জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণা
অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করলেই ক্যারিয়ার ভালো হবে—এই ধারণা এখন আর আগের মতো শক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক কোর্স এখনো ১০-২০ বছর আগের সিলেবাস আঁকড়ে ধরে আছে। অথচ অনেক কিছুই এখন ইউটিউবে বিনা মূল্যে শেখা যায় কিংবা স্বল্প খরচের অনলাইন কোর্সেই পাওয়া যায় দরকারি দক্ষতা।
শুধু বড় ডিগ্রি নয়, বরং সময় ও শ্রম কীভাবে খরচ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জন করছেন, সেই ‘ভ্যালু ক্রিয়েশন’ই এখনকার দিনে সফলতার মূলমন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় ১৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার বিষয়ের ওপর একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে চাকরি বা পেশাজীবনে কতটা আর্থিক সুবিধা বা লাভ আরওআই (রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট) পাওয়া যায়। অর্থাৎ, কোন বিষয় থেকে পড়ালেখায় খরচ অনুযায়ী বেশি আয়ের সম্ভাবনা থাকে, আর কোন বিষয় তুলনামূলক কম লাভজনক। এই গবেষণা অনুযায়ী এমন ১২টি ডিগ্রি দেওয়া হলো, যেগুলোর আরওআই তুলনামূলক কম। তবে গবেষণাটিতে বিকল্প উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে।
এথনিক ও জেন্ডার স্টাডিজ
বিষয়টি মূলত জাতি, জাতিগত পরিচয় এবং লৈঙ্গিক-সংক্রান্ত সামাজিক ইস্যুর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে গুরুত্ব দেয়। তবে শিক্ষা খাতে বা অ্যাকটিভিজমের বাইরের চাকরির বাজারে এই ডিগ্রির সরাসরি ব্যবহারিক চাহিদা তুলনামূলক কম। কারণ, এখানে বেশির ভাগ প্রাথমিক চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত বা পেশাগত দক্ষতা সরাসরি শেখানো হয় না।
এই বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে অ্যাডভোকেসি, শিক্ষা, গণমাধ্যম, ব্যবসা, সরকার, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কাজ করা সম্ভব। ব্যবসার ক্ষেত্রে, ডাইভারসিটি ও ইনক্লুশন ম্যানেজার বা সিএসআর স্পেশালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যায়। এ ছাড়া নীতিনির্ধারণ, সামাজিক সেবা, আইন এবং নৈতিক এআইসহ বিভিন্ন খাতে এই ডিগ্রির ব্যবহার বাড়ছে।
সংগীত ও পারফর্মিং আর্টস
এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। মাত্র অল্প কিছুসংখ্যক শিল্পীই অর্থনৈতিকভাবে সফল হন, বাকিদের আয়ের ধারাবাহিকতা কম এবং সুযোগও সীমিত থাকে।
সংগীত ডিগ্রি পারফরম্যান্স ছাড়াও নানা পথে পেশা গড়ার সুযোগ দেয়—যেমন মিউজিক প্রোডিউসার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা ভিডিও গেম, সিনেমা ও টিভির জন্য কম্পোজার। শিল্পী ব্যবস্থাপনা, কনসার্ট প্রোমোশন কিংবা সংগীত শিক্ষকতা ও গবেষণায়ও সফলতা অর্জন সম্ভব। মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে রেডিও ডিজে বা পডকাস্ট হোস্ট হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়।
আর্ট হিস্ট্রি
আর্ট হিস্ট্রি বিষয়টি সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে চাকরির বাজারে এর সুযোগ তুলনামূলক কম এবং বেতনও সাধারণত কম। কেউ যদি শিক্ষকতা বা জাদুঘরে কাজ করতে না চান, তাহলে বাস্তব চাকরির সুযোগ অনেক কমে যায়।
চাকরির সম্ভাবনা বাড়াতে এই বিষয়ে ডিগ্রিকে মিউজিয়াম স্টাডিজ বা বিজনেস ডিগ্রির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে পেশাগত ক্ষেত্র প্রসারিত হয় এবং কর্মজীবনে অগ্রগতির পথ সহজ হয়।
ফ্যাশন ডিজাইন
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা কঠিন। অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার; যেমন কোকো শ্যানেল, কার্ল লেগারফেল্ড কিংবা রালফ লরেন—কলেজ ডিগ্রি ছাড়াই তাঁরা সফল হয়েছেন। অনেকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে অথবা নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন।
একটি পেশাগত পোর্টফোলিও তৈরি করুন, হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং ইন্টার্নশিপ নিন। ব্যবসায়িক দক্ষতা থাকলে ফ্যাশন উদ্যোক্তা হিসেবেও সফলতা অর্জন সম্ভব।
দর্শন
দর্শন মানুষকে যুক্তি ও নৈতিকতা বিষয়ে গভীর চিন্তা করতে শেখায়। এটি আলোচনার দক্ষতা, যোগাযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও এর সরাসরি চাকরির বাজার তুলনামূলকভাবে সীমিত এবং আয় অনেক সময়ে কম।
দর্শন নিয়ে আইন, ব্যবসায়িক নৈতিকতা, এআই নীতিমালা, মানবাধিকার, ডিজিটাল প্রাইভেসি এবং পাবলিক পলিসির মতো ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। এ ছাড়া ব্র্যান্ড সুরক্ষা, ইউজার ইথিকস বা এআই নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত কাজেও দর্শনের ব্যবহার বাড়ছে।
রিলিজিওন বা থিওলজি
বিষয়টি সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তবে একাডেমিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে এই ডিগ্রির আর্থিক পরিসর কম এবং ক্যারিয়ারের পরিধিও সীমিত হতে পারে।
এ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করতে পারেন অথবা হাসপাতাল, সেনাবাহিনী, কারাগার, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা করপোরেট পরিবেশে আধ্যাত্মিক সাহায্য দিতে পারেন। এ ছাড়া কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও মানবিক সহায়তাকর্মী, গবেষক, কারিকুলাম ডেভেলপার, সাংবাদিক, শিক্ষক, কাউন্সেলর হিসেবে চাকরি এবং সমাজসেবামূলক কাজেরও সুযোগ রয়েছে।
এই ডিগ্রি নিয়ে আরও এগোতে চাইলে আইন, নৈতিকতা বা পাবলিক পলিসি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নতুন পেশাগত দিক উন্মোচন করা সম্ভব; পাশাপাশি জাদুঘর বা সাংস্কৃতিক সংস্থায় কাজ, ইন্টারফেইথ সম্পর্ক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কিংবা করপোরেট নৈতিকতা পরামর্শক হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। মোটকথা, বিষয়টি সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিক উন্নয়নের বহু দিকেই অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করে।
ফটোগ্রাফি
ফটোগ্রাফিতে ডিগ্রি থাকলে নির্ধারিত কাঠামোয় শেখার সুযোগ পাওয়া যায় ঠিকই, তবে এই ক্ষেত্রে সফলতার জন্য তা আবশ্যক নয়। কারণ, এটি একটি ফ্রিল্যান্স-নির্ভর পেশা। অনেক সফল ফটোগ্রাফার নিজের চেষ্টায়, অনলাইন রিসোর্স ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন। এই পেশায় সফলতা নির্ভর করে আপনার পোর্টফোলিও, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও যোগাযোগ ক্ষমতার ওপর। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং প্রয়োগ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইন কোর্স করা, শক্তিশালী পোর্টফোলিও গঠন এবং বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়া।
সমাজবিজ্ঞান
সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজের আচরণ ও কাঠামো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। তবে উচ্চ বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করার জন্য প্রায়ই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে এই ডিগ্রি বহুমুখী দক্ষতা দেয়, যা শিক্ষা ছাড়াও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা যায়।
সামাজিক সেবা, কমিউনিটি ও যুব উন্নয়ন, মার্কেট রিসার্চ ও ডেটা বিশ্লেষণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গণমাধ্যম, জননীতি বিশ্লেষণ, নগর-পরিকল্পনা, করপোরেট প্রশিক্ষণ, অপরাধ বিশ্লেষণ, আইন সহকারী বা গবেষক হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
ইংরেজি সাহিত্য
ইংরেজি সাহিত্যে ডিগ্রি থাকলেও শুধু এটুকু যথেষ্ট নয়; লেখার দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমই বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রের চাকরিগুলোর সংখ্যা কম এবং প্রতিযোগিতা বেশি, ফলে শুরুতে আয় কম হতে পারে।
কনটেন্ট রাইটিং, এসইও রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, ডিজিটাল জার্নালিজম, কপিরাইটিং, স্ক্রিপ্টরাইটিং, প্রুফরিডিং, সাহিত্য সম্পাদক, পাবলিশার, পিআর স্পেশালিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট, পডকাস্ট প্রযোজক—এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে; যেখানে এই দক্ষতা ব্যবহার করা যায়।
কমিউনিকেশনস
কমিউনিকেশনস বা গণযোগাযোগে পাঠ্যক্রমগুলো সাধারণত তাত্ত্বিক ও ইতিহাসভিত্তিক। এই খাত সৃজনশীল হলেও অধিকাংশ কাজের বেতন কম এবং প্রতিযোগিতা অনেক বেশি; বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শুরুতে।
সাংবাদিকতা, পিআর, করপোরেট কমিউনিকেশন, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, টিভি বা রেডিও প্রোডাকশন, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ইউটিউবার, পডকাস্টার, পাবলিক স্পিকারসহ অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
ইতিহাস
ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনা করলে অতীত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জিত হয়। তবে একাডেমিক বা জাদুঘরের বাইরে উচ্চ বেতনের কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
গবেষণা, জনসেবা, মিডিয়া, বিজনেস, গেম ডিজাইন, পডকাস্টিং, টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রের ইতিহাস উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা যায়। এ ছাড়া পাবলিক সার্ভিস ও তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট নির্মাণেও এই ডিগ্রির অনেক ব্যবহার রয়েছে।
লিবারেল আর্টস
লিবারেল আর্টস ডিগ্রি অনেক বিষয়ের মিশ্রণ হলেও এতে নির্দিষ্ট কোনো টেকনিক্যাল স্কিলের ঘাটতি থাকে। ফলে উচ্চ আয় নিশ্চিত করা একটু কঠিন হয়।
আইন, ডিজিটাল মিডিয়া, সাংবাদিকতা, মানবসম্পদ, ইউএক্স রিসার্চ, ডেটা অ্যানালিটিকস, টেকনিক্যাল রিক্রুটার বা ডিজিটাল হিউম্যানিটিজে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।
নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব
নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বে ডিগ্রি থাকলে মানব ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে গভীর জ্ঞান পাওয়া যায়। তবে এই ক্ষেত্রের কাজ সাধারণত গবেষণা ও শিক্ষানির্ভর হয়, যা তুলনামূলক কম বেতনের।
ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজিস্ট, কূটনীতিক, জাদুঘর কিউরেটর, আর্কাইভিস্ট, ট্যুর গাইড, ইউএক্স রিসার্চার, এনজিও কর্মী, পলিসি অ্যানালিস্ট, লেখক ও ভ্রমণভিত্তিক কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
কালিনারি আর্টস
রান্না একটি দক্ষতাভিত্তিক পেশা, যেখানে স্বাদ ও অভিজ্ঞতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিগ্রি না থাকলেও সফল শেফ হওয়া সম্ভব।
রেস্টুরেন্টে কাজ করা, ক্যাটারিং ম্যানেজার, পার্সোনাল শেফ, ফুড স্টাইলিস্ট, রেসিপি ডেভেলপার, ফুড ক্রিটিক, ফুড সায়েন্টিস্ট, কুকিং ইনস্ট্রাক্টর, রেস্টুরেন্ট কনসালট্যান্ট, ফুড পলিসি অ্যানালিস্ট ইত্যাদি কাজের সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করলেই ক্যারিয়ার ভালো হবে—এই ধারণা এখন আর আগের মতো শক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক কোর্স এখনো ১০-২০ বছর আগের সিলেবাস আঁকড়ে ধরে আছে। অথচ অনেক কিছুই এখন ইউটিউবে বিনা মূল্যে শেখা যায় কিংবা স্বল্প খরচের অনলাইন কোর্সেই পাওয়া যায় দরকারি দক্ষতা।
শুধু বড় ডিগ্রি নয়, বরং সময় ও শ্রম কীভাবে খরচ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জন করছেন, সেই ‘ভ্যালু ক্রিয়েশন’ই এখনকার দিনে সফলতার মূলমন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় ১৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার বিষয়ের ওপর একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে চাকরি বা পেশাজীবনে কতটা আর্থিক সুবিধা বা লাভ আরওআই (রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট) পাওয়া যায়। অর্থাৎ, কোন বিষয় থেকে পড়ালেখায় খরচ অনুযায়ী বেশি আয়ের সম্ভাবনা থাকে, আর কোন বিষয় তুলনামূলক কম লাভজনক। এই গবেষণা অনুযায়ী এমন ১২টি ডিগ্রি দেওয়া হলো, যেগুলোর আরওআই তুলনামূলক কম। তবে গবেষণাটিতে বিকল্প উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে।
এথনিক ও জেন্ডার স্টাডিজ
বিষয়টি মূলত জাতি, জাতিগত পরিচয় এবং লৈঙ্গিক-সংক্রান্ত সামাজিক ইস্যুর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে গুরুত্ব দেয়। তবে শিক্ষা খাতে বা অ্যাকটিভিজমের বাইরের চাকরির বাজারে এই ডিগ্রির সরাসরি ব্যবহারিক চাহিদা তুলনামূলক কম। কারণ, এখানে বেশির ভাগ প্রাথমিক চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত বা পেশাগত দক্ষতা সরাসরি শেখানো হয় না।
এই বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে অ্যাডভোকেসি, শিক্ষা, গণমাধ্যম, ব্যবসা, সরকার, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কাজ করা সম্ভব। ব্যবসার ক্ষেত্রে, ডাইভারসিটি ও ইনক্লুশন ম্যানেজার বা সিএসআর স্পেশালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যায়। এ ছাড়া নীতিনির্ধারণ, সামাজিক সেবা, আইন এবং নৈতিক এআইসহ বিভিন্ন খাতে এই ডিগ্রির ব্যবহার বাড়ছে।
সংগীত ও পারফর্মিং আর্টস
এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। মাত্র অল্প কিছুসংখ্যক শিল্পীই অর্থনৈতিকভাবে সফল হন, বাকিদের আয়ের ধারাবাহিকতা কম এবং সুযোগও সীমিত থাকে।
সংগীত ডিগ্রি পারফরম্যান্স ছাড়াও নানা পথে পেশা গড়ার সুযোগ দেয়—যেমন মিউজিক প্রোডিউসার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা ভিডিও গেম, সিনেমা ও টিভির জন্য কম্পোজার। শিল্পী ব্যবস্থাপনা, কনসার্ট প্রোমোশন কিংবা সংগীত শিক্ষকতা ও গবেষণায়ও সফলতা অর্জন সম্ভব। মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে রেডিও ডিজে বা পডকাস্ট হোস্ট হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়।
আর্ট হিস্ট্রি
আর্ট হিস্ট্রি বিষয়টি সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে চাকরির বাজারে এর সুযোগ তুলনামূলক কম এবং বেতনও সাধারণত কম। কেউ যদি শিক্ষকতা বা জাদুঘরে কাজ করতে না চান, তাহলে বাস্তব চাকরির সুযোগ অনেক কমে যায়।
চাকরির সম্ভাবনা বাড়াতে এই বিষয়ে ডিগ্রিকে মিউজিয়াম স্টাডিজ বা বিজনেস ডিগ্রির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে পেশাগত ক্ষেত্র প্রসারিত হয় এবং কর্মজীবনে অগ্রগতির পথ সহজ হয়।
ফ্যাশন ডিজাইন
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা কঠিন। অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার; যেমন কোকো শ্যানেল, কার্ল লেগারফেল্ড কিংবা রালফ লরেন—কলেজ ডিগ্রি ছাড়াই তাঁরা সফল হয়েছেন। অনেকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে অথবা নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন।
একটি পেশাগত পোর্টফোলিও তৈরি করুন, হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং ইন্টার্নশিপ নিন। ব্যবসায়িক দক্ষতা থাকলে ফ্যাশন উদ্যোক্তা হিসেবেও সফলতা অর্জন সম্ভব।
দর্শন
দর্শন মানুষকে যুক্তি ও নৈতিকতা বিষয়ে গভীর চিন্তা করতে শেখায়। এটি আলোচনার দক্ষতা, যোগাযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও এর সরাসরি চাকরির বাজার তুলনামূলকভাবে সীমিত এবং আয় অনেক সময়ে কম।
দর্শন নিয়ে আইন, ব্যবসায়িক নৈতিকতা, এআই নীতিমালা, মানবাধিকার, ডিজিটাল প্রাইভেসি এবং পাবলিক পলিসির মতো ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। এ ছাড়া ব্র্যান্ড সুরক্ষা, ইউজার ইথিকস বা এআই নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত কাজেও দর্শনের ব্যবহার বাড়ছে।
রিলিজিওন বা থিওলজি
বিষয়টি সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তবে একাডেমিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে এই ডিগ্রির আর্থিক পরিসর কম এবং ক্যারিয়ারের পরিধিও সীমিত হতে পারে।
এ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করতে পারেন অথবা হাসপাতাল, সেনাবাহিনী, কারাগার, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা করপোরেট পরিবেশে আধ্যাত্মিক সাহায্য দিতে পারেন। এ ছাড়া কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও মানবিক সহায়তাকর্মী, গবেষক, কারিকুলাম ডেভেলপার, সাংবাদিক, শিক্ষক, কাউন্সেলর হিসেবে চাকরি এবং সমাজসেবামূলক কাজেরও সুযোগ রয়েছে।
এই ডিগ্রি নিয়ে আরও এগোতে চাইলে আইন, নৈতিকতা বা পাবলিক পলিসি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নতুন পেশাগত দিক উন্মোচন করা সম্ভব; পাশাপাশি জাদুঘর বা সাংস্কৃতিক সংস্থায় কাজ, ইন্টারফেইথ সম্পর্ক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কিংবা করপোরেট নৈতিকতা পরামর্শক হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। মোটকথা, বিষয়টি সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিক উন্নয়নের বহু দিকেই অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করে।
ফটোগ্রাফি
ফটোগ্রাফিতে ডিগ্রি থাকলে নির্ধারিত কাঠামোয় শেখার সুযোগ পাওয়া যায় ঠিকই, তবে এই ক্ষেত্রে সফলতার জন্য তা আবশ্যক নয়। কারণ, এটি একটি ফ্রিল্যান্স-নির্ভর পেশা। অনেক সফল ফটোগ্রাফার নিজের চেষ্টায়, অনলাইন রিসোর্স ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন। এই পেশায় সফলতা নির্ভর করে আপনার পোর্টফোলিও, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও যোগাযোগ ক্ষমতার ওপর। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং প্রয়োগ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইন কোর্স করা, শক্তিশালী পোর্টফোলিও গঠন এবং বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়া।
সমাজবিজ্ঞান
সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজের আচরণ ও কাঠামো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। তবে উচ্চ বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করার জন্য প্রায়ই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে এই ডিগ্রি বহুমুখী দক্ষতা দেয়, যা শিক্ষা ছাড়াও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা যায়।
সামাজিক সেবা, কমিউনিটি ও যুব উন্নয়ন, মার্কেট রিসার্চ ও ডেটা বিশ্লেষণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গণমাধ্যম, জননীতি বিশ্লেষণ, নগর-পরিকল্পনা, করপোরেট প্রশিক্ষণ, অপরাধ বিশ্লেষণ, আইন সহকারী বা গবেষক হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
ইংরেজি সাহিত্য
ইংরেজি সাহিত্যে ডিগ্রি থাকলেও শুধু এটুকু যথেষ্ট নয়; লেখার দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমই বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রের চাকরিগুলোর সংখ্যা কম এবং প্রতিযোগিতা বেশি, ফলে শুরুতে আয় কম হতে পারে।
কনটেন্ট রাইটিং, এসইও রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, ডিজিটাল জার্নালিজম, কপিরাইটিং, স্ক্রিপ্টরাইটিং, প্রুফরিডিং, সাহিত্য সম্পাদক, পাবলিশার, পিআর স্পেশালিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট, পডকাস্ট প্রযোজক—এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে; যেখানে এই দক্ষতা ব্যবহার করা যায়।
কমিউনিকেশনস
কমিউনিকেশনস বা গণযোগাযোগে পাঠ্যক্রমগুলো সাধারণত তাত্ত্বিক ও ইতিহাসভিত্তিক। এই খাত সৃজনশীল হলেও অধিকাংশ কাজের বেতন কম এবং প্রতিযোগিতা অনেক বেশি; বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শুরুতে।
সাংবাদিকতা, পিআর, করপোরেট কমিউনিকেশন, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, টিভি বা রেডিও প্রোডাকশন, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ইউটিউবার, পডকাস্টার, পাবলিক স্পিকারসহ অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।
ইতিহাস
ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনা করলে অতীত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জিত হয়। তবে একাডেমিক বা জাদুঘরের বাইরে উচ্চ বেতনের কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
গবেষণা, জনসেবা, মিডিয়া, বিজনেস, গেম ডিজাইন, পডকাস্টিং, টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রের ইতিহাস উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা যায়। এ ছাড়া পাবলিক সার্ভিস ও তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট নির্মাণেও এই ডিগ্রির অনেক ব্যবহার রয়েছে।
লিবারেল আর্টস
লিবারেল আর্টস ডিগ্রি অনেক বিষয়ের মিশ্রণ হলেও এতে নির্দিষ্ট কোনো টেকনিক্যাল স্কিলের ঘাটতি থাকে। ফলে উচ্চ আয় নিশ্চিত করা একটু কঠিন হয়।
আইন, ডিজিটাল মিডিয়া, সাংবাদিকতা, মানবসম্পদ, ইউএক্স রিসার্চ, ডেটা অ্যানালিটিকস, টেকনিক্যাল রিক্রুটার বা ডিজিটাল হিউম্যানিটিজে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।
নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব
নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বে ডিগ্রি থাকলে মানব ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে গভীর জ্ঞান পাওয়া যায়। তবে এই ক্ষেত্রের কাজ সাধারণত গবেষণা ও শিক্ষানির্ভর হয়, যা তুলনামূলক কম বেতনের।
ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজিস্ট, কূটনীতিক, জাদুঘর কিউরেটর, আর্কাইভিস্ট, ট্যুর গাইড, ইউএক্স রিসার্চার, এনজিও কর্মী, পলিসি অ্যানালিস্ট, লেখক ও ভ্রমণভিত্তিক কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
কালিনারি আর্টস
রান্না একটি দক্ষতাভিত্তিক পেশা, যেখানে স্বাদ ও অভিজ্ঞতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিগ্রি না থাকলেও সফল শেফ হওয়া সম্ভব।
রেস্টুরেন্টে কাজ করা, ক্যাটারিং ম্যানেজার, পার্সোনাল শেফ, ফুড স্টাইলিস্ট, রেসিপি ডেভেলপার, ফুড ক্রিটিক, ফুড সায়েন্টিস্ট, কুকিং ইনস্ট্রাক্টর, রেস্টুরেন্ট কনসালট্যান্ট, ফুড পলিসি অ্যানালিস্ট ইত্যাদি কাজের সুযোগ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ১১ ধরনের শূন্য পদে মোট ১৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্প্রতি এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী জেলার স্থায়ী বাসিন্দারা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগেবেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৮ ধরনের শূন্য পদে মোট ৪৫২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ২৭ জুন এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা ডাকযোগে আবেদন করতে পারবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেজনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকটির অ্যাসিট-লিয়াবিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শূন্য পদে একাধিক লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ২৯ জুন এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
১৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের রাজস্ব খাতের ১৬তম গ্রেডভুক্ত ‘ড্রাইভারের’ ৪টি স্থায়ী শূন্যপদে কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ৪ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
১৪ ঘণ্টা আগে