Ajker Patrika

শিক্ষার্থীরা আসে ৯টায়, শিক্ষকেরা আসেন সাড়ে ১০টায়

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ১৮: ২২
শিক্ষার্থীরা আসে ৯টায়, শিক্ষকেরা আসেন সাড়ে ১০টায়

সকাল ১০টা ২০ মিনিট। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। বন্ধ ফটকের হুকে ব্যাগ ঝুলিয়ে মাঠে খেলছে একদল শিক্ষার্থী। তখনো পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। কারণ, পতাকা তোলার মতো কেউ তখনো বিদ্যালয়ে আসেনি। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয় খোলার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টায়ও খোলা হয়নি। 

আজ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বৈদ্যনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। 

অভিযোগ উঠেছে, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। পাঠদানে কোনো মনোযোগ নেই। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। ঠিকমতো পাঠদান না করায় ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে অন্য বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করাচ্ছেন। 

বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। শিক্ষকেরা কখন বিদ্যালয়ে আসে জানতে চাইলে একজন বলে, ‘হামরা স্কুলত আসি সকাল ৯টায়। স্যারেরা আইসে ১০টায়। এখন মাঠোত খেলা খেলাওছি। স্যারেরা আসলে তালা খুলি ক্লাস করব।’ 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ১০টা ২৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক রুমি পারভিন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক খুলে শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করান। দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘বাড়িতে একটু কাজ ছিল। তাই আজ আসতে দেরি হয়েছে।’ অন্য শিক্ষকেরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা আসতেছেন। 

রুমি পারভিনের সঙ্গে কথা বলার সময় ১০টা ৩৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন আরেক সহকারী শিক্ষক আবু জাফর। দেরিতে আসার কারণ হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন বলে জানান। সেখানে তিনি কোনো দায়িত্বে আছেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘ভুল বলেছি। আসলে আমি রংপুরে ছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়েছে।’ 

৯টায় বিদ্যালয়ে এসে খেলাধুরা করে শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টা দেড়েক পর শিক্ষক এসে মূল ফটক খুলে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকাবিদ্যালয় মাঠে কথা হয় বৈদ্যনাথপুর গ্রামের কৃষক নুরনবীর সঙ্গে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্কুলত ছাওয়ারা আইসে ৯টার সময় আর স্যারেরা আইসে ১০টা, সাড়ে ১০টায়। অ্যাটে লেখাপড়া নাই জন্যে মোর ছাওয়াক তারাগঞ্জের স্কুলত ভর্তি করি দিছুন।’ 

বৈদ্যনাথপুর গ্রামের জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, এই স্কুলত লেখাপড়া নাই। সারা দিন ছাওয়াগুলা মাঠোত খেলা খেলায়। মাস্টারেরা কখন আইসে, কখন যায় তাক আল্লায় জানে। তোমরা স্কুলটাক বাঁচান। ছাওয়াগুলা যেন ভালো করি লেখাপড়া করির পায়।’ 

বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতির কারণ জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২-এর উদ্বোধন ও খেলার মাঠের দায়িত্বে আছি।’ সকাল ৯টায় বিদ্যালয় খোলার কথা, এখনো খোলেনি কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বিষয়টি দেখতেছি।’ এই বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। 

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ নিয়ে এখন ব্যস্ত আছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে বলেছি আজও বলব সঠিক সময়ে পাঠদান করানোর জন্য।’ এরপরও যাঁরা বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে খুলবেন না তাঁদের তালিকা সাংবাদিকের কাছে চান এই শিক্ষা কর্মকর্তা। 

উল্লেখ্য, বৈদ্যনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত