Ajker Patrika

৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রস্তাবিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রস্তাবিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও, দোহালিয়া ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। আবেদনের চার বছর পেড়িয়ে গেলেও এখন এ বিষয়ে কোনো আলোর মুখ দেখেননি এলাকাবাসী। 

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নিকট এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। এই আবেদন করেন তৎকালীন পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার মিয়া আনু ও মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজসহ এই তিন ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। 

ওই লিখিত আবেদনে তিন ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ও সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী পান্ডার খাল বাঁধে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানানো হয়।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দারা তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাজিতপুর মৌজার ৮৯ নম্বর জেএল এর ১৩৬ নম্বর খতিয়ান ও ৭৫৩ নম্বর দাগে  ৩ একর পতিত জমি স্বেচ্ছায় দানপত্রে কাবালা করে দিতে রাজি হন। গ্রামবাসীসহ জমির মালিকেরা প্রশাসনের নিকট জমিদানের বিষয়ে একটি অঙ্গীকারনামাও প্রদান করেন। 

 ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ডিআইজি কামরুল আহসানের নির্দেশনায় বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়। তদন্ত শেষে দোয়ারাবাজার থানা থেকে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাধ্যমে আইজিপি অফিসে প্রস্তাবিত পান্ডার খাল বাঁধ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের স্কেচ ম্যাপ, দোয়ারাবাজার থানার পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র, প্রস্তাব কেন্দ্র এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা, দোয়ারাবাজার থানার ৫ বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান, প্রস্তাবিত তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের যৌক্তিকতা, তদন্ত কেন্দ্রের জনবল এবং কেন্দ্রের জন্য স্বেচ্ছায় জমিদাতাদের স্বাক্ষরিত অঙ্গীকার নামাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর থেকে আজ অবধি প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি এটি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলেই প্রস্তাবিত পান্ডার খাল বাঁধ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি আলোর মুখ দেখবে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,  নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দোয়ারাবাজার থানা সদর থেকে পান্ডারগাঁও, দোহালিয়া ও মান্নারগাঁও ইউনিয়ন ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সুরমা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই তিনটি ইউনিয়ন সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত। ৯৩ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই তিন ইউনিয়নে ২৭টি ওয়ার্ড ও ৯৭টি গ্রাম রয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এখানে। ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্বের কারণে প্রশাসনিক সেবা পেতে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে। 

পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, 'সুরমা নদী দ্বারা বিভাজন হওয়ার কারণে আমরা সুরমার দক্ষিণ পাড়ের তিন ইউনিয়নের মানুষ আইনশৃঙ্খলা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে খুব কষ্টে আছি। যে কোনো সময় ছোটখাটো কোনো মতবিরোধ ঘটলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতির কারণে তা বড় আকার ধারণ করে, অনেক সময় খুনখারাপি পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। থানা-পুলিশকে খবর দিলে নদী পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বিলম্ব ঘটে। ভৌগোলিক দূরত্ব ও নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের উপস্থিতি পাওয়া সম্ভব হয় না। প্রস্তাবিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে এখানকার মানুষ সময়মতো আইনশৃঙ্খলা সেবা পাবে, অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।'  

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, 'জানতে পেরেছি এটা এখন মন্ত্রণালয়ে আছে। এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এখানে উপজেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই। এখন এটা কোন পর্যায়ে আছে জানি না। এ ব্যাপারে নতুন কোনো নির্দেশনাও আসেনি।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত