Ajker Patrika

পলাশবাড়ীতে গ্রাম পুলিশ নিয়োগ-পদোন্নতিতে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ১০
গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১০টায় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সোহেল রানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১০টায় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সোহেল রানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার ও দফাদার) নিয়োগে নানা অনিয়ম-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন ও হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিসহ চেয়ারম্যানের সুপারিশকৃত প্রার্থীকে পরীক্ষায় নির্বাচিত করার। ফলে এ নিয়োগ বাতিল করে জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পুনর্নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সোহেল রানা নামে এক যুবক।

গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১০টায় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দিনভর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসনের কার্যালয়ে পাঁচটি ইউনিয়নে ছয়জন মহল্লার ও দুজন দফাদার (পদোন্নতি) পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনিয়নগুলো হলো কিশোরগাড়ী, মহদীপুর, বেতকাপা, মনোহরপুর ও হরিনাথপুর।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শুধু চেয়ারম্যান ও সচিবদের মধ্যে গোপন রাখা হয়। তাঁরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের কাছে অর্থনৈতিক সুবিধা নেন। পরে নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে যোগসাজশে তাঁদের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে নিয়োগ বঞ্চিত হন প্রকৃত মেধাবীরা। বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখায় পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র ২৭ জন প্রার্থী। বঞ্চিত হন কাঙ্ক্ষিত শত শত প্রার্থী।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন গ্রাম পুলিশ ছিলেন। গেল বছরের ২৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। এর পর থেকে আমি কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী গ্রাম পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে ১৩ ডিসেম্বর কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহল্লাদার হিসেবে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর শুক্রবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু নিয়োগ কমিটি চেয়ারম্যানের সুপারিশকৃত প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ফলাফল প্রকাশ করে।’

চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিএসএসের তৃতীয় বর্ষের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। অপর দিকে নির্বাচিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর কোনো সার্টিফিকেট নাই। সে ভালোভাবে নিজের নাম স্বাক্ষর করতে পারে না। প্রকাশ্যে পরীক্ষা নিলে আমি নিশ্চিত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হব।’

এ নিয়োগ বাতিল করে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পুনর্নিয়োগ দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পলাশবাড়ী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ছয়টি শূন্য পদে সরাসরি মহল্লাদার নিয়োগ এবং দুটি পদে দফাদার (পদোন্নতি) এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে অভিযোগ অস্বীকার করে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, গ্রামপুলিশ নিয়োগ বিধিমালায় অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও বহুল প্রচারের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম ও স্থানীয় পর্যায়ে দৈনিক ঘাঘট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যা যথারীতি উপজেলা পরিষদের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়।

সেই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি চেয়ারম্যানদের সরবরাহ করা হয়। তাঁরা যদি পরিষদের নোটিশ বোর্ডে না টাঙিয়ে থাকেন—এ দায়ভার তাদের। তবে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়েছে এবং আমার নোটিশ বোর্ডে এখনো আছে।

অপর দিকে হত্যা মামলার আসামিকে দফাদার নিয়োগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত জহুরুল ইসলাম নামে এক মহল্লাদার (চৌকিদার) ২০২১ সালের একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হন। সে সময় তিনি বরখাস্তও হন। পরবর্তীকালে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাঁকে স্বপদে পুনর্বহাল করেন। গতকালের পদোন্নতি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র। তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারপরেও মামলার কাগজপত্র পুনরায় যাচাই করে তাঁর নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

পলাশবাড়ী থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, ‘জহুরুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। চার্জশিটে তাঁর নাম রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।’

মো. জহুরুল ইসলাম উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আজিম উদ্দীনের ছেলে। তিনি ২০২১ সালে পলাশবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮ নম্বর আসামি।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভোরে উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের বড় গোবিন্দপুর গ্রামে মৃত আ. মাজেদ প্রধানের স্ত্রী স্বপ্না বেগমের চারা ধানখেত থেকে সাদা মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাদা মিয়া ওই গ্রামের আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সাদা মিয়া পলাশবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সূত্রহীন এ মামলাটি তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেন তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা। পরে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান, থানার ওসি জুলফিকার আলী ভুট্টু ও উপজেলা আনসার-ভিডিবি কমান্ডার আউয়াল হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত