Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: এখনো খোলেনি বিদ্যালয়, অনেকেই থাকছেন মসজিদে ও শিক্ষালয়ে

সাইফুল আলম বাবু, পঞ্চগড়
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০: ০২
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: এখনো খোলেনি বিদ্যালয়, অনেকেই থাকছেন মসজিদে ও শিক্ষালয়ে

অটোতে ব্যবসার মালামাল নিয়ে পঞ্চগড় শহর থেকে যাচ্ছিলেন আহমদনগর বাজারের দোকানদার আনোয়ার হোসেন (৪৫)। তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের আহমদনগর এলাকায়। বললেন, আহমদনগরে বাড়ি হলেও তার বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা হামলা বা অগ্নিসংযোগ করেনি। জানতে চাইলে বলেন, প্রতিবেশী আহমদিয়াদের প্রায় সব বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সব বাড়িরই প্রায় সবকিছু পুড়েছে। আহমদিয়া না হলেও তাঁর জন্ম এখানে জানিয়ে বলেন, এমন বীভৎস দৃশ্য কখনো দেখেননি। তার মতে এমন ‘অপকর্ম’ ঠিক হয়নি।

গ্রাহকের চাহিদা থাকায় শুক্রবারের পরে রোববার দোকান খুলেছেন। দোকানে শাকসবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই আছে। তবে বেচাকেনা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৭-৮ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো সেখানে এখন হয় ২ বা আড়াই হাজার টাকা। এরপরও দোকান আগেভাগেই বন্ধ করে দিতে হয় নিরাপত্তার আশঙ্কায়। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক এমন চাওয়া তার।

আহমদনগরে ঢুকতে সড়কের পাশে একটি বাড়ির মাহমুদ আহমদ সুমন (৪৬) বলেন, বাড়ির সবাই ছিল জলসায়। এতে দুষ্কৃতকারীরা লুটপাট করে বাড়িতে আগুন দেয়। এতে প্রতিটি ঘরের ওপরের টিনের চালাগুলো বিনষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে ঠিক না করা পর্যন্ত এগুলোতে বসবাস করা যাবে না। বাড়িতে ১০টি ঘর ছিল। কিছুদিন আগে তার মা ভারতে গিয়ে সেখান থেকে আত্মীয়স্বজনদের জন্য নানা উপহার সামগ্রী আনেন। জলসা উপলক্ষে ভোজনেরও আয়োজন ছিল। বাড়িতে প্রায় ২০ জনের মতো অতিথি ও তাদের কাপড়-চোপড়সহ নানা উপকরণ ছিল। সব এক নিমেষেই যেন হারিয়ে গেল। শনিবার সবার পরনের কাপড় ছাড়া অবশিষ্ট কিছু ছিল না। তিনি নিজেও দুইদিন এক কাপড়েই দিন কাটান বলে জানান। 

আগুনে পুড়ে যাওয়া আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়আহমদ সুমন বলেন, ‘সবাই আল্লাহর নামে সবকিছু করেছে, অথচ আল্লাহভীতি কারও মধ্যে ছিল না। থাকলে এমন অমানবিক কাজ করতে পারত না। বাড়িটি বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় মা-বাবাকে বীরগঞ্জে বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে নিজে থাকেন মসজিদে।’

জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশ নামে আহমদিয়াদের ধর্মীয় শিক্ষালয়ে থাকেন নুর ইসলামের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৫৫)। গত শুক্রবারের হামলায় তিনিসহ প্রায় সবাই জলসায় ছিলেন জানিয়ে রেজিয়া বেগম বলেন, বাড়িতে তিনটি ব্যাগে কাপড়, ঘরে ধান, কাপড় জমির প্রয়োজনীয় দলীলসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। এখন বাড়িটি দেখায় কঙ্কালের মতো। দিনের বেলা বাড়িঘর দেখতে গেলেও রাতে থাকতে হয় শিক্ষালয়ে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানআহমদিয়াদের সূত্রে জানা গেছে, এখনো প্রায় ২০০ পরিবার আহমদিয়া বিভিন্ন শিক্ষালয়, মসজিদে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। তিন বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে সম্প্রদায় থেকে। তবে ঘর পুনর্নির্মাণ বা মেরামতে এখনো কেউ হাত দেননি আবারও হামলার আতঙ্কে। তবে আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। রেলপথমন্ত্রী এ ত্রাণসহায়তা বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।

দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টিও। বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবসহ বেশ কয়েকটি কক্ষ আগুনে ঝলসে দেওয়া হয়। এতে লোহার তৈরি বেঞ্চগুলোও এবড়োখেবড়ো-থেবড়ে হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ধারণা গান পাউডার দিয়ে এসব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নয়তো সাধারণ আগুনে এসব পুড়ত না। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীও আসছেন। প্রথম দিন সোমবার ১৫ জন ও গতকাল ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী এসেছে। হয়তো ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বাড়বে বলে জানিয়েছেন আহমদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুয়েল প্রধান।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে, আগামীকাল বুধবার রেলপথমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করবেন। পরে নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত