Ajker Patrika

‘প্রথমেই দেখি এক শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ’, এক শিক্ষার্থীর বয়ানে মাইলস্টোনের বিভীষিকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৩৬
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি

‘জীবনে কখনো এমন বিকট শব্দ শুনিনি আমি। মনে হলো, একসঙ্গে ৩০-৪০টি বজ্রপাত হলো।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এভাবেই স্কুলভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার দুদিন পরও তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট, ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কাঁপছিল।

আহনাফ জানায়, স্কুলের মাঠের এক কোনায় ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল সে। হঠাৎ বিকট শব্দে একটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে স্কুল ভবনে। আহনাফ জানায়, পুরো ঘটনাটি তার চোখের সামনেই ঘটেছে। বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আহনাফ ও তার বন্ধুরা দুহাতে মাথা ঢেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে। বিবিসিকে সে বলে, ‘চোখ খুলে দেখি, আশপাশের কিছুই আর আগের মতো নেই। চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। বাচ্চাদের চিৎকার, দৌড়াদৌড়িতে পুরো জায়গাটি মুহূর্তেই চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল।’

আহনাফ জানায়, উড়োজাহাজ থেকে পাইলটকেও ইজেক্ট করতে দেখেছে সে। সে বলে, ‘সাদা রঙের একটি প্যারাস্যুটে করে পাইলটকে ইজেক্ট করতে দেখেছি আমি। টিনের ছাদ ভেঙে একটি কক্ষে পড়েন তিনি। শুনেছি, তখনো জীবিত ছিলেন। পরে একটি হেলিকপ্টার এসে তাঁকে নিয়ে যায়।’

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ

আহনাফ নিজেও ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তবে গুরুতর নয়। সে বলে, ‘বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আমার ব্যাগেও এক টুকরো আগুনের ফুলকি এসে লাগে। আমার ট্রাউজার পুড়ে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ দূরে ছুড়ে ফেলি। এরপর স্কুল ভবনের দিকে ছুটে যাই। কাউকে সাহায্য করতে পারি কি না—ওই মুহূর্তে সেটিই মাথায় আসে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-সেভেন যুদ্ধবিমানটি স্কুল ভবনের মূল ফটক ভেদ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট গভীরে ঢুকে পড়ে, এরপর তির্যকভাবে প্রথম তলায় আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়। ‘ক্লাউড’ ও ‘স্কাই’ নামের দুটি শ্রেণিকক্ষ তাৎক্ষণিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

আহনাফ জানায়, মাঠের সঙ্গে প্রাইমারি ভবনের মাঝে যে কংক্রিটের পথ, সেদিকে ছুটে যায় সে। প্রবেশপথের কাছে আহনাফ একটি শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ দেখতে পায়। সে বলে, ‘মনে হচ্ছিল, বিমানটি প্রথমে ওকেই ধাক্কা মেরেছে। ও বয়সে আমার অনেক ছোট ছিল। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পাই, এক শিশুর দেহ পুড়ে গেছে। আর তার বন্ধু তাকে আগুন থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে। আমাকে দেখে সে বলল, সে একা তাকে বের করতে পারছে না। পরে আমি ওই ছেলেটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে মেডিকেল রুমে নিয়ে যাই।’

আহনাফের ভাষ্যমতে, ততক্ষণে অনেকেই ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিল। অনেকের গায়ের কাপড় পুড়ে গিয়ে প্রায় নগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকের গায়ের ত্বক ঝলসে গেছে, ফোসকা পড়ে গেছে। আহনাফ জানায়, এমন এক ছাত্রকে নিজের শার্ট খুলে দেয় সে। খালি গায়েই উদ্ধারকাজে লেগে পড়ে।

আহনাফ জানায়, দোতলায় বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকা পড়েছিল। আহনাফ ও আরও কয়েকজন ছাত্র গিয়ে দোতলায় দেখে, তাপে নরম হয়ে গেছে কিছু গ্রিল। তেমনই নরম হয়ে যাওয়া একটি গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেয় তারা। পরে ওই পথে অনেকে বেরিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত

মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিশুদের একজন ১১ বছর বয়সী ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি। মাত্র পাঁচ দিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু কে জানত, স্কুল থেকে আর কোনো দিন বাড়ি ফেরা হবে না তার!

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ভবনে উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ছিলেন নিধির বাবা। যখনই খবরটা শুনতে পান, খালি পায়ে ছুটে যান স্কুল ক্যাম্পাসে। কিন্তু খুঁজে পাননি তাঁর চোখের মণিকে। নিধির চাচা সৈয়দ বিল্লাল হোসেন জানান, গভীর রাত পর্যন্ত উত্তরার প্রায় সব হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তাঁরা। পরে খবর পেলেন একটি হাসপাতালে ছয়টি মরদেহ এসেছে। শেষমেশ রাত ১টা নাগাদ একটি মরদেহের দাঁতের গঠন আর চোখ দেখে নিধিকে চিনতে পারেন বাবা। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় মরদেহ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মরদেহ একাধিক পরিবার তাদের সন্তান বলে দাবি করছে। তাই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া হস্তান্তর সম্ভব নয়। মরদেহ পেতে প্রথমে তাঁদের জিডি করতে হয়েছে, পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে বাবার রক্ত। মায়ের ডিএনএর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর সব ঠিক থাকলে তবেই দেওয়া হবে মরদেহ।

তিন ভাই–বোনের মধ্যে নিধি সবার ছোট। উত্তরার স্থায়ী বাসিন্দা তার বাবা। নিধির চাচা বিল্লাল হোসেন বলেন, ও ছাদে খেলত, নারকেল গাছের নিচে বসত, সব সময় কোলে বাচ্চা নিয়ে খেলত। নিধি ছোট হলেও শিশুদের খুব ভালোবাসত ও। আফসোস করে তিনি বলেন, স্কুলের পর যদি ওর কোচিং না থাকত, তাহলে আজ ও বেঁচে থাকত!

আরেক পিতার জন্য দিনটি ছিল আরও নির্মম। গুরুতর আহত হয় তাঁর দুই সন্তানই। প্রথমে তাঁর কন্যাসন্তান মারা যায়। তাকে দাফন শেষে হাসপাতালে ফিরে কিছুক্ষণের জন্য চোখ লেগে আসে তাঁর। ঘুম ভেঙে ছোট ছেলেটির মৃত্যুর খবর পান।

এই হৃদয়বিদারক প্রেক্ষাপটেই সামনে আসে একজন শিক্ষিকার অনন্য সাহসের গল্প। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ২০টি শিশুকে উদ্ধার করেন। তিনি বারবার ভবনে আগুনের ভেতর থেকে একের পর এক শিশুকে বের করে আনছিলেন। দগ্ধ হয় তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ, কিন্তু তিনি থামেননি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বাংলার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তুলতুল (৪৩) বলেন, ‘আমি এখন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারি না। স্কুল ভবনের দিকে তাকালেই বুকের ভেতর শোকের ঢেউ আছড়ে পড়ে। শরীর খারাপ লাগে, মন ভেঙে পড়ে। আমি তিনজন শিক্ষার্থীকে হারিয়েছি, যাদের একজন আমার এক সহকর্মীরই সন্তান।’

সরকারিভাবে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো সাতটি মরদেহ শনাক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার জানিয়েছেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত লন্ডন নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

এক দিনে বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে— বরিশালে হেনস্তার পরদিন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেঁতুলিয়ায় টানা চার দিন ১০ ডিগ্রির ঘরে পারদ, বাড়ছে শীতজনিত রোগী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। করতোয়া সেতু এলাকা থেকে আজ সকাল ৭টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। করতোয়া সেতু এলাকা থেকে আজ সকাল ৭টায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা এক সপ্তাহ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে পঞ্চগড়ে। চার দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঘোরাঘুরি করায় জেলাজুড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অফিস জানায়, এক সপ্তাহের মধ্যে আজ মঙ্গলবার পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল সোমবার ১০ দশমিক ৬, রোববার ১০ দশমিক ৫, শনিবার ১০ দশমিক ৫, শুক্রবার ১২, বৃহস্পতিবার ১২ দশমিক ৫, বুধবার ১২ দশমিক ২ এবং গত মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিনমজুর কামাল উদ্দিন বলেন, ‘দিনের বেলা রোদ উঠলে মনে হয় শীত তেমন নেই। কিন্তু রাত হলেই ঠান্ডা এমনভাবে নামতে থাকে যে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে হাত-পা জমে আসে। ভোররাতে বাতাসের ঝাপটা শরীরে লাগলে কাঁপুনি চেপে রাখা যায় না। সকালে সূর্য উঠলেই শরীর গরম হয়, সেলা (তখন) মনে হয় যেন বাঁচা গেল। তবে যত দিন যাচ্ছে, ঠান্ডা আরও বাড়ছে। কয়দিন আগতও এতটা শীত ছিল নাই, এখন তো মনে হচ্ছে সামনত আরও কঠিন শীত পড়িবে।’

জালাসি এলাকার দোকানি শফিকুল বলেন, ‘রাতপাতে অগোতা ঠান্ডাডাহ বাড়ি যায়। দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাইতেও হাত-পা বরফ হইয়া যায়। ভোরবেলা ঘুম থাইক্যা উঠলেই দেখি কুয়াশায় রাস্তাঘাট দেখা যায় না, হাওয়া লাগলেই গা কাঁপে। তবে সূর্য মাথাই উঠলেই একটু বাঁচতি। এ বছরে বেশি শীত পড়িবে মনে হয়।’

এদিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, আজ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ, যা শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত লন্ডন নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

এক দিনে বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে— বরিশালে হেনস্তার পরদিন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দ্বারে দ্বারে সাহেব আলী, বাঁচার আকুতি

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি 
কিডনি রোগে আক্রান্ত সাহেব আলী ও তার স্ত্রী সন্তান। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিডনি রোগে আক্রান্ত সাহেব আলী ও তার স্ত্রী সন্তান। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মরণ সংকটে পড়েছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গালিমপুর গ্রামের শ্রমজীবী সাহেব আলী (৩০)। গত ছয় মাসে চিকিৎসা খরচ জোগাতে সঞ্চয় ও সহায়তার সবটুকু শেষ হয়ে গেছে। এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চাইছেন সাহেব আলী-শাহনাজ দম্পতি। সমাজের আর দশজনের সামান্য সহায়তায় ফিরে পেতে পারেন জীবন। তবে এসবের কোনো কিছু না বুঝলেও তাঁদের শিশু দুটিও ঘুরছে মা-বাবার সঙ্গে।

পরিবারঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সাহেব আলীর বয়স ৩০ বছর হলেও রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ মানুষের ছাপ পড়েছে তাঁর চোখেমুখে। আট বছর আগে তিনি বিয়ে করেন শাহনাজকে। সংসারজীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। মেয়ের বয়স ৫ ও ছেলের বয়স ৩। দিনমজুরির আয়ে কোনোমতে তাঁদের সংসার চলত। কিন্তু গত ছয় মাসের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে টুকটাক যা সঞ্চয় ছিল, সব ফুরিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর চিকিৎসা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুই শিশুর ভবিষ্যৎ।

শিশু দুটির বয়স কম, তাই বুঝতে পারে না বাবার অসুস্থতার কথা। শুধু দেখে, বাবা আগে যেমন হাসিঠাট্টা করতেন, এখন তেমন করেন না। আগে যেমন খাবার বা নতুন জামাকাপড় নিয়ে আসতেন, তা-ও বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন ধরে। তাই তাদের মন খারাপ থাকে।

সাহেব আলী বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। যশোর, ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতাল ও পিজিতে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়, খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। চিকিৎসা আর সংসারের ব্যয় মিলিয়ে আর পারছি না। আপনাদের একটু সহায়তা পেলে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি।’

তাঁর বাবা ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের আবাদযোগ্য জমি নেই। যা কিছু সঞ্চয় ছিল, সবটা ছেলের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে। এখন মানুষের সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ বলেন, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য সমাজসেবা অফিস থেকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। ভুক্তভোগী আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত লন্ডন নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

এক দিনে বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে— বরিশালে হেনস্তার পরদিন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চিতলমারীতে সারের ডিলার নিয়োগে নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ

বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
মেসার্স শেখ ব্রাদার্স ও মেসার্স হাজরা ট্রেডার্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
মেসার্স শেখ ব্রাদার্স ও মেসার্স হাজরা ট্রেডার্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় সারের ডিলার নিয়োগ নীতিমালা-২০২৫ লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং দুজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, সার বিতরণ ও ডিলার নিয়োগসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা উপেক্ষা করে চিতলমারী সদর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য ‘মেসার্স হাজরা ট্রেডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিলার নিয়োগের জন্য উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা করার কথা থাকলেও কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এসব অনিয়মের কথা তুলে ধরে ন্যায়বিচার পেতে চিতলমারী বাজারের বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স শেখ ব্রাদার্সের মালিক মো. ফেরদাউস শেখ জেলা ও উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ফেরদাউস শেখ বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী বড় গুদাম, ব্যবসার পরিধি এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ডিলার নিয়োগের কথা। এসব ক্ষেত্রে আমি এগিয়ে থাকলেও সভা না করে হাজরা ট্রেডার্সকে সুপারিশ করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলেও জীবন হাজরার বিরুদ্ধে সার কেলেঙ্কারি ও দলীয় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ছিল। একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে পুনরায় সুপারিশ করায় জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এই সুপারিশ প্রক্রিয়ায় কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফসহ কয়েকজন কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে তাঁর সন্দেহ।

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স হাজরা ট্রেডার্সের মালিক জীবন হাজরা বলেন, ‘আমি কোনো সার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলাম না। নিয়ম মেনে ব্যবসা করে আসছি।’

চিতলমারী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহিদুর রহমান বলেন, উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা না করেই হাজরা ট্রেডার্সকে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্য এ বিষয়ে জানেন না।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শংকর মজুমদার জানান, অফিসের লিখিত নির্দেশে তাঁরা উভয় প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করেন। সেখানে শেখ ব্রাদার্সের গুদাম ২৫ হাজার বর্গফুট এবং হাজরা ট্রেডার্সের গুদাম ১৫ হাজার বর্গফুট পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সিফাত আল মারুফ বলেন, ‘সার মনিটরিং কমিটির সভা ডাকলে কোরাম পূরণ হয় না। তাই মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয় এবং সেখানকার আলোচনার ভিত্তিতে হাজরা ট্রেডার্সকে সুপারিশ করা হয়েছে।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযোগের পর জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত দল এসে তদন্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও বৈঠক করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত লন্ডন নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

এক দিনে বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে— বরিশালে হেনস্তার পরদিন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় মাহফিলে বয়ানরত অবস্থায় ব্রেন স্ট্রোক, হাসপাতালে বক্তার মৃত্যু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
মাওলানা ফরিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা ফরিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধায় তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বয়ানরত অবস্থায় ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গেছেন মাওলানা ফরিদুল ইসলাম নামের এক বক্তা। জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া গ্রামে মাহফিল চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। উপস্থিত হাজারো মানুষের সামনে বয়ানরত অবস্থায় ব্রেন স্ট্রোক করে স্টেজেই লুটিয়ে পড়েন মাওলানা ফরিদুল ইসলাম (৩৫)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার তিনি মারা যান।

‎স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার চরবালুয়া গ্রামের একটি জামে মসজিদের উদ্যোগে আয়োজিত তাফসির মাহফিলের তৃতীয় বক্তা হিসেবে বয়ান শুরু করেন মাওলানা ফরিদুল ইসলাম। বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি স্টেজে ঢলে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাঁকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

‎মাওলানা ফরিদুল ইসলাম গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খামার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মহিমাগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমিক স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক এবং স্থানীয় ঘোষপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি আড়াই বছর বয়সী এক সন্তানের জনক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আপাতত লন্ডন নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

এক দিনে বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে— বরিশালে হেনস্তার পরদিন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত