Ajker Patrika

৯৯৯ নম্বরে ফোন, পুলিশ আসামাত্রই মারধর শুরু

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৭: ৪০
৯৯৯ নম্বরে ফোন, পুলিশ আসামাত্রই মারধর শুরু

বিরোধপূর্ণ জমিতে প্রতিপক্ষ ঘর তুলছে এমন অভিযোগে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ডাকা হয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয় প্রতিপক্ষের ওপর। এতে প্রতিপক্ষের অন্তত সাত-আটজন আহত হন। অপরদিকে মারধরের শিকার হওয়া লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের মোটরসাইকেল ও হেলমেট আটকে রাখে ঘণ্টাখানেক। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের সুবলপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, বাহের কেদার গ্রামের সুবলপাড় বাজার এলাকার মৃত বাহাদ্দি মিয়ার দুই ছেলে আবদুস ছাত্তার এবং আবদুল আউয়ালের মাঝে ১৬ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে ওই জমিতে ঘর ওঠাতে যান আউয়ালের পক্ষের লোকজন। এতে আবদুস ছাত্তার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে কচাকাটা থানা থেকে ঘটনাস্থলে এসআই রবিউল ইসলাম ও একজন কনস্টেবলকে পাঠানো হয়। আউয়ালের অভিযোগ ওই দুই পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র ছাত্তার, তাঁর তিন ছেলে এমদাদুল, মাইদুল, সাফি, সহযোগী বজলু ফজলুসহ ১৫ থেকে ২০ জন লোক নিয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালান। মারধরে আউয়ালের পক্ষের খয়বর আলী (৬০), রবিউল ইসলাম (৪২), খালেদা (২৬), মমিনা (৩২), আউয়াল (৪০), খাদিজাসহ (৩০) সাত থেকে আটজন আহত হন। গুরুতর আহত চারজনকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। 

আউয়াল বলেন, ‘পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩৪ শতক জমির মধ্যে ১৬ শতক জমি খয়বর আলীর কাছে বিক্রি করি। খয়বর দীর্ঘদিন থেকে ওই জমিতে বাড়ি তুলে বসবাস করছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বড় ভাই আবদুস ছাত্তার ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা করে আসছে। আজ আমরা বাড়িটিতে একটি পাকের ঘর তুলতে গেলে ছাত্তার পুলিশ ডেকে নিয়ে আসে এবং পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের লোকজনকে বেদম মারপিট করে।’ 

আউয়াল আরও বলেন, ‘মারপিট শেষে ছাত্তারের লোকজন চলে যায়। এদিকে আমার পক্ষের নারীরা ওই দুই পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল ও হেলমেট সরিয়ে রেখে ওই দুই পুলিশকে ঘটনাস্থলেই আটকে রাখেন। পরে থানা থেকে আরও পুলিশ এলে তাদের হাতে মোটরসাইকেলসহ হেলমেট বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’ 

আবদুস ছাত্তারের ছেলে মাইদুল বলেন, ‘ওই জমির ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমাদের বিপক্ষের লোকজন সকাল থেকে ঘর তোলার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিলেও তারা মানেনি। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিই। দুইবার ফোন দেওয়ার পর পুলিশ আসে। পুলিশ দেখে তারা আমাদের ওপর হামলা করে ও পুলিশের হেলমেট এবং মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। তাদের হামলায় আমার বাবা আবদুস ছাত্তার এবং ভাবি নার্গিস গুরুতর আহত হন।’ 

এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় ছাত্তার নামক এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। ফোন পেয়ে থানার ডিউটি অফিসার আমাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। আমাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে আউয়ালের পক্ষের লোকজন আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আমার পরিধেয় পোশাক ধরেও টানাটানি করে এবং আমার মোটরসাইকেল এবং হেলমেট লুকিয়ে রাখে।’ 

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ‘ওই জমি নিয়ে ইতিপূর্বে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বরাবরই পুলিশ একটা পক্ষ অবলম্বন করেছে। এ জন্য আজ পুলিশের ওপর লোকজন কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়েছে। পরে আমি উপস্থিত থেকে মোটরসাইকেল ও হেলমেট উদ্ধার করে দিয়ে দিই।’ 

কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। পুলিশের মোটরসাইকেল সংঘর্ষের সময় হয়তো কেউ সরিয়ে রেখেছিল। পরে পাওয়া গেছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত