লোকজন কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে চিকিৎসার জন্য দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর সাপের কামড়ের ইনজেকশন দিলেও বাঁচানো যায়নি ঝর্ণাকে। কিন্তু মৃত্যুর খবর বিশ্বাস হয়নি পরিবারের লোকজনের। তাই তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে কবিরাজ-ওঝা এনে ঝাড়ফুঁক করাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টা ঝাড়ফুঁক করে ব্যর্থ হয়ে চলে গেছেন বিভিন্ন ওঝা। তবুও মৃত ঝর্ণা জীবিত আছে বলে সৎকার করছে না পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, ঝর্ণাকে সাপে কামড় দেওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়ার হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু ঝর্ণার পরিবার ও এলাকার অনেকেই বলছে, ‘সাপে কামড় দিলে মানুষ ২১ দিন বেঁচে থাকে’ তাই ঝাড়ফুঁক চলছে।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও ফয়ছয়ুজ্জামান বলেন, ঝর্ণাকে হাসপাতালে আনার পর আমরা সাপের কামড়ের ইনজেকশন দিই। তবে এর আগেই সাপের বিষ ঝর্ণার শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

ঝর্ণার পরিবারের সদস্য প্রদীপ সিংহ বলেন, ‘বিষাক্ত সাপে কামড় মারার পর ঝর্ণা ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। এরপর আমরা মৌলভীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইনজেকশন দেওয়ার পর মারা যায়। বাড়িতে আনার পর অনেকই বলেন ঝর্ণা বেঁচে আছে—এ জন্য আমরা ঝাড়ফুঁক করাচ্ছি।’

 এ বিষয়ে নিহতের ননদ শিবলী রাণী সিনহার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের বাড়িতে ৪ জন ওঝা এসে বৌদিকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে গেছে। রাতে বৌদির শরীর শক্ত হয়ে গেলেও সকাল থেকে বৌদির শরীর নরম হয়ে গেছে। তার হাত-পা এখন নাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তাই আমরা দাহ না করে বৌদিকে নিয়ে কুলাউড়া মিশনে যাচ্ছি।’ 

মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাপের কামড়ে ঝর্ণার মৃত্যু হয়েছে—এ কথা পরিবারের লোকজন বিশ্বাস করছে না। তারা সারা রাত ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করেছে। আমি সকালে তাদের সিলেট হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ কথা বলে, যদি মেডিকেল পরীক্ষা করে ডাক্তার ঝর্ণাকে মৃত ঘোষণা করে তাহলে তোমার সৎকার করো। পরিবারের লোকজন এখন কি করে দেখার বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত