Ajker Patrika

দিনাজপুর সীমান্তে নিহত কিশোরের মরদেহ ৩ দিনেও ফেরত পায়নি পরিবার 

দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুর সীমান্তে নিহত কিশোরের মরদেহ ৩ দিনেও ফেরত পায়নি পরিবার 

দিনাজপুর সদর উপজেলায় ভারত সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি স্কুলছাত্র মিনারুল ইসলাম মিনারের (১৬) মৃত্যুর তিন দিন পার হতে চললেও এখনো মরদেহ ফেরত পায়নি পরিবার। শোকে কাতর মিনারের বাবা-মা ও তার আত্মীয়-স্বজন মরদেহ ফেরত পেতে ব্যাকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে বিজিবি-বিএসএফ একাধিকবার যোগাযোগ ও পতাকা বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে এখনো মরদেহের হস্তান্তর সম্পন্ন হয়নি। 

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে মিনারুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মিনারুলের বাবা জাহাঙ্গীর আলম ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। মা মিনারা বেগমও শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজনেরা চেষ্টা করছেন তাদের কিছু খাওয়াতে। কিন্তু তিন দিন ধরে মিনারুলের বাবা-মায়ের পেটে খাবার গেছে খুব সামান্যই। এলাকার মানুষের একটাই প্রশ্ন কখন আসবে মিনারুলের মরদেহ? 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাজেদুর রহমান জানান, শনিবার সকালে তিনি বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে বিএসএফ মিনারুলের মরদেহ দেখিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। তারপর তাদের সেখানে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

মাজেদুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ ফেরত পেতে সার্বক্ষণিক বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আজকে মরদেহ ফেরত দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির একজন কর্মকর্তা জানান, শনিবার বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়েছে। সেখানে ছবি দেখে মরদেহটি মিনারুলের বলে শনাক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলছেন। 

এদিকে আজ শনিবার সকালে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় মিনারুলের মা মিনারা বেগম ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ১০ / ১২ জনকে আসামি করে একটি এজাহার দাখিল করেছেন। এজাহারে তিনি উল্লেখিত আসামিদের পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আসামিরা তার নাবালক ছেলেকে ডেকে নিয়ে সীমান্ত এলাকায় হত্যা করে মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। 

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার তদন্ত গোলাম মওলা শাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্তের ৩১৪ /সিএস পিলারের কাছে মিনারুল ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোরের মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত কিশোর মিনারুল ইসলাম মিনার সদরের খানপুর ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ও খানপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি রংমিস্ত্রির কাজ করত। চার ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়। গত বুধবার বিকেলে কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় মিনারুল। রাত সাড়ে আটটার দিকে ফোন করা হলে মিনারুলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মিনারুল আর বাড়িতে ফেরেনি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে মিনারুলের পরিবার জানতে পারে, বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একই ইউনিয়নের দাইনুর সীমান্তে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ভারত সীমান্তের ৩১৪ সিএস পিলারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে তেলিয়াপাড়া এলাকায় ভারতীয় আবাদি জমিতে স্থানীয় লোকজন মিনারুলের মরদেহ দেখতে পায়। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাজেদুর রহমান স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্থানীয়রা গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুলির শব্দ শুনতে পায়। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়দের আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করলে জানতে পারে সীমান্তে গুলির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন যুবকসহ দাইনুর সীমান্ত কাঁটাতার বেড়ার নিকটবর্তী গেলে বিএসএফ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত