Ajker Patrika

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

সংস্কার বাস্তবায়নে এল গতি

  • অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দুই দফায় মোট ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত।
  • বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের তালিকা করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ।
  • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি।
  • প্রথম দফার ১৬টি পুরোপুরি এবং ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১২
সংস্কার বাস্তবায়নে এল গতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেই তালিকা জানাতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে অন্য ১০টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে প্রথম ধাপে আশু সংস্কারের জন্য ১২১টি সুপারিশ চিহ্নিত করে সরকার। দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে ২৪৬টি সংস্কার প্রস্তাব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, সরকার-নির্ধারিত ওই ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো আইন, বিধি, নীতিমালা সংশোধন না করেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো শিগগির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৩৬৭টি প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, তাদের সেই তালিকা জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শুদ্ধাচার শাখা থেকে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন নেই, সরকার চিহ্নিত এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কারের অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়মিত উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় চিহ্নিত ১২১টি সুপারিশের মধ্যে ১৬টি পুরোপুরি এবং ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় চিহ্নিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন আছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাস্তবায়ন করতে হবে, সেই তালিকা করে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজ শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করেছে। এরপর সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। কিছু রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। এখন সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে ঐকমত্য কমিশন।

অতি গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় যেসব প্রস্তাব

দ্বিতীয় ধাপে চিহ্নিত ২৪৬টি সুপারিশের মধ্যে ৮২টি শ্রম সংস্কার বিষয়ে। এ ছাড়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৭১টি, স্থানীয় সরকার বিষয়ে ৩৭টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ৩৩টি এবং তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ে ২৩টি সুপারিশ রয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অর্থ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ওই চিঠিতে দেখা যায়, কোনো কোনো সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের দায়িত্ব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক প্রস্তাব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। একাধিক দপ্তরের সিদ্ধান্তে যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে, সেগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত নির্দেশনার আলোকে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত আইন সংশোধন, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্যসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি পৃথক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, নারী ও পুরুষের জন্য নমনীয় কর্মঘণ্টা এবং পেশাগত কাজ ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে সমন্বয় করতে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ চালু, সরকারি দপ্তর-সংস্থায় স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিংভিত্তিক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা করে আইন করা এবং যাঁরা ইতিমধ্যে স্থায়ী ধরনের কাজে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত আছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া, পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ছুটির পরিমাণ নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থানা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একত্র করে জনপ্রকৌশল সেবা নামে একটি অভিন্ন ক্যাডার সৃষ্টি, পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যাওয়ার পরে কারও ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হলে এবং বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড না হলে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়ার বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে।

একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের মালিক হতে না পারেন, সে জন্য ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি; সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে একই ব্যক্তি, কোম্পানি বা গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকা একই ভাষায় দুটি দৈনিক পত্রিকা বা দুটি টেলিভিশন চ্যানেল থাকতে পারবে না–এমন অধ্যাদেশ বা নীতিমালা জারি; ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য সংগঠনকে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার তালিকা থেকে এসব সংঘকে বাতিল করা; টেলিভিশনের গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক টিআরপি নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা, সরকারি কোনো ঘোষণা বা বিজ্ঞাপন টেলিভিশন ও এফএম রেডিওতে প্রচারের ক্ষেত্রে ফি দেওয়া, এফএম রেডিওতে বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতি তুলে দেওয়া; বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সম্প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা; সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, পত্রিকার বিজ্ঞাপন দর সামঞ্জস্যপূর্ণকরণ এবং সরকারি ও বেসরকারি দরের মধ্যে ব্যবধান কমানো, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটকে একক পরিচালনা পর্ষদের অধীন পরিচালনা করার বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সব আদালত ও থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালু এবং ইশারা ভাষা জানা ব্যক্তির ব্যবস্থা করা; সাক্ষী সুরক্ষা ও অপরাধের শিকার ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো চালু; পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাদানকারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের ২০০৯ সালের নির্দেশনার আলোকে সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী অধ্যাদেশ প্রণয়ন; উপজেলা পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজের পদায়ন; নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ওই বিদেশি নাগরিকের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থার বিষয় ছাড়াও বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

  • সংস্কার কমিশন শিথিল করে ৫০০ ভোটারের স্বাক্ষরের কথা বলেছিল
  • ব্যালট পেপার অতি লম্বা হওয়ার ভয়ে ১ শতাংশ বাদ দিচ্ছে না ইসি
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘাড়ে থাকছে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বোঝা। বিভিন্ন মহলের দাবি ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে লড়ার শর্ত সহজ করার উদ্যোগ নেয়নি এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নের সঙ্গে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বহাল রাখা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবারের বৈঠকে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ১ শতাংশের শর্ত বহাল রাখার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুক্তি, এটি বাতিল করা হলে অনেক বেশি প্রার্থীর কারণে ব্যালটের আকার বেশি লম্বা হয়ে যাবে।

বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে প্রার্থীকে সেই আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থনের তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করবেন, তালিকায় তাঁদের স্বাক্ষর বা টিপসই থাকতে হবে। তালিকাটি সঠিক কি না তা দেখতে দৈবচয়নের মাধ্যমে সেখান থেকে ১০ জনের তথ্য যাচাই করে কমিশন। ১০ জনের মধ্যে কোনো ভোটার যদি স্বাক্ষর করার কথা অস্বীকার করেন, তাহলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। তবে ইতিপূর্বে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে বা দলীয় প্রার্থী হলে কাউকে এ শর্ত পূরণ করতে হয় না।

সংশোধিত আরপিওতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বহাল রয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ ইতিবাচক জবাব দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে স্বতন্ত্র প্রার্থীর শর্ত সহজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতি এবং হলফনামার বিধান করা।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়টি উল্লেখ করলে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাদের এ বিষয়ে বলার কিছু নেই।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের শর্ত থাকায় অনেক ভালো লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। আমরা অনলাইনে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়েছি। ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বৈঠক করেছি। অনেকেই এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শর্ত সহজ করতে মত দিয়েছেন। অনেকে এ শর্ত পুরোপুরি বাদ দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।’

ড. আব্দুল আলীম আরও বলেন, ৫ থেকে ৭ লাখ ভোটার এমন আসনে ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষের স্বাক্ষর লাগে। এটি জোগাড় করা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কষ্টসাধ্য কাজ। আর যাচাই করার জন্য ইসি দৈবচয়নের মাধ্যমে ভোটার বাছাই করে। প্রশাসন থেকে এজন্য ফোন করা হলে ঝামেলার আশঙ্কায় অনেকেই বলে দেন, তিনি স্বাক্ষর করেননি। তা ছাড়া ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো রয়েছেই। তাই এ শর্তটি সহজ করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশের শর্ত বাদ দিতে পারলে ভালো হতো। তবে এই শর্ত বাদ দিলে যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইবেন। সে ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে অনেক প্রতীক রাখতে হবে। এ বিবেচনায় এটি করা হয়েছে।’

৭ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইসির সংলাপে সাবেক বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মীর মো. শাহজাহান বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত যে তালিকা দিতে হয়, তা অগণতান্ত্রিক। এর ফলে ভোটারের পরিচিতি জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যায় এবং তাঁর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। এটি করলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি একেবারেই বাতিল করতে হবে।’

২০০৮ সালের আগে এ শর্ত ছিল না উল্লেখ করে ইসির এই সাবেক কর্মকর্তা বলেন, যতই কষ্ট হোক, ব্যালট পেপার যতই লম্বা হোক, ভোটারদের গোপনীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। প্রার্থীর সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে জামানত বৃদ্ধি করলেও চলে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিদায় নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করেছিল। ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। সেই বিধান অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হতো। ২০২৪ সালের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করা হয়। তবে অহেতুক প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বিধান হয় নির্বাচনে যত ভোট পড়বে, তার ১৫ শতাংশ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। আগে প্রদত্ত ভোটের ১২.৫ শতাংশের কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিধান ছিল। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের অঙ্ক ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত বছরের ১০ জুন বিদায়ী সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘১ শতাংশ সমর্থন তালিকার যে জটিল বিষয়টি ছিল, সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে তুলে নিয়েছি। আগামীতে হয়তো জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তুলে নেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে করব।’

জানা যায়, সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়া ৭৩১ জনের মধ্যে ৪২৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই বাদ পড়েন ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থন তালিকায় গরমিলের কারণে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সংসদকে বাধ্য করার উপায় খুঁজছে কমিশন

  • আদেশের নাম হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’
  • নিয়মিত আইন সভার পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবে সংসদ
  • সনদ বাস্তবায়নে সংসদকে বাধ্য করার পক্ষে দুটি মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ নিয়মিত আইনসভার পাশাপাশি ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবে। এ সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নে সংসদকে বাধ্য করার উপায় খুঁজছে কমিশন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পরপর দুদিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে বেলা ২টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টার পরে। কিন্তু এ বৈঠকেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। কাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। ওই দিন সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করে রোববার সরকারের কাছে জমা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

বৈঠকের বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের আলোচনায় বড় অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ সরকারের কাছে দিতে পারব।’

জানা গেছে, গত দুই দিনের বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নের আদেশের ভিত্তি ও নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাস্তবায়ন আদেশের ভূমিকায় থাকবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানই হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির ক্ষমতার উৎস।’ এটির নাম হতে পারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’। সেটার অধীনে গণভোট নিয়ে একটি অধ্যাদেশ করা হবে। এর ভিত্তিতে হবে গণভোট। সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য আগামী সংসদ দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে। সে ক্ষেত্রে সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে, পাশাপাশি নিয়মিত সংসদের কাজও পরিচালনা করবে। সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। সেটি হতে পারে সর্বোচ্চ ৯ মাস। এই সময়ে সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে।

সূত্র জানায়, আগামী সংসদকে সনদ বাস্তবায়নে কীভাবে বাধ্য করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিশন। কিন্তু তারা চায় এটি নিশ্চিত করতে। এটি নিয়ে দুটি মত আছে। একটি হলো নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে; আরেকটি হলো সংসদ যদি নির্ধারিত সময়ে সনদ বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তা বাস্তবায়িত বলে গণ্য হবে। এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি খসড়া আরও পর্যালোচনা করবে।

বৈঠকে উপস্থিত এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পরবর্তী সংসদ যদি নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে সনদের কী হবে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। সমাধান নিয়ে আমরা আরও ভাবছি। কারণ, উদাহরণ আমরা কোথাও পাচ্ছি না। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, বাস্তবায়িত না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে; আবার কেউ কেউ বলছে, বিলুপ্ত করা ঠিক হবে না। আবার একাধিক মত হচ্ছে, ৯ মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে অটোমেটিকভাবে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে কমিশনের প্রস্তাবগুলো থাকবে। সেখানে ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্ন করা হবে। আপত্তির বিষয়ে আরেক বিশেষজ্ঞ বলেন, বেশির ভাগ সদস্যই জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে নোট অব ডিসেন্ট রাখার পক্ষে নয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

গণভোট কবে হবে, বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনা করে সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা। একই প্রশ্নে গণভোট করার কথা থাকবে আদেশে। সেখানে প্রশ্ন থাকতে পারে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ এবং আদেশে সন্নিবেশিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সমর্থন করেন কি না?’ সে বিষয়ে জনগণ হ্যাঁ/না ভোট দেবেন।

গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত ও এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রপতি নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে। রাজনৈতিক বিতর্ক ওঠায় বিষয়টি সরকারের হাতেই ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের। কমিশনও সে পথে হাঁটছে বলে জানা গেছে।

কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ভার্চুয়ালি এ সভায় অংশ নেন।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

  • নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনকে ৩৬ করণীয় প্রস্তাব বিএনপির
  • ‘দলীয় প্রতিষ্ঠান’ থেকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ার দাবি
  • বিগত তিন নির্বাচনের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোটের প্রক্রিয়ায় না রাখা
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ১৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে করণীয় ৩৬টি প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ‘মিথ্যা ও গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার এবং মাঠপ্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছে দলটি। আর ভোটের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে হবে।

এ ছাড়া বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা বিতর্কিত ব্যক্তিদের আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রক্রিয়ায় না রাখা এবং দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ার কথাও কমিশনকে বলেছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক তাদের প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোনো প্রস্তাব জমা দেইনি। আলোচনার টকিং পয়েন্ট হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে।’ যদিও বিএনপির একটি সূত্র জানায়, লিখিতভাবে ৩৬ দফা প্রস্তাব সামনে রেখে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল।

সূত্র জানায়, সিইসির সঙ্গে বৈঠকে তফসিল ঘোষণার আগে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে হওয়া মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং মাঠপ্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা বিতর্কিত ব্যক্তিদের এবারের ভোটের প্রক্রিয়ায় রাখা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

আর ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনাসহ দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠান থেকে যেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়া হয়।

ভোটে অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে এই সরকারের ও ইসির দৃঢ় ভূমিকা চেয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া, রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ইসির কর্মকর্তাদের নিয়োগ; নির্বাচনকালীন সব প্রক্রিয়ায় জড়িত বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন, অবস্থান, দায়িত্ব ও তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ইসির এখতিয়ারে নেওয়া; নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন এবং নির্বাচনকে জনগণের কাছে দৃশ্যমান বিশ্বাসযোগ্য করতে বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ইসি কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া; ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষের কার্যক্রম ছাড়া ভোটকেন্দ্রের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ রাখতে সিসি ক্যামেরা রাখা; প্রতি জেলা, উপজেলা, থানা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে বা যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানো; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি গঠনের নির্দেশনা স্থগিত করা; গণ-অভ্যুত্থান ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে করা মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলা তফসিল ঘোষণার আগেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তফসিল ঘোষণার আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় দেওয়া সব অস্ত্র সরকারের কাছে জমা দেওয়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

এ ছাড়া নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়—এমন অপপ্রচার রোধ; ভোটারদের প্রভাবিত করে এমন ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড দেওয়ার ভীতি প্রদর্শন রোধ; যতদূর সম্ভব কমসংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ; নির্বাচনী আইন ও বিধি পালনে গাফিলতি করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি।

সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির নেতা আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচন হয়েছিল প্রহসনের নির্বাচন। কাদের দ্বারা হয়েছিল? যারা সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল, তাদের কারণে হয়েছিল।

১৫ বছর যাদের চরিত্র হনন করেছিল আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী, তারা ১৫ মাসে শোধিত হয়ে যাবে এতটা আশা করা বাস্তবতা নয়—এ মন্তব্য করে মঈন খান আরও বলেন, ‘কাজেই নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে। বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধরা যেন আগামী নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় কোনোভাবে অংশগ্রহণ করতে না পারে, কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। এটা ছিল আমাদের আলোচনার একটি মূল বিষয়।’

বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। তবে বিএনপির দাবির বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হতে পারে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৫৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন ও শৃঙ্খলাবিষয়ক সব ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। অধ্যাদেশটি যখন চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে যাবে, তখন অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলাবিষয়ক সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব বাজেট ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা থাকবে; আর্থিক স্বাধীনতা থাকবে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের কাছে মনে হয়েছে, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে, তাই অর্থ উপদেষ্টার মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন রয়েছে। সেই আলোচনার পর আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে।

উপদেষ্টা পরিষদ দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এটি হলে বাংলাদেশে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা বিদেশি হোন আর দেশি হোন, বাংলাদেশে অবস্থানকালে ভিন্ন দেশে দুর্নীতি করলেও এর তদন্ত দুদকের মাধ্যমে করা যাবে। সংশোধনীতে ‘জ্ঞাত আয়’ বলতে ‘বৈধ আয়’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনে জাদুঘর নির্মাণের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন হয়েছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে বাংলাদেশের নতুন কনস্যুলেট জেনারেল অফিস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত