Ajker Patrika

অনুমোদনহীন ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে বেতন–ভাতা নেন ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আজ বুধবার দুপুরে দুদকের একটি দল অভিযোগের তথ্য অনুসন্ধানে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আজ বুধবার দুপুরে দুদকের একটি দল অভিযোগের তথ্য অনুসন্ধানে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ এবং অবৈধভাবে বেতন–ভাতা দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আজ বুধবার দুপুরে বেরোবির এই ইনস্টিটিউটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়ে অভিযোগের প্রমাণ পায়।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়া ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ইনস্টিটিউট। সেই থেকে অনুমোদনহীনভাবে প্রতিষ্ঠানে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তাঁদের বেতন–ভাতা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকে নিয়মিত অফিস না করে বেতন–ভাতা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হোসাইন শরীফের নেতৃত্ব এই অভিযান চালানো হয়। দুদকের দলটি ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই–বাছাই ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা হোসাইন শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা সবাই বেতন–ভাতা নিচ্ছেন। তাঁদের পেছনে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল। অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ না থাকার পরও ২০২৪ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বেতন–ভাতা নিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে পাঠাব। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আজ বুধবার দুপুরে দুদকের একটি দল অভিযোগের তথ্য অনুসন্ধানে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আজ বুধবার দুপুরে দুদকের একটি দল অভিযোগের তথ্য অনুসন্ধানে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেরোবি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ ঢাকঢোল পিটিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অনুমোদন না থাকলেও ১১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ২০৬ জন গবেষক ভর্তি হন। এ সময় ইনস্টিটিউটের ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ২০০৯ সাল থেকে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধভাবে বেতন–ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

এরপর গত বছরের ১৬ মে ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গবেষণার অনুমোদন পেলেও ভবন না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে আগের ১০ বছরে ভর্তি হওয়া ব্যক্তিদের কোনো ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ থাকছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দুই-একজন ছাড়া কেউ নিয়মিত অফিস করেন না। তাঁরা রাজনীতি ও ব্যক্তিগত কাজে সময় বেশি দেন। অনেকের কোনো গবেষণা নেই। গবেষণায় তেমন মনোযোগীও নন। তাঁরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে বেরোবির উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের ১৬ মে ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গবেষণার অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন থেকে এটা কার্যকর করব। আগের বিষয়ে বেরোবির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত