Ajker Patrika

৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত মোস্তাফিজের

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১৮: ২০
মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও অর্থাভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের মোস্তাফিজুর রহমানের উচ্চশিক্ষা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন থাকলেও পরিবারের আর্থিক সংকট সেই স্বপ্নপূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মোস্তাফিজুর দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হতদরিদ্র দিনমজুর খোরশেদ আলম ও মুছুদা খাতুন দম্পতির ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মোস্তাফিজ সবার ছোট। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তাঁরা আলাদা থাকেন। মোস্তাফিজ থাকেন মা-বাবার সঙ্গে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পিতা খোরশেদ আলম—দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। কাজ থাকলে খাওয়া হয়, না থাকলে উপোস।

পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া তাঁদের আর কোনো জমিজমা নেই। এমন পরিস্থিতিতেও মোস্তাফিজ থেমে থাকেননি। স্থানীয় উত্তরা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ-৫।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘সম্মান (অনার্স)’ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় মোস্তাফিজ অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩০তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯৫তম এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম স্থান অর্জন করেছেন।

তাঁর স্বপ্ন—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে বিচারক হওয়া। মোস্তাফিজ বলেন, ‘দিনমজুর পরিবারে জন্ম হলেও লেখাপড়ার পেছনে কোনো দিন ফাঁকি দিইনি। স্বপ্ন দেখেছি বড় কিছু হওয়ার, পরিবার আর দেশের জন্য কিছু করার।’

তাঁর ভাষ্য, ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করার সামর্থ্য ছিল না। শেষ দিকে রংপুরে ৩ হাজার টাকা খরচ করে একটি কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টে অংশ নেন। সেই টাকা আসে বাড়ির একমাত্র গরু বিক্রি করে। ওই গরুই ছিল তাঁদের শেষ সম্বল।

ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর এখন নতুন দুশ্চিন্তা—ভর্তি, থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার ব্যয়। মোস্তাফিজ বলেন, ‘বাবার পক্ষে এই ব্যয় চালানো অসম্ভব। স্বপ্নের খুব কাছাকাছি এসেও আজ দূরে সরে যাচ্ছে সব।’

ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে মোস্তাফিজকে সহায়তা করেছি। সে কলেজের গর্ব। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান, এমন মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ান।’

মোস্তাফিজের বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন বলে আমার ছেলে নাকি বড় জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু কী দিয়ে পড়াব? একটা গরু ছিল, সেটাও ছেলের পরীক্ষার খরচে বিক্রি করেছি। এখন ও পড়বে কীভাবে?’ তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট, পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত