Ajker Patrika

ফুলবাড়ী পৌরসভা: নামেই প্রথম শ্রেণি, মানে নয়

  • রাস্তা ও ড্রেনের নাজুক অবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন।
  • যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়।
  • আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, বেতন বকেয়া থাকায় পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন।
মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
সড়কের পাশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। সম্প্রতি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের পশ্চিম গৌরীপাড়া বউবাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সড়কের পাশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। সম্প্রতি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের পশ্চিম গৌরীপাড়া বউবাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নানা সমস্যায় জর্জরিত দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভা। দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার রাস্তা ও ড্রেনের নাজুক অবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে পৌরবাসীর। নাগরিকদের অভিযোগ, নামে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাড়েনি সেবার মান। তাই রাস্তা ও ড্রেনগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি তাঁদের।

অন্যদিকে পৌরসভার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে একদিকে পৌরবাসী উপযুক্ত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন, অন্যদিকে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ৬২ শতক জমির ওপর নির্মিত হয় ফুলবাড়ী পৌর ভবন। পৌর মেয়রসহ ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে পৌর পরিষদ গঠন করা হয়। বর্তমানে পৌরসভার জনসংখ্যা ৫৫ হাজার ৮৫০ জন। ২০১১ সালে এ পৌরসভাটি ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ২০১৫ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌরসভায় প্রকৌশল, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পরিচ্ছন্ন বিভাগে সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী মোট ১৫৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে ১২৩টি পদই শূন্য রয়েছে।

জানা গেছে, পৌরসভায় মোট ৯ হাজার ৩৪৬টি হোল্ডিং রয়েছে। সেখান থেকে পৌর ট্যাক্স এবং হাটবাজার ইজারা ও রাজস্ব খাত থেকেই পৌরসভার মূল আয় আসে। এ ছাড়া পৌরসভার তেমন কোনো বড় ধরনের আয়ের উৎস নেই। বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১২ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা জানান, ‘এর আগে ১৬ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। পৌর প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০ মাসের বেতন পরিশোধ করেছেন। এরই মধ্যে ১২ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। বছরে ৫-৬ মাস পরপর বেতন পাই। ধারদেনা এবং বাকিতে কেনাকাটা করে সংসার চালাতে হয়।’

সরেজমিনে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। কিছু সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মূল সড়কের পাশে কিছু মাস্টার ড্রেন থাকলেও গ্রামের ভেতরের ছোট ড্রেনগুলোর নাজুক অবস্থা। কিছু এলাকায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আগের নির্মাণ করা বেশ কিছু ড্রেন ভেঙে পানিনিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা এলেই ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এদিকে কিছু জায়গায় অস্থায়ী ডাস্টবিন থাকলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকায় ডাস্টবিন নেই, সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে।

পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ১ হাজার ৬৭১টি সড়কবাতি রয়েছে। নিজস্ব ল্যাম্পপোস্ট না থাকায় নেসকো ও পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো হয় সড়কবাতি। যেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি নেই, সেখানে সড়কবাতিও নেই। বর্তমানে ৩০-৪০ ভাগ এলাকায় সড়কবাতি জ্বলে। অন্যদিকে ১৫-১৬ অর্থবছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে পৌর শহরে পানি সরবরাহের জন্য ৪টি পাম্প ও পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। কিন্তু ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পাম্প চালু থাকলেও বাকি তিনটি আজও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুল হুদা চৌধুরী লিমন বলেন, হাটবাজার ইজারা, পৌর ট্যাক্স ও রাজস্ব খাত থেকেই পৌরসভার মূল আয় আসে। এ ছাড়া পৌরসভার তেমন কোনো বড় ধরনের আয়ের উৎস নেই। যেটুকু আয় হয় তা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটানো কষ্টকর হয়ে যায়। এর মধ্যে থেকে কিছু উন্নয়নকাজও করতে হয়।

পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, কোন কোন এলাকায় সমস্যা রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দিনাজপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার এখান থেকে পৌরসভার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে বরাদ্দ পেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আওয়ামী লীগকেও পথভ্রষ্ট করেছেন শেখ হাসিনা

গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের বিবৃতিতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত