Ajker Patrika

‘সরকার মাইনষোক ম্যালা কিছু দেয়, মুই ক্যানবা কিচ্ছু পাঁওনা’

প্রতিনিধি
‘সরকার মাইনষোক ম্যালা কিছু দেয়, মুই ক্যানবা কিচ্ছু পাঁওনা’

পীরগঞ্জ (রংপুর): 'মুই বুজি আর বেশি দিন বাঁচপের ন্যাও বাবা। তোমরাগুল্যা এ্যানা মোর ছাও (দিকে) দেখেন না! মোর খাবার নাই, জমিন নাই, পেন্দোনোত কাপড়া নাই, ওষুধ-পাতি নাই, মোর কত কষ্ট! মোর যখন গাওত জোর শক্তি আছল, তখন কাম-কাজ করি আট জনার পরিবার মুই এ্যাকলাই চালাছোঁ বাহে। এখন আর পারোঁ না, শরীল শুকি কাট হচে। শক্তি নাই- চোকতও ভালো মতো দ্যাখোনা।' চরম আকুতি ভরা কণ্ঠ আর অশ্রুসিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন, পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের একাত্তর বছর বয়সী আদিবাসী মাঘু বাড়া।

ভোটার আইডি কার্ডে তাঁর বয়স ৭১ বছর উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত বয়স আরও বেশি বলেই দাবি করেন মাঘু। তিনি বলেন, সরকার মাইনষোক ম্যালা কিছু দেয়, মুই ক্যানবা কিচ্ছু পাঁওনা! স্বামী ছাড়া হতভাগি বেটিট্যা আছে জন্যিই কোনোমতে খায়া না খায়া কষ্টে বাঁচি আঁচো। কওতো বাহে! বয়েস হছি দেখি মুই কি এ্যালা সমাজের বোজা (বোঝা) হনু!

বয়সের ভারে ন্যুব্জ মাঘু বাড়ার চার ছেলে দুই মেয়ে। স্ত্রী বির্ষী কুজুর প্রায় ২২-২৩ বছর আগে মারা গেছেন। বড় ছেলে হিরা বাড়া (৫৫) বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। দ্বিতীয় ছেলে নৌদা বাড়া (৪৮) বছরসাতেক আগে মারা গেছেন। তৃতীয় ছেলে মার্কুস বাড়া দুরারোগে শয্যাশায়ী। ছোট ছেলে ইলিয়স বাড়া (৩৯) ছোটবেলায় এক আত্মীয়ের সঙ্গে ভারতে চলে যান, আর ফেরেননি। ছেলেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত, তারাও দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকম সংসার চালান। তারা কেউ বাবার খোঁজখবর নেন না। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে কাজ না পাওয়ায় জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

মাঘুর মেয়ে শুনীলা বাড়ার (৩০) বিয়ে হয় একই গ্রামে। তার সংসারেও চরম টানাটানি। সবার ছোট মেয়ে বিজলী ওরফে ছুম্রী বাড়ার (২৫) সংসার ভাঙে প্রায় সাত-আট বছর আগে। চাহিদামতো টাকা–পয়সা দিতে না পারায় মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে স্বামী। একপর্যায়ে ছুম্রী বাড়াকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তখন থেকে মেয়েটি এই বৃদ্ধ অচল বাবার বাড়িতেই থাকছেন। ছুম্রী বাড়া মানুষের বাড়ি ও জমিতে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই বাপ–বেটিতে কোনোরকম চলে যায়। কাজ না করলে উপাস থাকতে হয়।

মাঘু বাড়ার সম্বল বলতে তিন শতক জমির ওপর একটি টিনের ছাপড়াঘর। সেই ঘরে থাকেন ছুম্রী বাড়া। আর বারান্দায় খড়ের বেড়া দিয়ে তিন দিক ঘেরা টিনের ছাপড়ায় থাকেন মাঘু বাড়া। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে ভাঙা চৌকির ওপর বসে রাত কাটে তাঁর।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বয়স্ক-বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৪৭ জন। মাঘু বাড়া ও তাঁর স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েটি এ তালিকায় আছেন কি-না তা কর্মকর্তারা অজানা। প্রত্যন্ত আদিবাসী পল্লি হওয়ায় খোঁজ রাখেননি ইউপি সদস্য কিংবা ইউপি চেয়ারম্যানও। মাঘু বাড়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘বাবারে! মুই আর কয়দিন বাঁচিম, মরার আগে দু’বেলা পেট পুরে খাবার আর লোজ্জা ঢাকপ্যার জন্যি মোটা কাপড় ছাড়া আর কিছুই চাঁওনা। তোমরাগুল্যা এ্যানা মোর ছাও দেকেন বাবা।’

জানতে চাইলে চৈত্রকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। মাঘু বা তাঁর মেয়ে তালিকায় আছেন কি–না জানি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যাংকিংয়ের নামে কারসাজি, ফাঁসছে ফার্স্ট সিকিউরিটি

‘আমার নিরপরাধ ছেলেডারে ডাইক্যা নিয়া ওসি স্যার জেলে ডুকাইয়া দিল’

রাঙামাটির হোটেল থেকে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, ম্যানেজার আটক

চাঁদাবাজদের কথিত তালিকা নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড়, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম

দুর্নীতির তদন্ত ঝুলে আছে, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এমডি অবসরে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত