Ajker Patrika

তিস্তার পানি বাড়ায় খোলা হয়েছে জলকপাট, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩, ১৮: ৩০
Thumbnail image

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ধু ধু বালুচর এলাকা এখন পানিতে টইটম্বুর। এদিকে উজানের পানি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ডুবে গেছে ফসলের খেত। এমন অবস্থায় ফসলহানির শঙ্কা করছেন কৃষকেরা। 

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রমতে, আজ সোমবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে; ৯টায়, দুপুর ১২টায় ও বেলা ৩টায় যথাক্রমে ৫ সেন্টিমিটার নিচ, ১৭ সেন্টিমিটার নিচ ও ২৫ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গত শুক্রবার বিকেলে থেকে বাড়তে শুরু করে তিস্তার পানি। চর এলাকায় চাষাবাদের জন্য বসবাসরত লোকজন গ্রাম এলাকায় চলে আসছেন। নৌকায় করে তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে উঁচু স্থানে চলে আসছেন। 

সরেজমিন উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাল মিয়া নামের এক কৃষকের তিস্তার পানিতে ডুবে উৎপাদিত ফসল বোরো ধান জমি থেকে কেটে ফসল রক্ষা বাঁধের ধারে তুলছেন। কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক দিয়ে সেসব ধান মাড়াই করছেন।

পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া অবশিষ্ট বাদাম গাছ থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন দুই নারী। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড়ায়। ছবি: আজকের পত্রিকা এ সময় লাল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এবারে আমি ৬০ শতক জমিতে নমল জাতের ব্রি ধান ৯২ লাগাইছিলাম। ধানের ভালোই ফলন হয়েছিল, কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ঢলের পানির কারণে ধানগুলো পাকার আগেই কেটে নিলাম। তবে ১০-১২ দিন গেলে ধানগুলো ভালো করে পাকত।’ 

এ সময় কথা হয় একেই এলাকার ধানচাষি সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিও কাঁচা ধান জমি থেকে শ্রমিক দিয়ে কেটে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় যদি এসব ধান কেটে না নিই, তাহলে নদীতে আরেকটু পানি বাড়লে ধান আর পাওয়া যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা ধানেই কেটে নিচ্ছি।’ 

গঙ্গাচড়া সদরের গান্নাড়পাড়া এলাকার বাদামচাষি মজিবর রহমান জানান, এবারে তিনি তিস্তার চরে ১৫০ শতক জামিতে বাদাম চাষ করেন। প্রায় ১০০ শতকের জমির বাদাম ঘরেও তুলেছেন। বাকি ৫০ শতক জমির বাদাম তোলার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। 

এ সময় তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক দিন থাকি তাড়াহুড়া করি অনেক বাদামেই শুকি ঘরে তুলছি। কিছু বাদাম তুলি বাড়িত রাখছি, আরগুলা চরোতোই রাখছিনো, কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাদামগুলো থাকি গাজ উঠছে। এখন যদি দুইটা দিন রইদ (রোদ) পাওয়া যায় তাহলে হয়তো বা কিছু বাদাম পাওয়া যাইবে আর রইদ না হলে পাওয়া যাইবে না।’ 

পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান মাড়াই করছেন কিষান-কিষানিরা। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর পশ্চিম ইচলি গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, এবার আগে থেকে সতর্ক থাকার কারণে গতবারের তুলনায় এবারে ফসল কম নষ্ট হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ কে এম ফরিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষকেরা আগেই ফসল তুলে নেওয়ায় ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। কিছু নমল জোতের ফসল আছে সেগুলোও ঘরে তেলার সময় হয়েছে। হয়তো সেগুলো এখনো কিছু তুলতে পারেনি, এগুলোর কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। 

ডালিয়া পাউবোর পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল রাত পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সকালে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত