Ajker Patrika

আন্দোলনে নিহত যুবকের লাশ ৯৮ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
Thumbnail image
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় ইউনিয়নে কবর থেকে তোলা হচ্ছে নিহত মিরাজুল ইসলাম মিরাজের লাশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত লালমনিরহাটের আদিতমারীর যুবক মিরাজুল ইসলাম মিরাজের লাশ দাফনের ৯৮ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার  ভোর ৫টার দিকে উপজেলার মহিষখোচায় ইউনিয়নের আনছার খার পুকুর এলাকায় বাড়ির পাশের কবরস্থান থেকে এই লাশ উত্তোলন করা হয়।

মিরাজুল ইসলাম মিরাজ মহিষখোচায় ইউনিয়নের আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন।

লাশ উত্তোলনের বিষয় আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মোজাফ্ফর হোসেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে মিরাজের কবরস্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠিয়েছেন।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর ই আলম সিদ্দিকী লাশ উত্তোলনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। লাশ উত্তোলন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাশ করে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকত মিরাজের পরিবার। ঢাকা দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বিকাশ দোকানের কর্মচারী ছিলেন মিরাজ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়ে। বাবার চিকিৎসায় তিন-চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মিরাজ।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন মিরাজ। তাঁর খালাতো ভাই কারখানা শ্রমিক মাজেদুল ইসলামও তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে মিরাজ ও মাজেদুল গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাঁদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় মিরাজকে। অস্ত্রোপচার করে মিরাজের শরীর থেকে গুলি বের করা হলেও এর দুই দিন পর ৮ আগস্ট মারা যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। ওই দিনই তাঁকে বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। মিরাজুলের সঙ্গে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া খালাতো ভাই মাজেদুল ইসলাম চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছেন।

মিরাজ নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন প্রধান করে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে ২৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তের স্বার্থে মিরাজের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রা বাড়ির থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিএমএম আদালতে বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক লাশ উত্তোলনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতিতে ৯৮ দিন পর কবর থেকে মিরাজের লাশ উত্তোলন করে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন বলেন, মিরাজ হত্যা মামলায় দ্বিতীয়তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এরপর এ মামলা সিআইডিতে (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) হস্তান্তর করা হবে। তাঁরা তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত