Ajker Patrika

মধ্যপাড়া পাথরখনি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথরখনির মূল ফটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথরখনির মূল ফটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল ও ‘প্রোডাকশন প্রফিট বোনাস’-সহ ৯ দফা দাবিতে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথরখনির শ্রমিকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে খনি পরিচালনাকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেড কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) খনির কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

গতকাল বুধবার (২ জুলাই) রাতে জিটিসি কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খনি কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে—চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল, অকারণে ছাঁটাই বন্ধ, বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে পদোন্নতি, এক বছরের মধ্যে অপারেটর পদে বেতন দেওয়া, বেতন-কর্তন বন্ধ, বয়সের কারণে চাকরিচ্যুতি হলে ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, অতিরিক্ত পাথরের প্রোডাকশন বোনাস ও মাসিক পূর্ণ বোনাস দেওয়া। এ দাবিগুলো নিয়ে শ্রমিকেরা খনি ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। খনিটি কেপিআই এরিয়ায় হওয়ার কারণে আজ বৃহস্পতিবার সকালে খনি ফটক থেকে আন্দোলনত শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা দুপুর থেকে মধ্যপাড়া বাজারসংলগ্ন মাঠে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ

শ্রমিকদের দাবি, মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ টন পাথর উত্তোলনের। কিন্তু তাঁরা ১ লাখ ৩৪ হাজার টন উত্তোলন করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি হাজার টনে ১০০ টাকা হারে ‘প্রোডাকশন প্রফিট বোনাস’ পাওয়ার কথা থাকলেও একজন শ্রমিক পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪ টাকা। প্রতিবাদ করায় চারজন শ্রমিক—শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ওমর আলী ও হাসান আলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আন্দোলনরত শ্রমিক সোলাইমান ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন করেছি, অথচ বোনাস কম দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

জিটিসির বক্তব্য

জিটিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু শ্রমিক অন্যদের কাজে বাধা দিচ্ছেন, ভূগর্ভে অবৈধভাবে ধর্মঘট পালন করছেন। এতে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩(১) ধারা অনুযায়ী, পরিস্থিতি সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময় শ্রমিক-কর্মচারীরা কোনো বেতন-ভাতা বা সুবিধা পাবেন না। তবে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ও দাপ্তরিক দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নির্ধারিত সময়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকেরা পেট্রোবাংলার নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করেন। খনি উৎপাদন কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকলেও বিক্রিসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু রয়েছে।

খনির প্রেক্ষাপট

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে প্রতিদিন তিন শিফটে ৮০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে অতিরিক্ত পাথর উৎপাদনের পর ‘প্রোডাকশন প্রফিট বোনাস’ কম দেওয়াকে কেন্দ্র করেই মূলত শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। খনিতে প্রবেশের অনুমতিও মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুরাদনগরে বাড়ি ঘেরাও করে মা-ছেলেসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীরা সব ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত: পেন্টাগন

চাচাকে বিয়ে করতে না পেরে ৪৫ দিনের মাথায় স্বামীকে খুন করলেন নববধূ

ফরিদগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত