Ajker Patrika

চিকিৎসার অভাবে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
চিকিৎসার অভাবে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ‘স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপযুক্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবার অভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় প্রসূতি খুকু মনি রায় পম্পার (২৪)। এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টাও করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। 

হাসপাতাল ও প্রসূতির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার ডাঙ্গারহাট এলাকার তাপস রায়ের সঙ্গে ২ বছর আগে পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হিতিস চন্দ্র রায়ের মেয়ে পম্পার বিয়ে হয়। প্রসবজনিত কারণে কয়েক দিন আগে বাবার বাড়িতে আসেন পম্পা। বৃহস্পতিবার সকালে পম্পার প্রসব বেদনা শুরু হলে স্থানীয়ভাবে চেষ্টার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক জরুরি অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। প্রসূতি ও সন্তানের জীবন রক্ষায় স্বজনেরা অস্ত্রোপচারে সম্মত হন। 

ওই দিন দুপুরে অস্ত্রোপচারে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন পম্পা। কিন্তু পম্পার পেটের কাটা অংশ হতে রক্তক্ষরণ হতেই থাকে। এতে শরীরের অবনতি ঘটে তাঁর। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ছাড়পত্র দিয়ে রংপুরে চিকিৎসার জন্য নিতে বলে স্কয়ার হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনেরা শম্পাকে নিয়ে রংপুরে চিকিৎসার জন্য রওনা দেন। পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। 

এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। কয়েক দফা হসপিটালে গিয়ে ও মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কোন সার্জন/চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি। 

আজ শনিবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে বহির্বিভাগের চিকিৎসক ডা. এম এইচ শিশির চৌধুরীকে পাওয়া যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই প্রসূতিকে এখানে ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হয়। কে অস্ত্রোপচার করেছে তা জানি না। তবে প্রসূতির অবস্থা খারাপ দেখে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে রংপুরে নিতে বলে। পরে শুনি রংপুরে নেওয়ার পথে তিনি মারা গেছেন।’ 

প্রসূতির স্বামী তাপস রায় বলেন, ‘পম্পা সুস্থ ও গর্ভাবস্থা, শিশুর অবস্থান ভালো ছিল। এ হসপিটালে চিকিৎসার ঘাটতির কারণে পম্পার মৃত্যু হয়। আমরা ভালো চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে বলেছিলাম। কোনো চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করেছে তা জানি না। এখন অভিযোগ না করার শর্তে টাকা দিতে চায় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ।’ 

জোংড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিজয় কুমার রায় বলেন, ‘কয়েকজনসহ বৃহস্পতিবার রাতে হসপিটালে গিয়ে ঘটনা জানতে চাই। এ সময় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা বাড়াবাড়ি বা অভিযোগ দিতে নিষেধ করে ১ লাখ টাকা দিতে চায়। এখনো টাকা দেয়নি।’ 

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা জেনেছি। কে অস্ত্রোপচার করেছে সেই চিকিৎসকের বিস্তারিত চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে চিকিৎসায় গাফিলতি প্রমাণিত হলে স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত