Ajker Patrika

কুড়িগ্রাম-৪: আসন গেড়ে আছে আ.লীগ, পুনরুদ্ধারের চেষ্টা জাতীয় পার্টির 

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ৪৬
কুড়িগ্রাম-৪: আসন গেড়ে আছে আ.লীগ, পুনরুদ্ধারের চেষ্টা জাতীয় পার্টির 

একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ খ্যাত কুড়িগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনের (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মনোনয়ন পাননি। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি এমনটি ধারণা করছেন অনেকেই। তবে উদীয়মান তরুণ নেতা বিল্পব হাসান পলাশ দলীয় প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। 

তবে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বিল্পব হাসান। এর বাইরেও রয়েছে মহাজোটের অঙ্কের হিসাব। মহাজোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টি তাদের হারানো আসন পুনরুদ্ধারে দেনদরবার চালালেও আরেক শরিক দল জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) হাল ছাড়ছেন না। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাকির হোসেনকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) প্রার্থী রুহুল আমিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের পর ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে জাকির হোসেনের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকলে মাঠপর্যায়ে অখ্যাত দলের প্রার্থী হয়েও রুহুল আমিন এমপি নির্বাচিত হন। 

তবে একাদশ নির্বাচনে কৌশলী আওয়ামী লীগ আসনটিতে জোট না থেকে উন্মুক্ত রাখে। এই নির্বাচনে জাকির হোসেন নির্বাচিত হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সেভাবে মূল্যায়ন না করায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রার্থী চূড়ান্তের আগে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডকে চিঠি দেন। চিঠিতে তাঁরা জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে তাঁর নানা অপকর্ম তুলে ধরেন। এতে তাঁর কপাল পোড়ে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য বিল্পব হাসান পলাশ। 

নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৮ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৬ জন নারী ভোটার। ১৫টি ইউনিয়নের ১৩০টি কেন্দ্রের ৭৯৮টি বুথে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। 

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন রৌমারী উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবলু, জাতীয় পার্টি জেপি মঞ্জু থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রুহুল আমিন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বিএনপিবিহীন এ নির্বাচন প্রতিযোগীমূলক করতে কেন্দ্র থেকে নানামুখী দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জোটের শরিকেরা এই আসনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ছাড় চাইলেও একাদশ নির্বাচনের কৌশল নিতে পারে আওয়ামী লীগ। আসনটিতে জোট না থেকে উন্মুক্ত রেখে নির্বাচন হতে পারে বলেও মত দেন। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মামুন অর রশিদ বলেন, একসময় আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও সেই চিত্র বদলেছে। নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে। মহাজোটের অঙ্কের হিসেবে দলীয় প্রার্থীর বাইরে শরিকদের সমর্থন জানালে সিদ্ধান্ত ভুল হবে, যার খেসারত আগামী দিনেও দিতে হবে। 

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মিনু বলেন, রৌমারী-রাজিবপুর মহাসড়ক উন্নয়ন, চিলমারী নদীবন্দর ও ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষাসহ নানামুখী উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদানের কারণে জাতীয় পার্টির দুর্গ এখন আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে বিপ্লব হাসান পলাশ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে এমপি হিসেবে দেখতে চাইছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত