Ajker Patrika

সারে ‘ফুলেছেন’ বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক শওকত

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর 
Thumbnail image
শওকত আলী। ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) দিনাজপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক (সার) পদে যোগদান করেন শওকত আলী। অভিযোগ উঠছে, অল্প এই সময়েই নীতিমালা ভঙ্গ করে ডিলারদের হয়রানি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সার ডিলাররা গত ২ নভেম্বর বিএডিসির চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শওকত।

ভুক্তভোগী সার ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শওকত আলী যোগদানের পর থেকেই কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা করেন না। প্রয়োজন ছাড়াই ডিলারদের সার উত্তোলনের ডিও লেটারে (আবেদনপত্র) স্বাক্ষর করার নামে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে থাকেন। ডিলারদের কাছের গুদামে সার থাকলেও সেখান থেকে না দিয়ে দূরের গুদাম থেকে সার বরাদ্দ করেন। এতে করে ডিলারদের সার পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। দুর্ভোগ এড়াতে তাঁকে উৎকোচ দেওয়া হলে তিনি তাৎক্ষণিক সেই আদেশ বাতিল করে কাছের গুদাম থেকে সার বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। এর প্রতিবাদ করলে গালিগালাজ করা, লাইসেন্স বাতিলসহ নানাভাবে হয়রানির হুমকি দেন।

ডিলারদের অভিযোগ, প্রতিবার সার উত্তোলনের সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতি বস্তা তিউনেসিয়া টিএসপি সারের জন্য ৮০ থেকে ১০০, চায়না ডিএপি সারে ৬০ থেকে ৮০ এবং কানাডা এমওপি সারের জন্য ২০ টাকা করে বাধ্যতামূলকভাবে নেওয়া হয়। নাহলে চাহিদামতো সার দেওয়া হয় না।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গুদামে সার ঢোকানো ও বের করার সময় শ্রমিকদের বিল থেকেও শওকতকে উৎকোচ দিতে হয়। নাহলে সংশ্লিষ্ট গুদামে সার সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

সিজন শেষে সার পুনর্গণনা করার সময় নিজস্ব ঠিকাদারের মাধ্যমে ভুয়া কোটেশন ও বিল তৈরি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।

শুধু ডিলারদের সঙ্গেই নয়, শওকত আলীর বিরুদ্ধে তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নানাভাবে হয়রানি ও অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বহিরাগতদের সামনেই তাঁদের বিভিন্ন অজুহাতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থাকেন। রয়েছে অফিসে ধূমপানসহ মাদকসেবনের অভিযোগও।

সার ডিলার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘শওকত আলী যোগদানের পর থেকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আওয়ামী শাসনামলে তাঁকে নানাভাবে হেনস্তা করেন। সরকার পরিবর্তনের পরও তাঁর আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১ ডিসেম্বর আমরা ডিলাররা সারের টাকা জমা দিয়ে ডিও নিতে গেলে বীরগঞ্জের পরিবর্তে বিরামপুর সার গুদামে ডিও দেন। পরে ৮ জন ডিলার মিলে ১০ হাজার টাকা দিলে বীরগঞ্জ থেকে সার তোলার অনুমতি দেন।’

সার ব্যবসায়ী মা বীজ বিপণনকেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবীব বলেন, ‘সার তুলতে গেলেই তাঁকে প্রতিবার টাকা দিতে হয়। কোনো রাখঢাক না করে বস্তাপ্রতি তিনি যেভাবে সরাসরি ঘুষের টাকা নিয়ে দরাদরি করেন, তাতে মনে হয় বিএডিসি তাঁর নিজস্ব কোম্পানি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএডিসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ‘শওকত গত দুই বছরে আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করছেন, তা কোনোভাবেই পেশাদার নয়। কথায় কথায় গালিগালাজ, বদলির হুমকিসহ অনৈতিকভাবে আর্থিক লেনদেন করার জন্য বাধ্য করে থাকেন। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

অভিযোগকারী বিএডিসি বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মির্জা লিয়াকত আলী বেগ বলেন, ‘মানুষের দুর্নীতির একটা সীমা থাকে। শওকত দুর্নীতির সব সীমা অতিক্রম করেছেন। আওয়ামী লীগের দালাল এই অফিসারের আমরা অবিলম্বে অপসারণ চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে শওকত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে চাকরি ছেড়ে দেব। আমি ডিলারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি। তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন।’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অশোভন আচরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিন জেলার সারের সরবরাহ ঠিক রাখা ও অফিসের স্বার্থেই তাঁদের অনেক সময় কঠোর ভাষায় কথা বলি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএডিসির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খানের অফিশিয়াল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। অফিশিয়াল টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত