Ajker Patrika

বাবা বলতেন, ‘ও আমার মেয়ে এবং ছেলে দুটোই’

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ০৯
Thumbnail image

‘আমি অনেক কষ্টে অনুশীলন করতাম। আমার কাছে যাতায়াতের ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। অনেকে আমার মা-বাবাকে বলতেন, এটা কি তোমার ছেলে, নাকি মেয়ে? আমার বাবা বলতেন, ও আমার মেয়ে এবং ছেলে দুটোই। এভাবেই নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দেশের হয়ে খেলেছি।’ কথাগুলো সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (অনূর্ধ্ব-১৬) গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমের।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অসামান্য অবদান রাখায় পঞ্চগড়ের ছয়জন ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেয় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কথা তুলে ধরে ইয়ারজান বেগম। গতকাল  দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা পাওয়া ক্রীড়াবিদদের মধ্যে রয়েছে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (অনূর্ধ্ব-১৯) খেলোয়াড় নুসরাত জাহান মিতু, তৃষ্ণা রানী এবং সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (অনূর্ধ্ব-১৬) খেলোয়াড় ইয়ারজান বেগম, শিউলী রাণী, বৃষ্টি রায় ও আলপি বেগম। এ ছাড়া টুকু ফুটবল একাডেমির কোচ ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু তাহের (টুকু রেহমান নামে পরিচিত) ও বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের হাতে ফুলের তোড়া, ক্রেস্ট ও ঈদ উপহার তুলে দেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

জানা গেছে, নুসরাত জাহান মিতু, তৃষ্ণা রানী, শিউলী রাণী, বৃষ্টি রায় ও আলপি বেগমের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। এই পাঁচজন কৃতী খেলোয়াড় বোদা ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়। আর ইয়ারজান বেগমের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলা হারিভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। সে টুকু ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সাইদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সীমা শারমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়খুল ইসলাম, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিউলী রাণী বলে, ‘আমরা যখন বোদা ফুটবল একাডেমিতে প্র্যাকটিস করতে আসতাম, তখন অনেকে টিটকারি করে বলত, এরা ছোট ছোট পোশাক পরে, পুরুষের মতো চুল কাটে। এদের কাজ তো বিয়ে করবে, সংসার করবে, রান্না করবে। তখন আমার মন খারাপ হতো। তবে মা আমাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আমরা পারিবারিকভাবে খুবই অসচ্ছল। কষ্ট করে আজ জাতীয় দলে খেলছি, এটিই সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

জেলা প্রশাসক জহরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ছয়জন নারী চ্যাম্পিয়নশিপের খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমরা ইয়ারজান বেগমের পারিবারিক কথা চিন্তা করে একটি আধাপাকা বাড়ি করে দিচ্ছি। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে কারও পারিবারিক সমস্যা থাকলে সে বিষয়েও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দেশের মাটিতে ১-১ (পেনাল্টি শুটআউটে ১১-১১) গোলে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল এবং ১০ মার্চ নেপালের মাটিতে ভারতকে ১-১ (৩-২) গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত