Ajker Patrika

শিশুদের মধ্যে ছড়িয়েছে জলবসন্ত রোগ

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
শিশুদের মধ্যে ছড়িয়েছে জলবসন্ত রোগ

বগুড়ার শাজাহানপুরে শিশুদের মধ্যে জলবসন্ত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর বয়স দেড় বছর থেকে ১০ বছর। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ চিকিৎসায়ই শিশুরা এ রোগ থেকে সেরে উঠবে।

বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন ধরে শিশুদের জলবসন্ত বা চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে খুব একটা নিচ্ছেন না অভিভাবকেরা। আক্রান্ত শিশুরা এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে।

ছয় বছর বয়সী এক শিশুর বাবা উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে আমার ছেলের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। শরীরের কোথাও কোথাও হালকা লালচে মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। পরদিন শরীরে সেগুলো স্পষ্ট হয় এবং ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তার মুখসহ পুরো শরীর ভরে যায়। প্রতিটি গোটার মুখে পানির মতো। গর্ভাবস্থায় মা এবং পরে শিশুকে নিয়ম মেনে সময়মতো প্রতিটি টিকা দিয়েছি। তবু এই রোগ হলো।’

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘স্থানীয় ফার্মেসিতে সমস্যার কথা শুনে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, প্যারাসিটামল এবং সিটিরিজিন জাতীয় ওষুধ দেয়। আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাইনি। আমার বাড়িতে ৮ এবং ১০ বছরের দুই ভাতিজিরও একই অবস্থা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই সবাই সুস্থ হয়ে যাবে।’

উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের চুপিনগর ননীপাড়া গ্রামের গৃহিণী রেশমা বেগম বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রায় সব শিশুর বসন্ত রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত শিশুরা ভালো হচ্ছে আর সুস্থ শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এই রোগ নিয়ে কেউ খুব বেশি চিন্তিত না।’

গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলামের দেড় বছর বয়সী ছেলে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষক মিলনের আট বছর বয়সী মেয়ে আক্রান্ত হয়েছে। মিলন বলেন, আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ শিশুদের সঙ্গেও মিশছে।

উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রামের গৃহিণী নাইস বেগম বলেন, ‘এই এলাকায় ১০ বছর পর্যন্ত অনেক শিশু আক্রান্ত হয়েছে। আমার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাদের বাইরে যেতে দিচ্ছি না।’

একাধিক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, সরকারিভাবে বিনা মূল্যে হাম রুবেলা, বিসিজি, বিপিটি, আইপিজিসহ ১০ ধরনের টিকা দেওয়া হয়। তাতে দেশ থেকে গুটিবসন্ত রোগ প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে। তাই এই রোগের জন্য টিকা এখন আর নেই। তবে এখন যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিটি শিশুর টিকা নিশ্চিত করা হচ্ছে। টিকা থেকে কোনো শিশু বাদ পড়ার সুযোগ নেই।

শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. মোতারব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চোখ, নাক ও কানের পাশে ছোট ফোঁড়ার মতো হলে এবং ভেতরে পুঁজের মতো কিছু থাকলে সাধারণত গুটি বসন্ত হয়। এই রোগ দেশে প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে।

মোতারব হোসেন আরও বলেন, আর যেসব গোটায় পানির মতো হয়, সেটাকে চিকেন পক্স বা জলবসন্ত বলে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় এই রোগ কিছুটা দেখা দিয়েছে। এ রোগ হলে প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-হিস্টামিন এবং ফ্লুক্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

এ নিয়ে খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘শিগগিরই আমরা লোক পাঠিয়ে আক্রান্ত শিশুদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠাব। ল্যাবের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত