Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ইউএনও, অফিস করছেন বাসা থেকে

দিনাজপুর প্রতিনিধি
নিজ কার্যালয়ে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফাইল ছবি
নিজ কার্যালয়ে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা–কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা খাতুন। কার্যালয় ছেড়ে বাসায় দাপ্তরিক কাজ করছেন তিনি। গত বুধবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রশাসনের সহায়তায় তিনি কার্যালয় ত্যাগ করেন।

তবে ইউএনও ফাতেমা খাতুন জাতীয় নাগরিক কমিটির পার্বতীপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়কের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

অবশ্য নাগরিক কমিটির পার্বতীপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক এই অভিযোগ নাকচ করেছেন।

এর আগে গত বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ইউএনও ফাতেমা খাতুনের অপসারণের দাবিতে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়।

আন্দোলনকারী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মানববন্ধন শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাঁরা ইউএনওকে আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেন। তাঁকে কার্যালয় ত্যাগ করার জন্য চাপ দেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কর্মকর্তা–কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় কার্যালয় ছাড়েন ফাতেমা খাতুন। ঘটনার পরপরই তাঁর কার্যালয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

আন্দোলনকারী নেতা–কর্মীদের দাবি, ইউএনও ফাতেমা খাতুন দীর্ঘদিন ধরে পার্বতীপুরে স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব কায়েম করেছেন। নানা অনিয়মের অভিযোগে দুই বার বদলির আদেশ হলেও অজ্ঞাত কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়। তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা আছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির পার্বতীপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা রবি–সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। এর মধ্যে ইউএনওকে অপসারণ না করা হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দেব।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ আজ শুক্রবার দুপুরে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। আমি সহযোগিতা না করায় এবং বিভিন্ন লোকজন যারা আমার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সুবিধা নিতে ব্যর্থ, তারাই মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার তিনি সরকারি বাংলোতে অবস্থান অফিস করেছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

নিজ কার্যালয়ে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফাইল ছবি
নিজ কার্যালয়ে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফাইল ছবি

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পার্বতীপুরে এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। তাই চাঁদা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ ইউএনওর দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য থাকার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যেগুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শুধু তা–ই নয়, পতিত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য এখনো বহাল। রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কবির উদ্দিনের সঙ্গে এখনো সখ্য রয়ে গেছে। এক নম্বর বিলাইচন্ডি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের খালাতো ভাই। তাঁকে বর্তমানে টিসিবির ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে। ১২ তারিখে বালিকা বিদ্যাপীঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে তিনি সারা দিন প্রোগ্রাম করেছেন।’

এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত