Ajker Patrika

নাউতারা ও ধুম নদ: খননের ৩ বছরের মধ্যেই বালুচর

  • ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ধুম ও নাউতারার ৪০ কিলোমিটার খনন করা হয়।
  • পাড়ে রাখা খননের মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে মিশে তলদেশ ভরাট।
  • নাউতারা ও ধুম মাইলের পর মাইল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
  • নদ-নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় কৃষিতে সেচের ব্যয় বেড়েছে ১৫-২০ শতাংশ।
ডিমলা (প্রতিনিধি) নীলফামারী
আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ০৭: ২৪
প্রাণ ফেরাতে খনন করা হয় ধুম নদ। এরপরও নিশ্চিত করা যায়নি পানির প্রবাহ। নাব্যতা হারিয়ে নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। সেখানে ধানসহ সবজির চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ধুম নদের সাতজান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রাণ ফেরাতে খনন করা হয় ধুম নদ। এরপরও নিশ্চিত করা যায়নি পানির প্রবাহ। নাব্যতা হারিয়ে নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। সেখানে ধানসহ সবজির চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ধুম নদের সাতজান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা ঘিরে রেখেছে নাউতারা, কুমলাই, ধুম ও বুড়িতিস্তা নদ-নদী। তবে দখল-দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে এগুলো। তিন বছর আগে প্রাণ ফেরাতে নাউতারা ও ধুম খনন করা হলেও কাজে আসেনি। খননের পরও নিশ্চিত করা যায়নি পানির প্রবাহ। নাব্যতা হারিয়ে এগুলো শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। সেখানে ধানসহ সবজির চাষ হচ্ছে। এতে নদ-নদীগুলোর গতিপথ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্যে। ব্যাহত হচ্ছে নদীকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, অপরিকল্পিত খননের কারণে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে নদ-নদীগুলো। খননকাজের মান নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডালিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন করে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়াতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পের অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ধুম ও নাউতারার ৪০ কিলোমিটার খনন করা হয়। খননকাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাউতারা ও ধুম থেকে খনন করা বালুর স্তূপ করে এগুলোর পাড়েই রেখে দিত। বৃষ্টিতে সেসব বালু আবার ফিরে যায় নদীগর্ভে। ফলে খননের কাজ শেষ না হতেই তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এতে নদ-নদীগুলো নাব্যতা ফিরে পায়নি। এই সুযোগে সেখানে ধান চাষ শুরু করে স্থানীয়রা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ধুম ও নাউতারা মাইলের পর মাইল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। দুই তীরের বাসিন্দারা এগুলো দখল করে চাষাবাদ করছে। অনেকে আবার এগুলো থেকে বালু তুলে অবাধে বিক্রি করছে। দুই তীরে যাদের জমি রয়েছে, তাদের অনেকে দখলে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার পূর্ব ছাতনাই এলাকায় নাউতারা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ শিকার করেন জমির আলী। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগেও সারা বছর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যায় না। খননের পর পানিই নেই।’

ধুম নদে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম চর সৃষ্টি করে ধান চাষ করা হয়েছে। সেখানে নদের পাড় কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিক্রি করছে বালু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ জানান, নদে যাদের জমি ভেঙে গেছে, তারাই বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করছে। আর নদের এক পাশে বাঁধ দিলে অন্য পাশে বালুর স্তর জমে চর জেগে ওঠে।

একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার বুড়িতিস্তা ও কুমলাইয়ের ক্ষেত্রেও। এই দুটিও এখন মৃতপ্রায়। স্থানীয়রা বলছেন, উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে কুমলাইকে মেরে ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইভাবে তিস্তা নদীরও মরণ দশা দেখা যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অপরিকল্পিত খনন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নদীগুলো ধানের জমি আর বালুমহালে পরিণত হয়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদে পাউবোর কোনো পদক্ষেপ নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, উপজেলার নদ-নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে শুধু সেচের খরচই বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া নদ-নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সে জন্য ছোট নদ-নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই।

নদী রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘রিভারাইন পিপল’-এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত। সেটা বিজ্ঞানসম্মত হয় না। খননের সময়ে নদীর প্রকৃত প্রস্থ মেপে দেখার প্রয়োজন তাঁরা মনে করে না। নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হলে নদী রক্ষা করা কঠিন হবে।’

অপরিকল্পিত খননের বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘মাটির ধরনের কারণে এই অঞ্চলের নদ-নদী খননের পর সমস্যা হচ্ছে। এগুলোতে বালুর পরিমাণ বেশি। তাই খননের পরপরই আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এমন নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ রাখা কঠিন। তবে নদী দখল ও বাঁধ দিয়ে ফসল চাষের সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘ডিমলায় নদ-নদী দখলে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল। ওই দল এরই মধ্যে কুমলাই নদের সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় ২৬০ জন দখলদারের নাম উঠে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত