Ajker Patrika

 ‘ঠান্ডার জন্যে কামাই করবার পাবার লাগছি না, খুব কষ্টে আছি’

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ১৯
 ‘ঠান্ডার জন্যে কামাই করবার পাবার লাগছি না, খুব কষ্টে আছি’

‘আমাদের এইদিকে খুব শীত। সেইরকম ঠান্ডা। গরম কাপড়চোপর নাই। ঠান্ডার জন্যে কাজ কামাই কিছু কিছু করবার পারতেছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি। কাপড়চোপর পাওয়া গেইলে কিছু ঠান্ডা নিবারণ করা গেইল হয়।’ চলমান শীতে কনকনে ঠান্ডায় এভাবেই নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানালেন কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রামের দিনমজুর হুজুর আলী। 

আজ শুক্রবার বিকেলে হুজুর আলীর সঙ্গে কথা বলতে চর মাধবরাম পশ্চিমচর গেলে এই গ্রামটিতে শহরাঞ্চলের তুলনায় ঠান্ডায় প্রকোপ খানিকটা বেশি অনুভূত হয়। 

হুজুর আলীর বাড়িতে গেলে দেখতে পাই, হুজুর আলী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। মৃদু বাতাসে আগুনের ধোঁয়া সদস্যদের চোখে লাগছিল। কিছু সময় পরপর তাঁরা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে নিচ্ছেন। তবুও আগুনের পরশ ছেড়ে উঠছেন না কেউই। 

শুধু হুজুর আলী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কিংবা চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রাম নয়, গোটা জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়ায় নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন লাখো মানুষ। মানুষের সঙ্গে কষ্ট বেড়েছে গবাদিপশুরও। চার দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় এবং সাত-আট কিলোমিটার বেগে হিমেল হাওয়ার বইতে থাকায় কষ্টের মাত্রা বহু গুণে বেড়েছে। 

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে তিনি। 

এদিকে শীতের কষ্ট নিবারণে জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে সেসব কম্বল প্রান্তিক মানুষের কাছে কতটা পৌঁছাচ্ছে—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। 

হুজুর আলীর ও তাঁর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি দাবি করেছেন, নদীর তীরবর্তী প্রান্তিক এলাকা হওয়ায় তাঁদের কাছে এসব কম্বল পৌঁছায় না। কেউ তাঁদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে এলাকায় যান না। ফলে তারা ঠান্ডায় কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাঁদের শীতবস্ত্র প্রয়োজন। 

চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসনা বেগমও এমনটাই জানন। তিনি বলেন, ‘চার দিন থাকি রইদ (রোদ) নাই। ঠান্ডার মধ্যে কামাইয়ো করবার পাই না। কষ্টে আছি। হামরা নদী এলাকার মানুষ। হামার কাইয়ো খোঁজও নেয় না। এতি কাইয়ো কম্বলটম্বল ধরিও আইসে না। এই ঠান্ডাত কম্বল পাইলে ভালো হইল হয়।’ 

হুজুর আলী ও হাসনা বেগমের তোলা অভিযোগের বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওই গ্রামে শুধু নয়, ইউনিয়নের অনেক হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষ কম্বল পায়নি। আমার এলাকায় অন্তত আড়াই হাজার শীতবস্ত্র প্রয়োজন। কিন্তু সরকারিভাবে পেয়েছি মাত্র সাড়ে ৩০০।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ। তিনি বলেন, ‘শীতের প্রকোপে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা ৫-১০ ভাগ বেড়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে সর্দি-কাশিজনিত রোগী বেশি আসছেন।’ 

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান শীতে প্রায় ৬৩ হাজার কম্বল উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে—যা বিতরণ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া শীতার্ত মানুষের গৃহ সংস্কারের জন্য টিন এবং খাদ্যসহায়তার জন্য শুকনা খাবার রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কম্বল ছাড়াও আমরা কর্মজীবী মানুষ ও শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র হিসেবে সোয়েটারজাতীয় বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছি। শীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা বিতরণসহ মানুষের কষ্ট দূর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত