Ajker Patrika

রঙের তুলিতে ঊর্ধ্বের বিশ্বজয়

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্ব। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্ব। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর আকাশের তারার মতো, স্বপ্নিল রঙে আঁকা এক ছবি। সেই ছবিতে মিশে আছে একরঙা তুলির আঁচড়, যেখানে লুকিয়ে আছে এক অদম্য প্রতিভা। ঠাকুরগাঁওয়ের ছোট্ট ছেলে স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্ব, বয়স মাত্র পাঁচ বছর। এই বয়সে ফ্রান্স, কানাডা, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বমঞ্চের হাজারো প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চিত্রাঙ্কনে প্রথম স্থান অধিকার করেছে খুদে এই শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ১৩২টি দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে সে ছিনিয়ে এনেছে প্রথম স্থান। তার আঁকা ছবিতে ফুটে উঠেছে গ্রামীণ জনপদের নানা দৃশ্য, যা মুগ্ধ করেছে বিচারকদের।

ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর মন্দিরপাড়ার বাসিন্দা ঊর্ধ্বের বাবা জুলিয়ান ডেভিড একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং মা সৌমিতা বোস ঢাকা গভর্নমেন্ট মিউজিক কলেজের শাস্ত্রীয় সংগীত বিভাগের প্রভাষক। বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকে ঊর্ধ্ব। সেখানে মিরপুরে টর্চ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্বের আঁকা ছবি। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্বের আঁকা ছবি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঊর্ধ্বের বাবা জুলিয়ান ডেভিড জানান, ২০২৩ সালে কালারফুল কেরালা (কেরালার গ্রামীণ জীবন) এই টপিকের ওপর ভারতের কেরালা ট্যুরিজম কোম্পানি অনলাইনে শিশুদের জন্য তৃতীয় আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আহ্বান করে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু। এই প্রতিযোগিতায় ১৩২টি দেশ থেকে ৪৬ হাজার ৬৫ জন প্রতিযোগীর ৫৭ হাজার ৩০৮টি চিত্রাঙ্কন জমা পড়ে। পরে ২০২৪ সালে এটির শর্টলিস্ট তৈরি করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার তারা মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপে ঊর্ধ্বের প্রথম হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং ফলাফল তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়।

ঊর্ধ্বের মা সৌমিতা বোস ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সব সময় ঊর্ধ্বকে সমর্থন করি এবং ওর স্বপ্ন পূরণ করতে পাশে থাকি। এ সাফল্য পরিবারকেই নয়, গোটা দেশকে গৌরবান্বিত করেছে।’

ফলাফলের স্ক্রিনশট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফলাফলের স্ক্রিনশট। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঊর্ধ্বের স্কুলশিক্ষক মালিহা রহমান বলেন, ‘স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় হাতের লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ঊর্ধ্ব প্রথম স্থান নিয়ে থাকে। ওর মধ্যে ছবি আঁকার একটা সহজাত প্রতিভা আছে। আমরা সব সময় ওকে উৎসাহিত করি এবং খুব মনোযোগ দিয়ে সে অনুশীলন করে।’

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্টিভেন ডেভিড ঊর্ধ্ব বলেন, ‘প্রথম হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। ছবি আঁকতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি আরও অনেক সুন্দর ছবি আঁকতে চাই।’

জানা গেছে, পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীরা এবং তাদের পরিবার কেরালার সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলোতে পাঁচ দিনের সফরে যাবেন। যার সমাপ্তি হবে সেই রাজ্যের রাজধানীতে একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এই বিশেষ ভ্রমণের লক্ষ্য কেবল তাদের শৈল্পিক কৃতিত্ব উদ্‌যাপন করা নয়, বরং কেরালার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সঙ্গে তাদের পরিচিত করানো।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘ঊর্ধ্বের এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত