Ajker Patrika

২ বই ছাড়া নবম পার করল ১৩ শিক্ষার্থী, গোডাউনে থাকতে পারে—বললেন প্রধান শিক্ষক 

এস. এম. রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ৪৬
Thumbnail image

দিনাজপুরের খানসামায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছরেও পায়নি দুই বিষয়ের পাঠ্যবই। সহপাঠীর কাছ থেকে ধার করা বই ও গাইড কিনে পড়ালেখা করে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বই গোডাউনে আছে মনে হয়। প্রধান শিক্ষকের এমন দায়িত্বহীনতায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের দশম শ্রেণির ১৩ শিক্ষার্থী বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও কৃষি শিক্ষা পাঠ্যবই এত দিনেও হাতে পায়নি। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন অভিভাবক ও সচেতন সমাজ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে জানায়, প্রধান শিক্ষককে বইয়ের কথা বলতে গেলে তিনি ধমক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বই আছে, বের করতে সময় লাগবে। একাধিকবার বইয়ের কথা জানানোর পরও তিনি ব্যস্ততাসহ বিভিন্ন অজুহাত দিতেন। এভাবে বছর চলে যাচ্ছিল এবং বিভিন্ন পরীক্ষা চলে আসছিল। বাধ্য হয়ে তারা গাইড বই কেনাসহ অন্য সহপাঠীর বই নিয়ে পড়ালেখা করেছে। 

ডন চন্দ্র রায় নামে এক অভিভাবক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নবম থেকে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠল, কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা বই দুইটা পেল না। শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়বে? এ বছর তাদের যে ক্ষতি হয়ে গেল, সেটা কীভাবে পূরণ হবে? শিক্ষকদের এমন উদাসীনতা আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও নজরদারি প্রয়োজন।’ 

এ বিষয়ে দক্ষিণ গাড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বই নাই, নিতে হবে।’ 

এক বছরে বই না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বই খুঁজতে হবে। গোডাউনে আছে মনে হয়, না হলে পুরাতন বই দেব।’ 

বই না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে করলেন, জানতে চাইলে ‘আচ্ছা, ভালো থাকো’ বলে ফোন, মোবাইল ফোন কেটে দেন প্রধান শিক্ষক। 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনজুরুল হক মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এক বছর ধরে তো কোনো বইয়ের সংকট নাই। স্কুলে তো বই দেওয়া হয়েছে। তবু তারা বই পাবে না, এটা দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত বই প্রদান করা হবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের বই প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বই প্রদানে গাফিলতি থাকলে জড়িতদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুলের ১২ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে পাঁচজন উত্তীর্ণ হয়। নেই বিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ভয়ে অভিভাবকেরা স্কুলের বেহাল অবস্থা ও শিক্ষকদের এমন উদাসীনতার প্রতিবাদ করতে পারেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত